১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৯:৫২

জননেতা মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সোবহানের দাফন সম্পন্ন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমীর ও ৫ বারের নির্বাচিত সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, সমাজসেবক, প্রবীণ জননেতা মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সোবহান গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে অন্তরীণ অবস্থায় ইন্তিকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

কারা কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মাওলানা আবদুস সোবহানের লাশ গ্রহণের পর পরিবারের সদস্যগণ পাবনার উদ্দেশে লাশ নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। রাত ৩টায় মাওলানা আবদুস সোবহানের লাশ নিয়ে তার পরিবারের সদস্যগণ নিজ বাড়িতে পৌঁছেন। সকাল হতে না হতেই শিশু কিশোর, তরুন, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা মাওলানা আবদুস সোবহানের লাশ এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসেন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তার লাশ নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তার প্রতিষ্ঠিত দারুল আমান ট্রাস্ট ময়দানে। হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে দারুল আমান ট্রাস্ট-এ লাশের সাথে যায়। সেখানে পূর্ব থেকেই অপেক্ষমান হাজার হাজার মানুষ লাশকে ঘিরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। চতুর্দিক থেকে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত মানুষের আগমন ঘটতে থাকে দারুল আমান ট্রাস্ট ময়দানে। জানাজা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। জানাজা শুরু হয় দুপুর আড়াইটায়।

লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সালাতে জানাজায় ইমামতি করেন মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সোবহানের ছোট ছেলে হাফিজ মুজাহিদুল ইসলাম। জানাজা পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সোবহান শুধু পাবনাবাসীর নয়, সমগ্র বাংলাদেশের নেতা ছিলেন। আপনারা তাকে সবচাইতে ভালভাবে জানেন ও চিনেন। তার বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়। মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায়ে ষড়যন্ত্রমূলক বিচারে মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সোবহানকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে আপীল করেন। তার আপীল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। এ অবস্থায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি চলে গেলেন। আজ আমি পাবনার সর্বস্তরের জনতার সামনে তার লাশ দাফনের পূর্বে জিজ্ঞাসা করতে চাই, তিনি কী দোষী নাকি নির্দোষ?
আমীরে জামায়াতের এ প্রশ্নে লাখো জনতা সমস্বরে জবাব দেন, তিনি নির্দোষ। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। অনেকেই হু-হু করে কেঁদে উঠেন। আমীরে জামায়াত তার বক্তব্যে বলেন, হে আরশের মালিক! তুমি জনতার এ রায় কবুল করে নাও।

আমীরে জামায়াত বলেন, মাওলানা আবদুস সোবহান আমাদের নেতা ও শিক্ষক। তিনি আজীবন হকের জন্য লড়াই করেছেন। তিনি কোনো দিন অন্যায় অসত্যের কাছে মাথা নত করেননি। তার লাশ সামনে রেখে আমরা আল্লাহকে সাক্ষী করে শপথ করছি আমরা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কোনো দিন বাতিলের সাথে আপোষ করব না। আমীরে জামায়াতের এ ঘোষণায় লাখো জনতা সমস্বরে চীৎকার করে ওঠেন। এ সময় দারুল আমান ট্রাস্ট ময়দান জনতার আবেগ-অনুভূতিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

জানাজা পূর্ব সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা জেলা আমীর জনাব আবু তালেব মন্ডলসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

সালাতে জানাজায় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল জনাব হামিদুর রহমান আযাদ ও মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন ও জনাব মোবারক হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, ২০ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতা শিমুল বিশ্বাস, জনাব হাবিবুর রহমান হাবিব। সালাতে জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং লাখো মুসুল্লী অংশগ্রহণ করেন।

জানাজা শেষে আরিফপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। লাখো মুসুল্লী দাফনে অংশগ্রহণ করে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে বিদায় জানান।