২৪ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৭:২০

খুলনা অঞ্চলের জেলা ও মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্যদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিন। তথাকথিত বিচারের নামে প্রহসনের বিচার বন্ধ করুন

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

জুলুম-নির্যাতন করে ইসলামী আন্দোলন দমন করা যাবে না। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। প্রহসনের নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। আমাদেরকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফলপ্রসূ করার জন্য জনগণকে সাথে নিয়ে সকল ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ভ‚মিকা পালন করতে হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে ত্যাগ ও কুরবানির মানসিকতা নিয়ে ময়দানে টিকে থাকতে হবে। জান ও মালের সর্বোচ্চ কুরবানি শাহাদাতের তামান্না অন্তরে পোষণ করতে হবে। আমরা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষদেরকে সাথে নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠন করতে চাই। তিনি গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তথাকথিত বিচারের নামে প্রহসনের বিচার বন্ধ করার আহবান জানান। ন্যায়-ইনসাফের সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে আন্দেলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

২৪ আগস্ট বিকেলে খুলনা মহানগরীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী খুলনা অঞ্চল এর উদ্যোগে জেলা ও মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্যদের নিয়ে সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান উপরোক্ত কথা বলেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, বাগেরহাট জেলা আমীর মাওলানা রেজাউল করিম প্রমুখ।

আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ ৯৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। জামায়াত সব সময়ই শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নে অভ্যস্ত। জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। এ অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান জামায়াতসহ সকল রাজনৈতিক দলকে এ অধিকার দিয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, জামায়াতকে তার রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে না দিয়ে জামায়াতের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। বিগত ১৫ বছর যাবত জামায়াতকে নির্মূল করার জন্য সব ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে এ সরকার। মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং দলীয় লোকদের মাধ্যমে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের ব্যবস্থা করে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ফাঁসির দন্ড দেয়ার ব্যবস্থা করে তা কার্যকর করেছে। বর্তমান আমীরে জামায়য়াত ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীকে দীর্ঘ দিন যাবত কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে বারবার জামিন পাওয়া সত্ত্বেও সরকার তাদেরকে মুক্তি দিচ্ছে না। সরকার তাদেরকে মুক্তি না দিয়ে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে এবং অব্যাহতভাবে আদালত অবমাননা করে চলছে। কারাগারে আটক থাকাবস্থায় বাইরে সংঘটিত ঘটনায় জড়িয়ে মামলার আসামী করে তাদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। শুধু মামলা দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, সরকার তথাকথিত বিচারের নামে প্রহসনের বিচার শুরু করেছে। তিনি অবিলম্বে এ প্রহসনের বিচার বন্ধ করার আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন বলেন, দ্বীন কায়েমের জন্য আমাদেরকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। দ্বীন প্রতিষ্ঠায় অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদেরকে সর্বাবস্থায় একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে দুনিয়ার জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী। পরকালীন জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে আমাদের দুনিয়ার জীবনকে পরিচালিত করতে হবে। জুলুমবাজ শাসক গোষ্ঠীর হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য আমাদেরকে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী আমাদের বিরুদ্ধে যতই জুলুম-নির্যাতন করুক না কেন, দ্বীনের স্বাভাবিক কাজ সর্বাবস্থায় চলমান রাখতে হবে। দুনিয়ার জীবনের সকল কাজ এমন এমনভাবে আঞ্জাম দিতে হবে- যাতে পরকালে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করা আমাদের জন্য সহজ হয়।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে আজ সঙ্কটময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ করেছে। বিগত ১৫ বছর এ সরকার ইসলামের মৌলিক আর্দশ ও নীতি-নৈতিকতাকে নষ্ট করেছে। দেশে এক অরাজকতা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। দেশের মানুষের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। মেগা প্রজেক্টের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। দেশের আলেম-উলামাদেরকে গণগ্রেফতার করে ইসলামের পক্ষে যারা কথা বলেন তাদের কণ্ঠকে রোধ করা হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষা বন্ধ করে ইসলাম বিদ্বেষী যৌন শিক্ষাকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ প্রক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মাঠে ময়দানে শক্তিশালী ও দিক নির্দেশনামূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলেই এ জাতি এই স্বৈরাচারী সরকারের হাত রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ।