১৩ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ৩:০৩

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানসহ সকল নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ পালিত

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর, সাবেক এমপি জননেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান সহ ১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ও অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে রাজধানীতে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। মিছিলটি ঢাকা সাইন্সল্যাব বাটা সিগন্যাল মোড় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ধানমন্ডি সিটি কলেজের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

বিক্ষোভ মিছিল পরর্বতী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ড. হেলাল বলেন, সরকার পরিকল্পিত ভাবে দেশে ফ্যাসিবাদী বাকশালী রাজত্ব কায়েম করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার জামায়াত নেতৃবৃন্দ সহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরকে গনগ্রেফতার, খুন, গুম, অপহরণ পথ বেছে নিয়েছে। ক্ষমতাসীনদের এইসব অপতৎপরতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে দেশের মানুষ অতিষ্ট ও বিক্ষুব্ধ। সরকারকে অবিলম্বে এসব অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত অধ্যাপক মুজিব সহ গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতাকর্মীকে মুক্তি দিতে হবে এবং সকল ধরনের পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে অন্যথায় ভবিষ্যতে এর জন্য তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে।

তিনি আরোও বলেন, সরকার ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে ৫ই জানুয়ারির মত বিরোধী দল বিহীন আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন করে আবারো ক্ষমতায় টিকে থাকার অপচেষ্টা করছে। এজন্য তারা বিরাজনীতি করনের পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে তারা আওয়ামী লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করেছে। তারা অন্যায় ভাবে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার সমূহকে পদদলিত করছে। সরকার দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে নসাৎ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করার যে হীন ষড়যন্ত্র করছে তাতে পুলিশ সক্রিয় সহযোগিতার ভূমিকা পালন করছে। তিনি পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের অধিকার রক্ষায় আপনারা ভূমিকা পালন করেন কোন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন আপনাদের কাজ নয়। তিনি সরকার ও পুলিশকে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান।

বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন-কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য মুকাররম হোসাইন, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য শামসুর রহমান, কামাল হোসেন, মহানগরী মজলিশে শূরা সদস্য আমিনুর রহমান, সগির বিন সাইদ, এ্যাড জসিম উদ্দিন তালুকদার, মোঃ আহসান উল্লাহ, মহিব্বুল হক ফরিদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী পূর্বের সভাপতি সোহেল রানা মিঠু, ঢাকা কলেজ সভাপতি মেহেদী হাসান সানি, শিবির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সেক্রেটারি তারিক মাসুম, জামায়াত নেতা আব্দুস সাত্তার সুমন, শাহিন আহমেদ খান, ছাত্রনেতা আব্দুল্লাহ আল মারুফ, হাফিজুর রহমান, মাইনুল ইসলাম প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।

ঢাকা মহানগরী উত্তর

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম বলেছেন, সরকার গণবিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে হিংস্র হয়ে ওঠেছে। তারা অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই জামায়াত সহ বিরোধী দলের ওপর দলন-পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। সে ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় তারা ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এবং রাজশাহী মহানগরী আমীর প্রফেসর ড. আবুল হাশেম সহ নেতৃবৃন্দকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে । কিন্তু এসব করে স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। তিনি সরকারকে হঠকারিতা পরিহার করে অবিলম্বে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত মকবুল আহমদ সহ আটক সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

তিনি রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসাবে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও রাজশাহী মহানগরী আমীর প্রফেসর ড. আব্দুল হাশেম সহ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের প্রতিবাদের এবং অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। মিছিলটি উত্তর বাড্ডা থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন ও নাজিম উদ্দীন মোল্লা, শ্রমিক নেতা মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, ঢাকা মহানগরী মজলিশে শুরা সদস্য ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, আতাউর রহমান সরকার, এ্যাভোকেট ইব্রাহিম খলিল, হোসাইন আহমদ, কুতুবুদ্দীন, ডা. শফিউর রহমান ও আব্দুল আউয়াল আজম প্রমূখ।

লস্কর তসলিম বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলেই দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধবংস করে দিয়েছে। গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। তারা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়লেও দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বেপরোয়া লুটপাট, চাঁদাবাজী ও দুর্নীতিতে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়েই স্থবিরতা নেমে এসেছে। এমতাবস্থায় জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্যই সরকার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত সহ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এর আগে আমীরে জামায়াত মকবুল আহমাদ সহ শীর্ষনেতাদের গ্রেফতার করে কথিত রিমান্ডের নামে হয়রানী চালিয়ে দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তিনি বর্ষীয়ান আমীরে জামায়াত মকবুল আহমাদ সকল জাতীয় নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। অন্যথায় সরকারকে একদিন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

গাজীপুর মহানগরী

বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য গাজীপুর সিটি আমীর ও গাজীপুর সিটির মেয়র প্রার্থী জননেতা অধ্যক্ষ এস এম সানাউল্লাহ বলেছেন জনগণের মেন্ডেটবিহীন কর্তৃত্ববাদী জালিম সরকার দেশপ্রেমিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র করছে।

এরই অংশ হিসেবে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত, জাতীয় সংসদে জামায়াতের সাবেক সংসদীয় দলনেতা জননেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জনগণ সরকারের সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে নেতৃবৃন্দকে মুক্ত করে আনবে ইনশাআল্লাহ।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে আজকের বিক্ষোভ মিছিল শেষে পথসভায় বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন ফাঁসির মঞ্চ আমাদের থামাতে পারিনি। গ্রেফতার-নির্যাতন করে ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখা যাবে না। রাজপথে ছিলাম রাজপথে আছি রাজপথেই থাকবো।

রাজশাহী মহানগরী

ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত অধ্যাপক মজিবুর রহমানসহ ১১ জামায়াত নেতাকে ঘরোয়া প্রোগ্রাম চলকালে কোন প্রকার মামলা ছাড়াই অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে দেশব্যাপী কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নগরীর রাজশাহী চাপাই মহাসড়ক ডিংগাডোবা এলাকায় আজ ১৩ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার সকাল ৮ টায় এক বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচী পালন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরী শাখা।

মিছিল উত্তর সমাবেশে জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, একটি ঘরোযা বৈঠক থেকে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত অধ্যাপক মজিবুর রহমান, রাজশাহী জোনের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী মহানগরী আমীর প্রফেসর এম আবুল হাশেম, সেক্রেটারী অধ্যক্ষ সিদ্দিক হোসেনসহ ১১ জন জামায়াত নেতাদের কোন প্রকার মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করা অমানবিক ও গণতন্ত্রের পরিপন্থি। মিছিল মিটিং করা এদেশের প্রত্যেক নাগরিক ও দলের গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকারকে হরণ করে সরকার জামায়াতের উপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। আসলে সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ এই সরকার দিশেহারা হয়ে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে ফেরাতে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হত্যা, নির্যাতন, গ্রেফতার-অভিযান চালাচ্ছে। তারা পুলিশ বাহিনীকে দলীয় কর্মীর মত ব্যবহার করছে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রায় ভীত হয়ে পড়েছে। জুলুম-নিপীড়ন ও গ্রেফতার অভিযানের মাধ্যমে সরকার জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাব-মর্যাদা ক্ষুন্ন ও তাদেরকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য মিথ্যা মামলার নাটোক সাজিয়ে মিডিয়াতে প্রচার করছে। জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে কারাগারে রেখে নির্যাতন করছে ।

নেতৃবৃন্দ অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবী জানান এবং সরকার ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল সদস্যকে সংযত, গণতান্ত্রিক ও সভ্য আচরণের জন্য আহ্বান জানান।

এছাড়াও ঢাকা জেলা উত্তর, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, নারায়াণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর  নরসিংদী, পাবনা, নীলফামারী, দিনাজপুর, মানিকগঞ্জ, যশোর, বগুড়া, সুনামগঞ্জ, মৌলবীবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, চাদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চাপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের আরো বিভিন্ন জায়গায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পালন করেছে জামায়াত।