১১ আগস্ট ২০২৩, শুক্রবার, ১:১৮

চট্টগ্রামে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত

সচ্ছল লোকের দায়িত্ব হলো আর্তমানবতার পাশে দাঁড়ানো

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সচ্ছল লোকের দায়িত্ব হলো আর্তমানবতার পাশে দাঁড়ানো। আমাদের সামর্থানুযায়ী কিছু উপহার সামগ্রী নিয়ে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি, যা আপনাদের প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য। কিন্তু আপনাদের আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন। যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রধান দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু বিনা ভোটের সরকারের জনগণের প্রতি কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় তারা আপনাদের বিপদে এগিয়ে আসেনি। আমরা সমাজের বিত্তবানদের প্রতি দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানাচ্ছি।

১১ আগস্ট শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মুহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নূরুল আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বন্যার্তদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

তিনি আরো বলেন, রিজিকের মালিক আল্লাহ্। সেই আল্লাহকে যদি মেনে চলি, তাঁর আইন মেনে যদি সমাজ পরিচালনা করি, প্রতিনিয়ত তাঁর শুকর আদায়ে থাকি তাহলে এই সমাজে তিনি বরকত নাযিল করবেন। আসমান ও জমিনে রিজিকের সকল দুয়ার খুলে দেবেন। সমাজ সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে। তাই আমাদের সকলকে আল্লাহর আইন সমাজে চালু করার জন্য চেষ্টা করতে হবে, যাতে করে সমাজ কল্যাণের পথে পরিচালিত হয়।

তিনি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আল্লাহ বলেছেন আমি অভুক্ত ছিলাম, তোমরা আমাকে খাবার দাওনি। আমি পিপাসার্ত ছিলাম, তোমরা পানি দাওনি। আমি অসুস্থ ছিলাম, তোমরা আমার সেবা করোনি। তখন বান্দা বলবে, হে আল্লাহ! আপনি তো রাব্বুল আলামীন, আপনাকে আমরা কীভাবে সাহায্য করবো? তখন আল্লাহ বলবেন- আমার উমুক বান্দা অভুক্ত ছিলো তাকে খাবার দিলে আমাকে দেয়া হতো, তাকে পানি দিলে আমাকে দেয়া হতো, তাকে সেবা করলে আমার সেবা করা হতো। এই কথা জানার পর আমাদের উচিৎ মানুষকে খাবার দেয়া, চিকিৎসা দেয়া, বিপদে সাহায্যের হাত বাড়ানো।

সরকারের দায়িত্বহীনতার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যদি জনগণের সরকার থাকতো, নির্বাচিত সরকার থাকতো তাহলে এই বিপদের সময় তারা চুপ থাকতে পারতো না। জনগণের বিপদের সময় যারা চুপ থাকে তারা কখনোই ভালো সরকার হতে পারে না। ভালো সরকার হলো ঐ সরকার, যে সরকার জনগণকে ভালোবাসে আর জনগণও সরকারকে ভালোবাসে। খারাপ সরকার হলো ঐ সরকার, যারা জনগণকে ভালোবাসে না। জামায়াত যদি সরকারে যায় তাহলে জনগণকে ভালোবাসবে। ভোট জালিয়াতি করে, দিনের ভোট রাতে করে যারা সরকার গঠন করে তারা কখনো ভালো সরকার হতে পারে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারই জনগণের কথা মনে রাখে। তাই আপনারা দেখেশুনে ভালো সরকার নির্বাচিত করবেন। যে সরকার মানুষের কল্যাণ করবে তাদের নির্বাচিত করুন।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন বলেন, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় সরকারের দায়িত্ব ছিলো আপনাদের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু তারা তা না করে উল্টো আমাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। এতে আপনাদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে যে সহযোগিতা করা দরকার ছিলো তা আমরা সঠিকভাবে করতে পারছি না। বাধ্য হয়ে সীমিত আকারে সামান্য উপহার সামগ্রী দিয়ে আপনাদের সহযোগিতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনারা দোয়া করবেন, যেন তা বহুলাংশে বৃদ্ধি করতে পারি।

সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বিপদ-মুসিবত আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতেই আসে। তার অগোচরে কিছুই হয় না। এবারে অতি বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় ২৭টি ওয়ার্ড, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ অনেকগুলো এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনেক স্থানে এখনো মানুষ পানিবন্দী। আমরা দোয়া করছি যেন দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে সবাই ফিরে যেতে পারে। অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে আপনাদের দিন যাচ্ছে। সামান্য কিছু উপহার সামগ্রী নিয়ে এসেছি। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আমরা আরো বেশি পরিমাণে মানুষকে সাহায্য করতে পারি, মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারি। উত্তরোত্তর যেন মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারি।

এ সময় নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর নজরুল ইসলাম, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ্, এম এফ ইউনুছ, নগর প্রচার সম্পাদক এএইচএম কামাল, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এসএম লুৎফর রহমান প্রমুখ।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) বন্যাকবলিত মানুষের পাশে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর সাবেক এমপি জননেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম-১৫ সংসদীয় আসন সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় স্মরণকালের ভয়াবহতম বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন ও ত্রাণ সহায়তা প্রদানকালে বলেন, জামায়াত অসহায় মানুষের সেবায় আগেও ছিলো, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও কাজ করে যাবে, ইনশাআল্লাহ। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে থেকে মানবিক সাহায্য করা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু সরকার এখনো বন্যাপীড়িত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। দুর্গত এলাকায় খাদ্য নেই, ঘুমানোর জায়গা নেই, বিদ্যুৎ নেই, পানীয় জলের অভাবে সর্বত্র আজ হাহাকার। এই চরম মুহ‚র্তে জামায়াত কর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কুরবানী দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি অবিলম্বে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসনসহ সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকার, দেশী-বিদেশী সংস্থা ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানান।

১১ আগস্ট শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য আনোয়ারুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপহার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।

উক্ত প্রোগ্রামে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন, চট্টগ্রাম অঞ্চল টীম সদস্য ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জননেতা জাফর সাদেক, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এসএম লুৎফর রহমান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ জাকারিয়া, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মুহাম্মদ নাছের, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শিবির সভাপতি ছাত্রনেতা আলী হোসাইন, সাতকানিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা কামাল উদ্দিন, লোহাগাড়া উপজেলা আমীর অধ্যাপক আসাদুল্লাহ ইসলামাবাদী, বাঁশখালী উপজেলা আমীর ইঞ্জিনিয়ার শহীদুল মোস্তফা, সাতকানিয়া উপজেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ তারেক হোসাইন, লোহাগাড়া উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা আবুল কালামসহ জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ।