৩০ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ৭:২৬

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রশাসনের একপেশে ও পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকার নিন্দা এবং প্রতিবাদ

৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশনে ব্যালট ডাকাতি ও প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে নতুনভাবে নির্বাচন দেয়ার আহবান

সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে নজিরবিহীন অনিয়ম, ব্যালট ডাকাতি, কারচুপি, জালভোট প্রদান, ভোটকেন্দ্র দখল এবং প্রশাসনের একপেশে ও পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকার নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ৩০ জুলাই, ২০১৮ প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “সিলেট, রাজশাহী ও বরিশালে আজ ৩০ জুলাই যে প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে তা গোটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। আওয়ামীলীগ, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন সম্মিলিতভাবে সরকার দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করার লক্ষ্যে যে নির্লজ্জ ভূমিকা পালন করেছে তা জাতির জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

নির্বাচনের পূর্বেই রাষ্টের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের এজেন্টদের বাসায় বাসায় তল্লাশী চালিয়ে হয়রানি করতে থাকে। এমনকি কোন কোন প্রার্থীর প্রধান এজেন্টকে গ্রেফতার করা হয়। সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর পূর্বেই বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বক্সে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। কোন কোন এলাকায় কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের ব্যালট সরবরাহ করা হলেও মেয়রের ব্যালট সরবরাহ করা হয়নি।

বরিশালের বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর এজেন্টদেরকে কেন্দ্রে ঢুকতেই দেয়া হয়নি। প্রশাসনের সহযোগীতায় কেন্দ্র দখল করে সরকার দলীয় প্রার্থীর নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মারা হয়। বরিশালের তিনজন মেয়র প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।

সিলেটে গত দুইদিন যাবৎ পুলিশ বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ভয় ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। এজেন্টদের বাড়িতে হানা, ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করাসহ ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। ২৯ জুলাই রাত্রেই বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে বাক্সে ঢুকানো হয়। কাজী জালাল উদ্দিন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় ২০ জন আহত হয়। সিলেটে মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের পোলিং এজেন্টদের কাজির বাজার, মীরা বাজার জামেয়া স্কলার্স হোম, নবীনচন্দ্র বিদ্যালয়, হাতিম আলী স্কুল, বাগাবাড়ী ধর্মকেন্দ্র, এমসি কলেজ, লামা বাজার ও জালালাবাদ, ভোট কেন্দ্রসহ প্রায় ৩০টি ভোট কেন্দ্র থেকে জোর করে বের করে দেয়া হয়। বখতিয়ার বিবি সেন্টারে শিবিরের কোতয়ালী পূর্বের সভাপতি ফাহাদ আহমদের পায়ে বন্দুক রেখে পুলিশ গুলি চালিয়ে তাকে পঙ্গু করে দেয়। সে এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে। রায়সর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে বোমা ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়।

রাজশাহীতে নির্বাচনের একদিন আগে থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করে। আজ ভোট শুরুর প্রথম থেকেই অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে বিরোধী দলীয় প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। বেশ কিছু কেন্দ্রে সকালেই মেয়র পদের ব্যালট সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়।

আজকের তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন খুলনা এবং গাজীপুরের নির্বাচনকেও হার মানিয়েছে। কেন্দ্র দখল, ব্যালট ডাকাতি, জাল ভোট প্রদান, ভোটারদের উপর হামলাসহ নানা মুখী নির্বাচনী অনিয়ম আজকের নির্বাচনকে একটি প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করেছে। আওয়ামীলীগ সরকার তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যেভাবে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে তা নজিরবিহীন। আরো একবার প্রমাণিত হলো যে, বর্তমান সরকার ও তার আজ্ঞাবহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আদৌ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য কোন নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে আজ ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত ব্যালট ডাকাতি ও প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে নতুনভাবে নির্বাচন দেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”