বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ৫ আগস্টের পরপরই প্রথমত দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম, মন্দির বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বিদের উপাসনালয়ে পাহারা দেয়ার জন্য। শুধু মন্দির নয়, কোনো ব্যক্তিও যদি নিরাপত্তাহীন মনে করেন, তার পাশেও দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি। আমরা কোনো হিংস্রতা সৃষ্টি করতে দিবো না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো সংকট তৈরি হলে দুস্কৃতিকারীরা অপকর্ম করে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। সংকটকালে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা কাপুরষতা মাত্র। তবে যারা অপরাধের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, কারো বাহবা নেয়া বা রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য আমরা আপনাদের পাশে দাড়াই নি। মানুষ হিসেবে, নাগরিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে পাশে দাড়িয়েছি। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে, আমাদের কেউ কিছু করলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। এ ধরনের ঘটনা দূরতম প্রশ্রয় দিবো না। তিনি বলেন, এই দেশ আমাদের সকলের। আমরা সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু মানি না। বাংলাদেশে যারা জন্মগ্রহন করেছে তারা সবাই দেশের গর্বিত নাগরিক। নাগরিক সুবিধা পেতে ধর্ম কোন বাধা হতে পারে না। কারো ধর্ম কারো উপর চাপিয়ে দেয়া যায় না। তিনি উল্লেখ করেন, যে যেই দলই করুক না কেন, সবাই নাগরিক অধিকার ভোগ করবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন। পরিদর্শন শেষে তিনি মন্দির কর্তৃপক্ষ, পুজা কমিটি ও পুরোহিতদের মতবিনিময় করেন। এ সময় জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ফুল দিয়ে বরণ করেন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
মতবিনিময় সভায় জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসেন, ড. আবদুল মান্নান প্রমুখ। কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী বাসুদেব ধর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কমার দেব, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, সাধারণ সম্পাদক ডা. তাপস পাল, মহানগর পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সিআর মজুমদার, মহানগর পুজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুভাশিস বিশ্বাস, ঢাকেশ্বরী মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডিএল চ্যাটার্জি, বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র নাথ বসু, শিক্ষক সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কিশোর কুমার বসু রায় চৌধুরী পিন্টু, গিরিদারী সাহা, সুভাশি বিশ্বাস প্রমুখ।
ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, এই দেশ আমাদের সকলের। আমরা সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু মানি না। বাংলাদেশে যারা জন্মগ্রহন করেছে তারা সবাই দেশের গর্বিত নাগরিক। নাগরিক সুবিধা পেতে ধর্ম কোন বাধা হতে পারে না। কারো ধর্ম কারো উপর চাপিয়ে দেয়া যায় না। তিনি উল্লেখ করেন, যে যেই দলই করুক না কেন সবাই নাগরিক অধিকার ভোগ করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন সংকট তৈরি হলে দুস্কৃতিকারীরা অপকর্ম করে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়।
আমীরে জামায়াত বলেন, আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান করি। কে কোন দল করলো সেটা বিষয় না, সবাই মানুষ। ২০২২ সালে পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবির ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু হতাহতের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ে আমরা সেখানে যাই। তবে সেটা আমরা দরদ দেখাতে নয়, নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে তাদের পাশে দাড়িয়েছিলাম। ভারতে বাবরী মসজিদ যখন ভাঙ্গা হয়, সে সময় এদেশে জামায়াতে ইসলামী হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিয়েছিল।
