৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঢাকার মগবাজারস্থ আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সংগঠনের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার-এর পরিচালনায় নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের ও মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান শহীদ নেতৃবৃন্দের স্মৃতিচারণ করে বলেন, কেবল ইসলামী আন্দোলন করার কারণে তাদের উপর জুলুম করা হয়েছে। আমাদের মধ্য থেকে এগারো জন নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। পাঁচজনকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সাজানো মামলায় মৃত্যুদ- দিয়ে ফাঁসির মঞ্চে হত্যা করা হয়েছে। পাঁচজন ইন্তেকাল করেছেন জেলের মধ্যে। একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করে সুস্থ করার পরিবর্তে তার লাশ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার জানাজায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলা চালিয়েছে। যাদেরকে সরকার অবৈধভাবে ফাঁসি দিয়েছে তাদের একজনের জানাজাও শান্তিমত করতে দেয়নি। শহীদ নেতৃবৃন্দের বাসা-বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এই ভীতিকর পরিস্থিতে অনেকে নিজের বাড়িতে অবস্থান করতে পারেনি। শহীদ পরিবারের কোনো কোনো সদস্যকে গুম করা হয়েছে। গুমের শিকার দুইজন মুক্ত হয়ে দেশবাসীকে তাদের ওপর চালানো অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। আয়নাঘর নামক এক ধরনের গ্যাস চেম্বারে তাদেরকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিলে, যেখানে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। আমাদের মা-বোনদেরকেও বেইজ্জত করতে কুষ্ঠাবোধ করেনি।
আমীরে জামায়াত আরও বলেন, হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে জামায়াতসহ বিরোধীদলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে কারাগারে আটকিয়ে রেখে হয়রানি করা হয়েছে। অসংখ্য মানুষকে গুম করা হয়েছে, যার প্রকৃত সংখ্যা জাতির কাছে অজানা। ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে আমাদের কর্মীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যেকটা রাত প্রত্যেকটা দিন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নিমজ্জিত ছিল। আমাদের কেন্দ্রীয় অফিসসহ মহানগরী/জেলা এমনকি তৃণমূলের সকল অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। অফিসের সবকিছু লুণ্ঠন করা হয়েছে। কোনো জায়গায় আমাদের সামান্য স্পেস দেয়া হয়নি। আমাদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হিটলারের গ্যাস চেম্বারের মতো আমাদের দেশে আয়নাঘর তৈরী করা হয়েছে। শুধু জামায়াতে ইসলামী নয় বিরোধীদল বিএনপি, উলামায়ে কেরামসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের উপর একই ধরনের তা-ব চালানো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর উপর ভিন্ন মাত্রায় তা-ব চালানো হয়েছে। হাজার হাজার আলেমকে যেনতেন অযুহাতে গ্রেফতার করে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছিল। বয়স্ক আলেমদেরকেও হাতে পায়ে বেড়ি পরিয়ে আদালতে তোলা হয়েছিল। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েই জালিমরা ক্ষ্যান্ত হয়নি বরং আলেমদেরকে মুখ না খুলতে হুমকি দেয়া হয়েছে। বিগত সরকারের দুঃশাসনের সাড়ে ১৫ বছর আমাদেরকে রাস্তায় নামতে দেয়া হয়নি। মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ করায় সরকারের অকথ্য জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদও আমরা করতে পারিনি। ফ্যাসিস্ট সরকার তিনটি অগ্রহণযোগ্য প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করেছে। গুম, খুন, হত্যা, মামলা-হামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন, লুণ্ঠন, দখলদারী, ধর্ষণসহ নানা অপরাধ যখন চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করে, তখন জমিনে আল্লাহ তায়ালার ফয়সালা নেমে আসে।
গত জুলাই মাসে ছাত্ররা তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রী উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে ছাত্র আন্দোলন দমনের অপচেষ্টা করে। মা তার দেড় মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। শিশু থেকে শুরু করে নব্বই বছরের বয়স্ক মানুষও ছাত্রদের আন্দোলনে শামিল হন। হাজারো ছাত্র-জনতার প্রাণ বিসর্জনের মাধ্যমে দেশের ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী আমরা তাদেরকে স্মরণ করছি, যাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা শান্তি-স্বস্তির পরিবেশে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এই অধিবেশন করতে পেরেছি। তারা জাতিকে স্বস্তির নিঃশ্বাস এনে দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে দুই জায়গায় মর্যাদা দান করুন। যারা আন্দোলনে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন আল্লাহ তাদেরকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন। আল্লাহ তায়ালা তাদের পরিবারগুলোকে এই শোক বহন করার তৌফিক দান করুন, তাদেরকে উত্তম সবর করার তৌফিক দান করুন। যারা আহত হয়েছেন তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা সুস্থতার নিয়ামত দান করুন।
আমীরে জামায়াত আরও বলেন, বিগত সরকার ক্ষমতার লোভে জেদের বশবর্তী হয়ে সুস্পষ্ট গণহত্যা চালিয়েছে। সরকার শুধু স্থলভাগেই নয়, আকাশ থেকেও গুলি চালিয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যা করেছে। স্বাধীন দেশে পরিচালিত এই গণহত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাই খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দল হিসেবে সাড়ে ১৫ বছর পরে আমাদের সাথে বৈরী আচরণ করা হয়েছে। আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছে। শেষ মুহূর্তে সরকার দিশেহারা হয়ে আমাদের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে। আমরা বলেছি আমরা প্রতিশোধ নিব না- এর মানে হচ্ছে আমরা নিজের হাতে আইন তুলে নিব না। কিন্তু যিনি সুনির্দিষ্ট অপরাধ করেছেন- তার বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং তাকে শাস্তি পেতে হবে। গণহত্যার বিচার করতে হবে এবং গত সাড়ে ১৫ বছরে যেসব অপরাধ করা হয়েছে তার বিচার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি ক্ষতিগ্রস্ত যারাই মামলা করবেন, আইনের আশ্রয় নিবেন- কোনো মানুষের উপর যেন বেইনসাফি না হয় সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে যেন আসামী করা না হয়।
আমীরে জামায়াত বলেন, দেশটা আমাদের সবার। ছাত্রদের আন্দোলনে আপামর জনতা অংশ নিয়েছে। এ আন্দোলনের সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণি পেশার মানুষ শরিক হয়েছে। প্রবাসী ভাইয়েরাও দেশবাসীর সাথে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। আন্দোলন করতে গিয়ে তারা নিগৃহের শিকার হয়েছে। একটি দেশে ৫৭ জনকে গ্রেফতার করে আজীবন শাস্তি দেয়া হয়েছে। আমরা সরকারকে দাবি জানিয়েছিলাম তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছাড়িয়ে আনতে হবে। আমরা এ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই যে, তারা উদ্যোগ নিয়েছেন এবং ঐ দেশের সরকারকেও ধন্যবাদ জানাই তারা আন্দোলনকারীদের ক্ষমা করে মুক্তি দিয়েছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি তাদেরকে মর্যাদাপূর্ণভাবে পুনর্বাসন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের কিছু চতুর ধনী মানুষ জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে ব্যাংকগুলো ফোকলা করে দেশের বাইরে অর্থ নিয়ে গেছেন। এ অর্থ আমাদের সবার। এ অর্থ ১৮ কোটি মানুষের। এ অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে এবং লুণ্ঠনকারীরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক তাদেরকে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এরা জাতির দুশমন, এরা লুটেরা। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আজকে সময় এসেছে বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার। অন্যায়, অসত্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। জাতির এই কাঙ্খিত পরিবর্তনকে কেউ যাতে ব্যর্থ করে না দিতে পারে এজন্য সকলে মিলে আমরা পাহারাদারী করব। স্বাধীনতার পক্ষে আমাদেরকে আপসহীন অবস্থান নিতে হবে। আল্লাহ বাংলাদেশের উপর রহমত নাজিল করুন। একটি সভ্য ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনে আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে নিম্নোক্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়
১৩ বছর পর শহীদ নেতৃবৃন্দের পবিত্র স্মৃতি-বিজড়িত আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে মিলিত হতে পেরে মজলিসে শূরার এ অধিবেশনে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে লাখ কোটি শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ। এই ১৩ বছরের মধ্যে সরকারের জুলুম-নির্যাতনের ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাগারে ও ফাঁসির মাধ্যমে শাহাদাত বরণ করেছেন সাবেক আমীরে জামায়াত শহীদ প্রফেসর গোলাম আযম, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মাদ ইউসুফ, মাওলানা আবদুস সুবহান ও আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাবেক সদস্য শহীদ মীর কাসেম আলী। সাবেক নায়েবে আমীর অধ্যাপক নাজির আহমাদ ও সাতক্ষীরার জননন্দিত নেতা সাবেক এমপি মাওলানা আবদুল খালেক ম-ল জালেম সরকারের জুলুম-নির্যাতন ধারণ করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। মহান রাব্বুল আলামীন তাদের সকলের শাহাদাত কবুল করুন, আমীন। মিথ্যা মামলায় এখনও কারাগারে আটক আছেন সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম।
