৫ জানুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৬:৪৫

৫ জানুয়ারী ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে দেশব্যাপি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পালিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম বলেছেন, ৫ জানুয়ারির একতরফা ও প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসনকে কলঙ্কিত করা হয়ছে। সরকার আবারও একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার দিবাস্বপ্নে বিভোর। কিন্তু দেশপ্রেমী জনতা সরকারের সে ষড়যন্ত্র কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেবে না। তিনি জনমত ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অবিলম্বে অবৈধ সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের জোর দাবি জানান।

তিনি আজ রাধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর ১০নং গোলচত্তর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বেনারসী পল্লীর সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য মুকুল পাটোয়ারী, মো. জোবায়ের, শাহ আলম তুহিন, মিজানুল হক, মো. নাসির উদ্দীন, আশরাফুল আলম, আলাউদ্দীন মোল্লা, আব্দুস সাকী, মোস্তাফিজুর রহমান ও ডা. শফিউর রহমান, ছাত্র শিবিরের ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সভাপতি আব্দুল আলীম, সেক্রেটারি জোবায়ের, প্রায়ভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি আবু নাহিদ, পরিকল্পনা ও সাহিত্য সম্মাদক মাসুদুর রহমান ও বায়তুলমাল সম্পাদক আব্দুজ জাওয়াদ প্রমূখ।

লস্কর তসলিম বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তারা দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। তারা ২০০৮ সালে ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে দলীয় আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। তারা ৫ জানুয়ারির তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। গণরায়ের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তনের সকল পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারা আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, মানবাধিকার হরণ করে গোটা দেশকে ফ্যাসীবাদী ও স্বৈরাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাই ব্যর্থ ও অগণতান্ত্রিক শক্তির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, মূলত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল না। ১৫৪ সংসদীয় আসনে সরকার দলীয় প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ছিল বিশ্ব ইতিহাসে নজীরবিহীন। কিন্তু অবশিষ্ট আসনে একদলীয় নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে দেয়া হয়নি। সারাদেশে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ৫ শতাংশেরও কম। রাজধানীর ২৯টি কেন্দ্রে কোন ভোটারকে ভোট দিতে দেখা যায়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন ভোট ডাকাতির মাধ্যমে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি দেখিয়েছে। প্রহসনের এই নির্বাচনে জাল ভোট প্রদান, গণহারে সিল মারা ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। তাই কথিত এই নির্বাচন যেমন জাতীয়ভাবে প্রত্যাখাত হয়েছে ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক মহলেও তা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কিন্তু সরকার পেশীশক্তির জোরে ক্ষমতায় থেকে জনগণের ওপর দলন-পীড়ন চালাচ্ছে। কিন্তু এসব করে অতীতে কোন অগণতান্ত্রিক শক্তির শেষ রক্ষা হয়নি, আর আওয়ামী লীগেরও হবে না।

বাড্ডায় বিক্ষোভ মিছিল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মসলিশে শুরা সদস্য নাজিম উদ্দিন মোল্লা বলেছেন, সরকার ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছে। জনগণ বিতর্কিত ও কলঙ্কিত নির্বাচন ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। তাই এই অবৈধ ও গণবিরোধী সরকারকে আর সময় দেয়ার সুযোগ নেই। তিনি সরকারকে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না করে অবিলম্বে পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দেয়ার জোর দাবি জানান। অন্যথায় সরকারকে গণরোষের মুখোমুখী হতে হবে।

তিনি আজ রাজধানীতে ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে তিনি একথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি উত্তর বাড্ডা বাজার থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে হুসাইন মার্কেট সংলগ্ন স্বাধীনতা সরণিতে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরীর মজলিশে শুরা সদস্য ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, হোসাইন আহমদ, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, ইব্রাহিম খলিল ও মহবুবুর রহমান, জামায়াত নেতা কুতুব উদ্দীন ও আতাউর রহমান সরকার প্রমূখ।

