বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আমরা আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পাদন করে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।
আজ শনিবার ২৩/১১/২০২৪ তারিখ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মানিকগঞ্জ জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত স্থানীয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে (বিজয় মেলা মাঠ) জেলা জামায়াতের আমীর হাফেজ মাওলানা মোঃ কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মোঃ নূরুল ইসলামের সঞ্চালনায় এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা অঞ্চল উত্তর এর পরিচালক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ এবং অঞ্চল টিম সদস্য ও সাবেক মানিকগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসাইন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১৭ বছর ধরে চরম জুলুম-নির্যাতন, খুন-গুম, সন্ত্রাস-হত্যা, লুটপাট, গণতন্ত্র হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছে। কিন্তু তারা পারেনি। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে তারা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। গত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারে নাই। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ তাদের দোসররা মিলে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। ফ্যাসিবাদের মাস্টার মাইন্ড স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নির্দেশে এদেশের ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। তার নির্দেশে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে নিরীহ শিশু-নারীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যা পৃথিবীতে বিরল। নাৎসী বাহিনীও যা করেনি শেখ হাসিনা তাই করেছে। ৫ই আগস্টেও এই ফ্যাসিস্টের নির্দেশে নির্দয়ভাবে আশুলিয়া, সাভার এলাকায় বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দিয়েছে।
শেখ মুজিব যেমন মাত্র ৪টি পত্রিকা রেখে সকল গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিল, শেখ হাসিনাও দেশে সিন্ডিকেট করে গণতন্ত্র হত্যা করে পরিবারতন্ত্র ও স্বৈরাতন্ত্র চালু করেছিল। শেখ মুজিব গণতন্ত্রের সিঁড়ি বেয়ে ক্ষমতায় গিয়ে সিঁড়ি ফেলে দিয়েছিলো। পরে কিন্তু আর সিঁড়ি না পেয়ে ধপাস করে পড়ে গিয়েছিলো। শেখ হাসিনা পালাবার মাত্র ৪ দিন পূর্বে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে পরে তারা নিজেরাই নিষিদ্ধ হয়েছে। যে দলকে হাসিনা নিষিদ্ধ করেছিলো সেই দলের আমীরকেই সম্মানের সাথে আমন্ত্রণ জানালো দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর প্রধান ও প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা পালিয়ে যেখানে যাবার কথা ঠিক সেখানেই গিয়েছে। তবে তিনি থেমে নেই। একের পর এক যড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার কান্ড, গার্মেন্ট সেক্টরে অশান্তি, বিদ্যুৎ সেক্টরে যড়যন্ত্র, পুলিশ-জনপ্রশাসন সহ সর্বত্র যড়ষন্ত্রে চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশ প্রেমিক ছাত্র-জনতা, সেনাবাহিনী কোন যড়ষন্ত্রকেই সফল হতে দেয়নি। দেশবাসী সজাগ আছে, আগামীতেও কোন যড়ষন্ত্রই সফল হতে দিবে না ইনশাল্লাহ্। বিগত জালেম সরকার জামায়াত-শিবির, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর অমানুষিক জুলুম নির্যাতন করেছে, হত্যা-গুম করেছে। এ সময় ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য যারা আন্দোলন করেছে তাদের এক সাথে থাকতে হবে। সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগের কবর রচনা হবে, ইনশাআল্লাহ।
আমাদের অনেক সাংবাদিক ভাইসহ অনেকেই প্রশ্ন করেন, আওয়ামীলীগকে কি নিষিদ্ধ করা দরকার? আমি বলি, এটা এ দেশের জনগণের ব্যাপার। যারা দেশের মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে, লাশ পুড়িয়েছে, দেশের ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লুট করে পাচার করেছে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে যারা হেফাজত করতে পারেনি, যারা ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোরব লাশের উপর নৃত্য করেছে, যারা বিডিআর হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, যারা ২০২৪ শে আগস্ট বিপ্লবের সময় প্রায় ২০০০ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে, যারা গণতন্ত্রের কথা বলে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে তাদের কী জনগণ চায়? তারা কী এ দেশে রাজনীতি করার যোগ্যতা রাখে? জনগণ এই হত্যাকারীদের বিচার চায়। এ বাংলাদেশের মাটিতেই তাদের বিচার হতে হবে। ওনারা কী আবার নির্বাচনে আসবেন। তাদের আশা আর পূরণ হবে না।
তিনি আরো বলেন, বিগত ১৫ বছরে বিসিএস সহ সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি করে আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের বিভিন্ন সেক্টরে চাকুরি দেয়া হয়েছে। আমরা সচিবালয়ে গেলে এখনও আওয়ামী দুর্গন্ধ পাই। দেশের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানেই ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে। এদের রেখে যদি কোন নির্বাচন দেয়া হয় তা তো আগের মতই কারচুপির নির্বাচন হবে এবং মনে রাখতে হবে আবার ফ্যাসিবাদ ও তাদের মাস্টার মাইন্ড ফিরে আসার সুযোগ পাবে। তাই সকল ক্ষেত্রেই সংস্কার করে যত দ্রæত সম্ভব একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। সংস্কার না করে যেমন নির্বাচন দেয়া যাবে না, আবার খুব বেশি বিলম্ব করাও যাবে না। কারণ বিলম্ব করলে ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসার পাঁয়তারা করবে। সম্ভব হলে আগামী ডিসেম্বরের পরেই নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। তবে বেশি তাড়াহুড়ো করে কোন মতে একটি নির্বাচন দিলে দেশের সকল অর্জন নষ্ট হয়ে যাবে। অবশ্যই সংস্কার করে যথাসম্ভব দ্রæত সময়ের মধ্যেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বের সম্মানিত ব্যক্তি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসও জানেন দেশবাসী কী চায়। আমরা সবাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাবো। যাতে তারা সকল খাতে সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিতে পারেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, মানুষ বলে ৫ই আাগষ্টের পর হতে কেন জোয়ারের পানির মত মানুষ জামায়াতের সাথে যোগ দিচ্ছে। দেখুন আমরা বিগত প্রায় দেড় যুগে কথা বলতে পারি নাই। আমরা ইসলামের সুমহান আদর্শকে মানুষের মাঝে তুলে ধরতে পারি নাই। এখন মানুষ ইসলামের সৌন্দর্য দেখে ইসলামী আন্দোলনের ছায়াতলে আসছে। এটা জামায়াতে ইসলামীর কোন কৃতিত্ব নয় বরং এটা মহান আল্লাহর রহমত। এটা ইসলামের কৃতিত্ব। শহীদ মীর কাসেম আলী, শহীদ রফিক, শহীদ সাদের রক্তের এই মানিকগঞ্জেও ইসলামের বিজয় হবে ইনশাল্লাহ।
যে ছাত্র-জনতা মা-বাবাকে, স্ত্রী-সন্তানকে, আপন জনকে কাঁদিয়ে অকাতরে দেশের জন্যে জীবন দিয়েছেন তাদের রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। একটি বৈষম্যহীন আদর্শ রাষ্ট্র কায়েম করেই তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। আসুন আমরা একটি তাকওয়া ভিত্তিক আর্দশ রাষ্ট্র কায়েমের জন্যে এক সাথে কাজ করি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের জন্যে আমাদের নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা সবাইকে নিয়েই সুন্দর একটি বাাংলাদেশ গড়বো।
সম্মেলনে জেলার হাজার হাজার নেতাকর্মী সহ সাধারণ মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। মানিকগঞ্জের ইতিহাসে জামায়াতে ইসলামীর এতো বড় কোন সমাবেশ কখনও অনুষ্ঠিত হয়নি।