ডা. শফিক বলেন, ৫ আগষ্টের পরপরই প্রথমত দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম, মন্দির বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বিদের উপাসনালয়ে পাহারা দেয়ার জন্য। শুধু মন্দির নয়, কোন ব্যক্তিও যদি নিরাপত্তাহীন মনে করেন, তার পাশেও দাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি। আমরা কোন হিংস্রতা সৃস্টি করতে দিবো না। তিনি বলেন, এই মুহুর্তে পুলিশ প্রশাসন মাঠে নেই, ট্রাফিক নেই। আমাদের সন্তানরা ট্রাফিকিং এর দায়িত্ব পালন করছে। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহনের পূর্ব পর্যন্ত দেশের শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। আমরা জামায়াতের নেতাকর্মীদের প্রশাসনের পাশে দাড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছি। আমরা খুব শীঘ্রই ইমার্জেন্সি হেল্প লাইন চালু করবো। এই নাম্বার সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, সংকটকালে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা কাপুরষতা মাত্র। তবে যারা অপরাধের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, কারো বাহবা নেয়া বা রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য আমরা আপনাদের পাশে দাড়াই নি। মানুষ হিসেবে, নাগরিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে পাশে দাড়িয়েছি। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে, আমাদের কেউ কিছু করলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। এ ধরনের ঘটনা দূরতম প্রশ্রয় দিবো না।
তিনি বলেন, আমরা যেন সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে পারি সেই চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন রাখডাক না রেখেই কথা বলতে হবে।
শ্রী বাসুদেব ধর বলেন, বিজয়ের মুহুর্তে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রাজনীতিবিদদের পেয়েছি। জাতীয় দুযোর্গ মুহুর্তে জামায়াতে ইসলামী আমাদের মন্দির রক্ষায় ভূমিকা রাখছেন এজন্য আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।
ডিএল চ্যাটার্জি বলেন, আজকের ঐতিহাসিক মুর্হুত। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ আমাদের এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সংকটের মুখোমুখি। এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। এই মুহুর্তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
জয়ন্ত কমার দেব বলেন, বারবার সরকার পরিবর্তন হলে আমরা আক্রমনের শিকার হই। আমরা এই দেশের নাগরিক। তাহলে কেন আমরা অত্যাচারিত হবো? তিনি জামায়াত নেতৃবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা বিপদে আপদে সুখে দুখে পাশাপাশি থাকবো।
এরপর আমীরে জামায়াত মিরহাজিরবাগে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, ছাত্রজনতার আন্দোলনে কতজন শহীদ হয়েছে আমরা এখনও জানি না। তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে। অনেকের লাশও পাওয়া যায়নি। জালিম শাসক তাদের লাশটাও ফেরত দেয়ার নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য তারা কতটা বর্বরতার আশ্রয় নিয়েছিল, তা কল্পনাও করা যায় না। তিনি শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, তাদের শাহাদাতের পথ ধরেই বিজয় এসেছে। আর যেন কোন জালিম শাসক আমাদের মাঝে ফিরে না আসে, আমরা সেই প্রত্যাশা করছি।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, শহীদ সাইফুল ইসলামের পিতা আবদুল মতিন, শ্বশুড় আনসার আলী, শহীদ রেজাউল করিমের পিতা আলআমিন প্রমুখ।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলেও এই ৫২ বছরে নানাভাবে আমরা পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা এবার পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করেছি। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করলাম।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সবাই শহীদ হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা যাদের কবুল করেন, তারাই শহীদ হন। তিনি শহীদ পরিবারকে ধৈর্যধারণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাহলে কেয়ামতের দিন সবাই শহীদের পরিবার হিসেবে উপস্থিত হওয়ার গৌরব অর্জন করবেন।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে ৫ আগষ্ট আমরা বিজয় অর্জন করেছি। নতুন করে স্বাধীনতা অর্জন করলাম। আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন। তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই অর্জন ধরে রাখতে হবে।
পরে জামায়াত আমীর কদমতলীর নূরপুরে শহীদ মেহেদী হাসানের বাসায় যান। এ সময় শহীদ ইমরানের পরিবার, শহীদ সোহেলের ছেলে ৩ বছর ৭ মাস বয়সী বিল্লাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন। তাদের খোজখবর নেন। তিনি তাদের সান্তনা দেন।
পরে তিনি পাটেরবাগ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জোহরের নামাযা আদায় করেন। নামাজ শেষে তিনি মুসুল্লীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
সকালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোটা আন্দোলনের সময় আহতদের দেখতে যান। তিনি এ সময় আন্দোলন দমনে আওয়ামী সরকারের নিমর্মতা, আহত মানুষের যন্ত্রণা প্রত্যক্ষ করেন। তাদের খোজ-খবর নেন। তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলেন। চিকিৎসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আহতরা বলেন, তাদের যন্ত্রনা সত্ত্বেও নতুন স্বাধীনতায় তারা আন্দোলিত।