৭ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৫:৩৫

২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের পেশকৃত বাজেট অদূরদর্শী, উচ্চাকাংখী, কল্পনা বিলাসী ও নির্বাচনমুখী

আজ ৭ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের জন্য ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার যে বিরাট অংকের বাজেট পেশ করেছেন যে সম্পর্কে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আজ ৭ জুন প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের জন্য ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বিরাট অংকের যে বাজেট পেশ করেছেন তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলেই অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন। পেশকৃত বাজেট অদূরদর্শী, উচ্চাকাংখী, কল্পনা বিলাসী ও নির্বাচনমুখী।

বর্তমান সরকারের ৯ বছরে আমরা লক্ষ্য করে আসছি যে, সরকার প্রায় প্রতি বছরই মোটা অংকের বাজেট পেশ করলেও দুর্নীতি, অনিয়ম ও নানা বিশৃংখলার কারণে তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত বাজেট কাটছাট করতে বাধ্য হয়। সদ্য পেশ করা বাজেটের ক্ষেত্রে তার ব্যতীক্রম হবে না বলেই মনে হচ্ছে।

দেশের অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণগণ মনে করেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের জনগণকে প্রভাবিত করার হীন উদ্দেশ্যেই সরকার এ উচ্চাকাংখী কল্পনা বিলাসী বাজেট পেশ করেছে। দেশের নির্যাতীত-নিপীড়িত ও হতাশ জনগণকে আশান্বিত করার উদ্দেশ্যেই সরকার তাদের সামনে কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে আশা-আকাংখার মুলো ঝুঁলিয়েছে। ব্যর্থ সরকারের উচ্চাবিলাসী ও অবাস্তবÑকৌশলী বাজেট দেশের দরিদ্র জনগণকে আরো হতাশ করবে।

বাজেট পেশ করার পূর্বেই চাল, ডাল, তরিতরকারী, মাছ, গোশতসহ সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ার ফলে মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত ও দরিদ্র জনগণের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫.৬ শতাংশ। বিরাট অংকের বাজেট পেশ করার ফলে মুদ্রাস্ফীতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে মধ্যবিত্ত, নি¤œ-মধ্যবিত্ত দরিদ্র জনগণের দুর্ভোগ আরো বেড়ে চরম আকার ধারণ করার আশংকা করা হচ্ছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ৩৯ হাজার ২শত ৮০ কোটি টাকা, এনবিআর থেকে আয় ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণের জন্য বিদেশী ও দেশী উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ এবং সঞ্চয় পত্র বিক্রয় করা থেকে আয় করার কথা বলা হয়েছে। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫০ হাজার ১০৬ কোটি টাকা এবং দেশীয় উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ ধরা হয়েছে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা এবং সঞ্চয় পত্র বিক্রয় করা থেকে আয় ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১শত ৯৭ কোটি টাকা। এ থেকে দেখা যায় পেশকৃত বাজেট অনেকাংশে বিদেশী ও দেশী ঋণ নির্ভর। করমুক্ত আয়ের সীমা গত কয়েক বছর যাবতই ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা রাখা হচ্ছে।

অথচ করমুক্ত আয়ের সীমা আরো অন্তত ১ লক্ষ টাকা বৃদ্ধি করে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা উচিত ছিল। এ বাজেট দুর্নীতি আরো বৃদ্ধি করবে এবং সরকারের দলীয় লোকদের স্বার্থ হাসিল হবে। কিন্তু জনগণের কোন কল্যাণ হবে না।
অবাস্তব কল্পনা বিলাসিতা বাদ দিয়ে বাজেট বাস্তবায়নের উপযোগী করে, বাস্তবমুখী করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”