৩ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার, ৩:৩১

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরায় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রস্তাব গৃহীত

বিনা নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার নেশায় আওয়ামী লীগ অস্থির হয়ে পড়েছে

-ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক বৈঠক সংগঠনের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংক লুটপাট ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাসহ দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরায় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিম্নোক্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়।

“বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, সরকারের বাড়াবাড়ি, সীমালংঘন, সংবিধানের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন, সীমাহীন দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারি দেশে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আজ দেশে যেন কোনো সরকার নেই। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অব্যাহতভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের উপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে এবং হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে রাজনীতিহীন করেছে। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরাপদ প্রস্থানের সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতা গ্রহণ করার পর তারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে একে ধ্বংস করে দেয়। তারা বেছে বেছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা ও গুম করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করে পরিকল্পিতভাবে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়।

ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। জামায়াত উদ্ভাবিত কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তারা ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ বছরে ১৭৩ দিন হরতাল পালন করে। অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম, জনগণের জীবন দান ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পর কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়। কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচন সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসা অর্জন করে এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস প্রবাহিত হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এ পদ্ধতি বাতিল করার কারণে গণতন্ত্রের ধারা বিধ্বস্ত হয়। আদালতের যে রায়ের দোহাই দিয়ে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়, সেই রায়ে পরপর আরো দুটি নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ রায়ের সেই অংশটুকু অবজ্ঞা করে সম্পূর্ণ দলীয় স্বার্থে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দেয়। এখান থেকেই রাজনীতির সংকট ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো একটি প্রহসনে পরিণত হয়। তারা জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পরিবর্তে ক্ষমতায় থাকার জন্য অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পথ বেছে নেয়। ২০১৪ সালে সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচন বয়কট করে। ১৫৪টি আসনে কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। এটাকে কোনো নির্বাচন বলা যায় না। কিন্তু আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পরিবর্তে এক প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। ক্ষমতা দখলের পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। শীঘ্রই আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু তিনি তার কথা রাখেননি। ক্ষমতার মোহ তাকে অস্থির করে তোলে। আওয়ামী লীগ যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় থাকার অপকৌশল গ্রহণ করে। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতে কেন্দ্র দখল ও ভোট জালিয়াতি করে আবারো ক্ষমতায় আসে। সারা দুনিয়ায় এটি মধ্য রাতের নির্বাচন বলে পরিচিতি লাভ করে।

দীর্ঘ ১৪ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, কথা বলার অধিকার এবং মৌলিক মানবাধিকার সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস হয়ে যায়। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে দলীয় স্বার্থে ধ্বংস করে দেয়া হয়। আবারো বিনা নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার নেশায় আওয়ামী লীগ অস্থির হয়ে পড়েছে। ফলে বাংলাদেশ পৃথিবীতে একটি গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্রের পরিচিতি লাভ করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের সভাসমাবেশ করার অধিকার স্বীকৃত হলেও জনগণকে আজ রাজপথে সভাসমাবেশ ও মিছিল করতে দেয়া হচ্ছে না। কোনো ধরনের মিছিলের আয়োজন করলেই সেখানে বাধা দেয়া হচ্ছে। বায়বীয় মামলা ও গ্রেফতার করে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। দেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য আজ ঐক্যবদ্ধ।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা মনে করে, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে দ্রুত পদত্যাগ করে দল নিরপেক্ষ সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা দরকার। আওয়ামী লীগ তা না করে যে হুমকি-ধমকি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করার হুঙ্কার ছাড়ছে, তা তাদের জন্য ও দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। দেশে সংঘাত-সংঘর্ষ, জুলুম-নিপীড়ন, হামলা মামলা, সভা সমাবেশ বানচাল করে সমস্যার সমাধান হবে না। যত দ্রুত আওয়ামী লীগ এ সত্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে, ততই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য দল নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকল রাজনৈতিক দল, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ও আপামর জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।