১৫ মে ২০১৮, মঙ্গলবার, ৫:৩১

খুলনা সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনের নামে প্রহসন করার ঘটনায় নিন্দা

বর্তমান সরকার এবং তার আজ্ঞাবহ পুতুল নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ কোন নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করা সম্ভব নয়

আজকে ১৫ মে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাস, পোলিং এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে জোর পূর্বক বের করে দেয়া, ব্যাপক জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে প্রকাশ্যে সরকারী দলের প্রতীকে সিল মারার মহোৎসব, ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনের নামে প্রহসন করার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আজ ১৫ মে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রহসনমূলক সাজানো নির্বাচনের ঘটনার দ্বারা আবারও প্রমাণিত হল যে, বর্তমান সরকার এবং তার আজ্ঞাবহ পুতুল নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ কোন নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাস, পোলিং এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে জোর করে বের করে দেয়া, জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে প্রকাশ্যে সরকারী দলের প্রতীকে সিল মারা, ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গিয়েছে যে, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ২৮৯টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ ভোট কেন্দ্র থেকেই বিরোধী দলের প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। খুলনা জেলা স্কুল কেন্দ্রের একাডেমিক ভবন-১ ও ২ সহ বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতেই দেয়া হয়নি। তাদেরকে ভোট কেন্দ্রের বাইরে থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দিয়েছে। বহু এলাকায় ১৪ মে দিবাগত রাতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দিয়েছে।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৩০ নাম্বার ওয়ার্ডের রূপসা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে বিরোধী দলের প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট সেলিম কাজীকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে আহত করেছে। অনেক ভোট কেন্দ্রে বিরোধী দলের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর করা হয়েছে। অনেক ভোট কেন্দ্রেই নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে প্রকাশ্যে সরকারী দলের প্রতীকে সিল মারা হয়েছে। কোন কোন ভোট কেন্দ্রে দেখা গিয়েছে যে, ভোটাররা ভোট প্রদান করার পূর্বেই তাদের ভোট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দিয়ে ফেলেছে এবং ভোটারদের বলেছে, ‘আপনারা কষ্ট করে ভোট কেন্দ্রে এলেন কেন?’

কোন কোন ভোট কেন্দ্র থেকে ভোটার নারী-পুরুষকে ধাক্কা মেরে ধমক দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। রূপসা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র থেকে বিরোধী দলের এজেন্টদের বের করে দিয়ে সকাল ১০টার মধ্যে সরকারী দলের প্রতীকে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে দেয়া হয়েছে। সেখানে সাংবাদিকগণ গেলে পুলিশ বলেছে যে, ‘সিল মারতে এত সময় লাগে নাকি।’ পুলিশের সামনেই একজন যুবক বলে যে, ‘টার্গেট ১২শত ভোট, আধা ঘণ্টা তো লাগবেই।’ একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে যে, একটা ভোট কেন্দ্রে সকাল ১০টার মধ্যেই তিনশত ভোট কাস্ট হয়ে গিয়েছে। বেলা ২টা পর্যন্ত এত বিশৃঙ্খলার পরেও মাত্র তিনটি কেন্দ্রে গোলযোগের কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখার খবর পাওয়া গিয়েছে। সরকারী প্রশাসন ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ ভোট কেন্দ্রই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দখল করে সরকারী দলের প্রতীকে সিল মারার মহোৎসব করেছে।

উপরেল্লিখিত ঘটনা থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। এই নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”