বিগত স্বৈরাচারের শাসনামলে জামায়াতে ইসলামীর হাজার হাজার নেতাকর্মী, দেশের আলেম-ওলামা, ইসলামী চিন্তাবিদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ দেশের সর্বস্তরের জনতা জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। তাদের সকলের ত্যাগ এবং কুরবানির বিনিময়ে বাংলাদেশ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা তাই কামনা করে।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা অভিমত ব্যক্ত করছে যে, এদেশের ছাত্রসমাজ নবউদ্যমে ১ জুলাই থেকে যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সূচনা করেছিলো তা ছিল শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল। ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী, ১৫ জুলাই সেতুমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর উস্কানিমূলক বক্তব্যে রংপুরে আবু সাঈদসহ সারাদেশে ৬ জন ছাত্র নিহত হয়। আবু সাঈদের নিহত হওয়ার ঘটনা দেশের ছাত্র-জনতাকে প্রতিবাদ মুখর করে তোলে।
সরকার ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ১৯ জুলাই রাতে কারফিউ জারি করে এবং দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের পর রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি বর্ষণ করে গণহত্যা চালায়। গুলি অগ্রাহ্য করে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, শিল্পী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ ও সর্বস্তরের জনগণ রাস্তায় নেমে আসে এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে।
৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে রুখে দেয়ার আহবান জানায়। ফলে এদিন সারাদেশে ব্যাপক হত্যাকা- সংঘটিত হয়। ৪ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কারফিউ জোরদার করার নির্দেশ দেয়।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা সকাল থেকে রাজধানীর রাজপথে নেমে আসে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তিন বাহিনী প্রধান ও পুলিশ প্রধানকে গণভবনে ডেকে নিয়ে আন্দোলন দমন করার জন্য বল প্রয়োগের নির্দেশ দেন। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান। দেশ স্বৈরশাসকের কবল থেকে মুক্তি লাভ করে। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ বিজয়ের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছে। এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন, তাদেরকে জাতীয় বীরের মর্যাদা দেয়ার জন্য মজলিসে শূরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে। মহান রাব্বল আলামীন তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন। যারা আহত হয়েছেন, চোখ, হাত ও পা হারিয়েছেন ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছে। সকল শহীদ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অভিমত হচ্ছে, আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করার নির্দেশ দিয়ে যে গণহত্যা চালানো হয়েছে তা বিশ্বের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো আন্দোলনে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা আন্তর্জাতিক তদন্তের মাধ্যমে গণহত্যাকারীদের চিহ্নিত করে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের ব্যবস্থা করে দেশ ও জাতিকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তি দেয়ার আহবান জানাচ্ছে।
বিগত সাড়ে ১৫ বছর যাবত স্বৈরাচারী সরকার জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। গণরোষে বিতাড়িত সরকার আলেম-ওলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। দেশেকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। দুর্নীতি, ব্যাংক লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি বিধ্বস্ত দেশে পরিণত করেছে। বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে। কারাগারে আটক মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবি করছে। ষড়যন্ত্রকারীরা যেন দেশে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে না পারে, সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকার এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণই রাষ্ট্র শাসন করবেন। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসহ সাংবিধানিক সকল প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।”