২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৭:২৬

বিচারপতি সিনহা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটির মাধ্যমে তিনি তার নিজের এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ফ্যাঁসিবাদী সরকারের মুখোশ দেশী-বিদেশী সকলের নিকট খুলে দিয়েছেন

বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ কুমার সিনহা কর্তৃক লিখিত ও সম্প্রতি প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইট্স অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ নামক বইটি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আজ ২১ সেপ্টেম্বর প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ কুমার সিনহা কর্তৃক লিখিত ও সম্প্রতি প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটির মাধ্যমে তিনি তার নিজের এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ফ্যাঁসিবাদী সরকারের মুখোশ দেশী-বিদেশী সকলের নিকট খুলে দিয়েছেন। এ বইটি বর্তমান সরকারের ফ্যাঁসিবাদী কর্মকাণ্ড ও বিচারপতি এসকে সিনহা বর্তমান ফ্যাঁসিবাদী সরকারের ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে যে অপরাধ করেছেন তারই আত্মস্বীকৃত দলিল হিসেবেই জাতির নিকট বিবেচিত হবে।  

উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও উচ্চ পদে আসীন হওয়ার লোভ তাকে বর্তমান ফ্যাঁসিবাদী সরকারের ক্রীড়নকে পরিণত করেছিল। এ ধরনের একজন নীতিহীন ও আদর্শহীন লোক কখনো ন্যায় বিচার করতে পারেন না। সরকারের ক্রীড়নক হিসেবে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছেন। এ রকম একজন পক্ষপাতদুষ্ট লোককে প্রধান বিচারপতির আসনে বসিয়ে সরকার ঐ পদটিকে কলংকিত করেছে।

সরকার তাকে ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহার করে বিচারের নামে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার পর তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। একজন বিচারপতির পদের লোভ থাকলে কিংবা অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হলে তিনি কখনো ন্যায় বিচার করতে পারেন না। প্রমাণিত হয়েছে যে, বিচারপতি এসকে সিনহা সরকারের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়েছেন। যত দিন বিচারপতি সিনহা সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে সরকারের ইচ্ছামাফিক বিচার কাজ করেছেন ততদিন ফ্যাঁসিবাদী সরকার তার প্রতি খুশি ছিল। যখন তিনি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিলেন তখনই সরকার তার প্রতি ক্ষীপ্ত হয়ে তাকে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করে অসুস্থ সাজিয়ে বিদেশে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিলো। অথচ তিনি বলেছেন যে, তিনি অসুস্থও ছিলেন না এবং স্বেচ্ছায় পদত্যাগও করেননি। এ থেকে বিশ্ববাসীর নিকট পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, বর্তমানে বাংলাদেশ কী ভয়াবহ ফ্যাঁসিবাদী শাসন চলছে।

তার উপর ফ্যাঁসিবাদী সরকারের তীব্র জুলুম-নির্যাতন এবং তার চরম ব্যর্থতা, হতাশা ও অপমানের তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণা এবং বিবেকের দংশনই বইটিতে অত্যন্ত করুণভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এ বইটি পাঠ করলেই বুঝা যায় যে, সরকার কিভাবে বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ করছে।

বিচারপতি সিনহার লেখাই প্রমাণ করেছে যে, দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই, আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই, বাক-স্বাধীনতা নেই, জনগণের জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, বর্তমান ফ্যাঁসিবাদী সরকার পারে না এমন কোন হীন কাজ নেই। তারা গোয়েবলসীয় কায়দায় সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য এবং সুস্থ একজন মানুষকে অসুস্থ সাজিয়ে নির্বাসনে পাঠাতে পারে।

বর্তমানে যারা সরকারের ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে ফ্যাঁসিবাদী সরকারকে টিকিয়ে রাখার ব্যর্থ অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন তাদের বিচারপতি সিনহার নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।

বিচারপতি সিনহার লেখা বই প্রমাণ করে যে, সত্য কোন দিন চাপা থাকে না। প্রকৃত সত্য একদিন প্রকাশিত হবেই। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে যে অন্যায়ভাবে বিচারের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা একদিন অবশ্যই প্রমাণিত হবে এবং তাদের যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার একদিন হবে ইনশাআল্লাহ।”