৯ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ৮:১০

সংবাদ সম্মেলন

ভারতের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে গত ২২ জুন ভারতের সঙ্গে ১০ দফা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও তিস্তায় ভারতীয় কারিগরি টিম পাঠানোসহ ১৩টি ঘোষণা প্রদানের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ৯ জুলাই মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর সুস্পষ্ট বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করে বক্তব্য রাখেন। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ-এর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, জনাব হামিদুর রহমান আযাদ ও মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মোঃ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

দেশবাসীর উদ্দেশে সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার-এর প্রদত্ত বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলোঃ-
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসুলিহিল কারীম।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ ও সংগ্রামী দেশবাসী,

আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২১ ও ২২ জুন ভারত সফর করেছেন। এ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বাংলাদেশের উপর দিয়ে রেল সংযোগ বৃদ্ধিসহ ১০ দফা সমঝোতা স্মারক সই করেছেন এবং তিস্তায় ভারতীয় কারিগরি টীম পাঠানোসহ ১৩ দফা ঘোষণা প্রদান করেছেন। এ ১০টি সমঝোতা স্মারকের মধ্যে ৭টি নতুন ও তিনটি পুরাতন। এগুলোর মধ্যে আছে রাজনীতি, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, সংযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, জ্বালানি ও শক্তি এবং আঞ্চলিক সাহায্য সহযোগিতা প্রদান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে নয়াদিল্লির হায়দারাবাদ হাউজে বৈঠককালে ১০ দফা সমঝোতা স্মারক সই ও ১৩ দফা ঘোষণা সম্পর্কে বিবৃতির মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ইতোপূর্বে আমরা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলাম। চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ও গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়েছে মূলত বাংলাদেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ভারতকে একতরফা সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এ চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ চুক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্যই করা হয়েছে। চুক্তি সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপনের লক্ষ্যেই আজকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
দেশের নির্যাতিত-নিপীড়িত, শোষিত-বঞ্চিত ১৭ কোটি মানুষ আশা করেছিল যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের উপর দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, সুরমা-কুশিয়ারাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির বাংলাদেশের প্রাপ্য ন্যায্য হিস্যাসহ বাংলাদেশ ও ভারতের সাথে বিরাজমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা, ট্রানজিট-করিডোরসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনা করে বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায় করার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভ‚মিকা পালন করে দেশে ফিরবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ আদায়ের জন্য বলিষ্ঠ ভ‚মিকা পালনের পরিবর্তে ভারতের নিকট নতজানু হয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ ভারতের কাছে বিকিয়ে দিয়ে এসেছেন। ভারতকে তিনি মনপ্রাণ উজাড় করে সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছেন। তিনি ভারতকে শুধু দিয়েই আসেন, কিছুই আনতে পারেন না। তার এ ধরনের ভূমিকায় বাংলাদেশের জনগণ বিক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। প্রধানমন্ত্রীর নতজানু ভ‚মিকা দেশের সচেতন জনগণকে হতাশ করেছে।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে, বাংলাদেশ ও ভারতের উপর দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদী তথা গঙ্গা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, সুরমা-কুশিয়ারা এগুলো সবই আন্তর্জাতিক নদী। এ সব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার বাংলাদেশের অধিকার আন্তর্জাতিক নদী আইন দ্বারা স্বীকৃত।

বাংলাদেশকে অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। ভারতের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার অধিকারও আছে। কিন্তু নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সরকার আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার যেমন সাহস পাচ্ছে না, তেমনি ভারতের সাথে দর কষাকষিতে বাংলাদেশ সরকার বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতেও পারছে না। এর কারণ হলো বাংলাদেশের বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে পাশ কাটিয়ে বর্তমান সরকার বিনা ভোটে প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত ক্ষমতায় টিকে আছে। সে কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের প্রকাশ্যে বহু বার স্বীকার করেছেন। বর্তমান সরকারের প্রতি দেশের জনগণের কোনো সমর্থন ও আস্থা নেই। তার বড় প্রমাণ বিগত ১৫ বছর যাবত ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা। বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার যেমন কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই, তেমনি আইনগত ভিত্তিও নেই। এ ধরনের একটি পরনির্ভরশীল সরকারের পক্ষে ভারতের নিকট থেকে বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায় করা সম্ভব নয়।

ভারতের সাথে বর্তমান সরকারের সই করা সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে “তিস্তা নদীর পানির সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশে যাবে ভারতীয় কারিগরি দল।” বাংলাদেশের তিস্তার পানি সংরক্ষণের জন্য ভারতীয় করিগরি দল পাঠানোর প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর। তিস্তার পানি সংরক্ষণ করার জন্য বাংলাদেশী পানি বিশেষজ্ঞরাই যথেষ্ট। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়ার জন্যই ভারত নানা ধরনের অশুভ প্রস্তাব দিচ্ছে। ভারতীয় ঐসব প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
ভারত গঙ্গা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশকে না দিয়ে বরং তারা ঐসব নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নিয়ে বাংলাদেশকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শুকিয়ে মারছে এবং বর্ষা মৌসুমে ডুবিয়ে মারছে। বর্তমানে বৃহত্তর সিলেট ও রংপুর অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বন্যায় উঠতি ফসল ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এভাবে প্রতিবছরই হাজার হাজার কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ ভারতের পানি আগ্রাসনে প্রতিবছরই অর্থনৈতিকভাবে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। ভারতের এ পানি আগ্রাসনের মোকাবেলা করার জন্য গঙ্গা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সকল অভিন্ন নদীগুলোর উপর ভারতের ভাটিতে ও বাংলাদেশের উজানে বাঁধ নির্মাণ এবং ভরাট হওয়া নদীগুলো খনন করার জন্য বড় ধরনের মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন যে, প্রধানমন্ত্রী তার ভারত সফরকালে ভারতকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে রাজশাহী পর্যন্ত রেল যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর দিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের মংলা সামুদ্রিক বন্দর, চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর ও চট্টগ্রামের মিরসরাইতে ইপিজেড নির্মাণের চুক্তিতে সই করা হয়েছে। দেশের জনগণ মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রীর এসব পদক্ষেপের ফলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে পড়েছে। সরকার বলছে যে, পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী পর্যন্ত রেল চলাচলের চুক্তি করা হয়েছে। আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ১৯৭৫ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী মাত্র ৪৫ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালুর অনুমতি নিয়েছিল। কিন্তু ভারতের সেই ৪৫ দিনের মেয়াদ আজও শেষ হয়নি। কাজেই রাজশাহী পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে রেল যোগাযোগ চালুর যে কথা বলছে সে ব্যাপারে দেশবাসী মনে করে যে, পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী পর্যন্ত রেল চালুর কথাটা একটি ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। হয়ত তাদের এ পরীক্ষামূলক রেল যোগাযোগের মেয়াদও কখনো শেষ হবে না। তাই বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ সরকারের ঐ সমঝোতা স্মারক মানতে রাজী নয়।

বাংলাদেশের উপর দিয়ে যে রেল চলবে তাতে কি জিনিস বহন করা হবে তা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি। সেটা যাত্রীবাহী না মালবাহী ট্রেন তা উল্লেখ করা হয়নি। ঐ ট্রেনে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও সামরিক সরঞ্জাম বহন করা হবে কিনা তাও পরিষ্কার করে বলা হয়নি। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত ভারতের ৭টি রাজ্যের ওপারে জনগণকে ধ্বংস করার জন্য, গণহত্যা চালানোর জন্য যদি বাংলাদেশের উপর দিয়ে সামরিক সরঞ্জামসহ ভারতীয় সামরিক বাহিনী ঐ ৭টি রাজ্যে সামরিক অভিযান চালায়, তা হবে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাতে ভারতীয় ট্রেনে ভারতের ৭টি রাজ্যের জনগণের হামলার শিকার হয়ে বাংলাদেশ রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই এ ধরনের বিপজ্জনক পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেছেন যে, ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর দিলে ক্ষতি কি? আমরা তার নিকট পাল্টা প্রশ্ন করতে চাই যে, ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর দিলে বাংলাদেশের লাভ কি? বাংলাদেশের কোনো লাভের কথাই তিনি প্রমাণ করতে পারবেন না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেগুলোর মধ্যকার ট্রানজিট ও করিডোরের কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ব্যাপারে ইউরোপের বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশের উদাহরণ মোটেই প্রযোজ্য নয়। কারণ ভারত ও বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীর মত কোনো নদী ইউরোপে নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশের একই মুদ্রা, একই ধর্ম, একই ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মুক্তবাজার অর্থনীতি। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ইউরোপের সকল দেশ একই ধরনের। ঐসব দেশে উন্নতমানের বহু দলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকার চালু আছে। ঐ সব দেশের অধিবাসীদের অন্য দেশের বর্ডার গার্ড পাখির মত গুলি করে মানুষ হত্যা করে না। কোনো দেশের বর্ডারে কাঁটা তারের বেড়াও নেই। অথচ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আলাদা আলাদা মুদ্রা চালু, দু’দেশের মানুষের ধর্ম, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ভাষা আলাদা। মুদ্রার মানের মধ্যে রয়েছে বিরাট ব্যবধান। দুই দেশের মধ্যে কাঁটা তারের বেড়া রয়েছে। ভারতীয় বিএসএফ বাংলাদেশী মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করছে। বাংলাদেশ সরকার তার প্রতিবাদ ও প্রতিকার করছে না। বাংলাদেশের বিজিবি কখনো ভারতীয়দের হত্যা করে না। বাংলাদেশে এখন একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে। ভারতেও নরেন্দ্র মোদির উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইসলাম বিদ্বেষী শাসন চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর দিয়ে তার সাথে ইউরোপী ইউনিয়নের তুলনা করতে গিয়ে মূলত বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানোর অপচেষ্টা চালিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীসভার সদস্যগণ ভারতকে করিডোর এবং ট্রানজিট দেয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন যে, ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর দিয়ে চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহার করতে দিলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের মত উন্নত দেশ হবে। কিন্তু দেশের মানুষ ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর ব্যবহার করতে দিয়ে বাংলাদেশের সামান্যতম কোনো উন্নতি হয়নি, বরং শ্রীলঙ্কার মত একটি দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে। সরকার ঋণ নিয়ে দেশ চালাচ্ছে। চারদিকে শুধু নেই আর নেই আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর ব্যবহার করতে দিয়ে বাংলাদেশ ভারতের নিকট থেকে প্রতি বছর কত টাকা শুল্ক ও মাশুল আদায় করছে বা আয় করছে, তা আজ পর্যন্ত সরকার জাতির সামনে প্রকাশ করেনি। ট্রানজিট ও করিডোর দিয়ে বাংলাদেশের কোনো লাভ হয়নি বরং ক্ষতিই হয়েছে।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমরা সবাই জানি যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে ভারতের নিকট থেকে উন্নতমানের সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য চুক্তি করেছে। আমরা সকলেই জানি যে, বাংলাদেশের তিন দিক দিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ড বাংলাদেশকে বেষ্টন করে আছে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের বিভিন্ন সমস্যা বিরাজমান। সুতরাং বাংলাদেশের উপর যদি কোনো দেশ থেকে আঘাত আসে, তাহলে তা ভারতের দিক থেকেই আসার আশঙ্কা রয়েছে। সেই ভারতের নিকট থেকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ও পুলিশের প্রশিক্ষণ গ্রহণ কী বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী না আনুকূল সে বিষয়টি অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণকে গভীরভাবে চিন্তা করে দেখতে হবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী, গ্রেট ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে উন্নত সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব ভারতীয়দের উপর অর্পণ করে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীকে ভারতের মুখাপেক্ষী ও অনুগত বাহিনীতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে দেশবাসী মনে করে। ভারতীয় প্রশিক্ষণের নাম করে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর মগজ ধোলাই করে তাদের ভারতের সেবাদাসে পরিণত করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এটা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের উপর মারাত্মক আঘাতেরই শামিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত ও রাশিয়া থেকে অস্ত্র ক্রয় করার কথাও বলেছেন। সরকারের এ ধরনের রহস্যজনক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের জনগণ শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন।

প্রিয় দেশবাসী
বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিয়ে যাদেরকে নির্বাচিত করবে তারাই রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকারী। বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এ সরকারের কোনো অধিকার নেই জনগণের ও দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে কোনো চুক্তি সম্পন্ন করার। বাংলাদেশের জনগণ এ অনির্বাচিত সরকার কর্তৃক জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল সমঝোতা স্মারক, ঘোষণা এবং চুক্তি প্রত্যাখ্যান করছে। বর্তমান অবৈধ সরকারেরে বেআইনী, অগণতান্ত্রিক ও দেশের স্বার্থবিরোধী এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমরা দেশেবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

আল্লাহ হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জিন্দাবাদ।

সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।”