নাজিম উদ্দীন মোল্লা বলেন, সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে এখন জনগণের উপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের বিরোধী দল দমনের কাজে নিয়োজিত করেছে। তারা সভা-সমাবেশে বাধা ও নিষেধাজ্ঞা জারি করে জনগণের গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন করছে। দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, ধর্ষণ, অপহরণ, লুটপাট, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও গুপ্তহত্যার মহোৎসব চলছে। মূলত এসব জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। তিনি জুলুমবাজ সরকারের পতনের লক্ষ্যে সকলকে রাজপথে নেমে আসার আহবান জানান।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ৫ জানুয়ারী “গণতন্ত্র হত্যা দিবস” পালন এবং অবিলম্বে এই অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকারের সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার দাবীতে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য কামাল হোসাইনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি শুক্রবার সকাল ১১টায় মালিবাগ মৌচাক মার্কেট এর সামনে থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

জনাব কামাল হোসাইন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ভোটারবিহীন কথিত প্রহসনের নির্বাচনের নামে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৫ জানুয়ারী একটি কালো দিবস হিসেবে যুক্ত হয়েছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে বিচারের নামে হত্যা, খুন, গুম, হামলা-মামলা চালিয়ে দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা, রাজনৈতিক দলের মিছিল-সমাবেশ করার অধিকার সবই বাকশালী কালো থাবায় আজ ধ্বংস। কোন ষড়যন্ত্রই মুক্তিকামী জনতার আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। সময়ের ব্যবধানে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে যে কোন মূল্যে দেশপ্রেমিক জনতা অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবেই।

বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিনের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক নুর নবী মানিক, মহানগরী মজলিসে শুরা সদস্য আমিনুর রহমান, মতিউর রহমান, মহিব্বুল্লাহ ফরিদ, মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী পূর্ব সভাপতি সোহেল রানা মিঠু, ঢাকা কলেজ সভাপতি মেহেদি হাসান সানি, ঢাকা মহানগরী দক্ষিন সেক্রেটারী মু. মাসুম তারিক, জামায়াত নেতা মুতাসিম বিল্লাহ, আব্দুস সাত্তার সুমন, আহসান হাবিব, ছাত্রনেতা আব্দুল্লাহ আল মারুফ, সাইয়েদ মু. জুবায়ের সহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।

সিলেট মহানগরী 

সিলেট মহানগর জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ইতিহাস সাক্ষী আওয়ামীলীগ ও গণতন্ত্র এক সাথে চলে না। বাকশালী মানসিকতার এই দলটি যখনই ক্ষমতায় গিয়েছে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। বিপন্ন করেছে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব। এরা গণতন্ত্রের কথা বলে মানুষকে ধোকা দিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সাথে প্রতারণা করে ভোটের অধিকার হরণ করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ভোটারবিহীন নির্বাচনের প্রহসন করে বর্তমান ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করে সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে। সরকার আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, মানবাধিকার হরণ করে গোটা দেশকে একটি বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছে। এ অবস্থা থেকে জাতিকে উদ্ধারের জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতন্ত্র হত্যাকারীদের জাতি কখনো ক্ষমা করবেনা।

আজ শুক্রবার জামায়াত কেন্দ্র ঘোষিত দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসুচীর অংশ হিসেবে ৫ জানুয়ারী কলংকিত গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে সিলেট মহানগর জামায়াত নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত কথা বলেন।

বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন- সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা সোহেল আহমদম, সহকারী সেক্রেটারী মো: শাহজাহান আলী, জামায়াত নেতা হাফিজ মশাহিদ আহমদ, মু. আজিজুল ইসলাম, শাহেদ আলী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগরী সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সেক্রেটারী ফরিদ আহমদ প্রমুখ।

নেতৃবৃন্দ বলেন- আওয়ামীলীগের ইতিহাস গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস। ১৯৭৫ সালে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে এই আওয়ামীলীগ একদলীয় বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিল। আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ভোটারবিহীন নির্বাচন দিয়ে ইতিহাসের এক কলংকময় অধ্যায়ের সুচনা করে জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো বাকশালী স্বৈরশাসন চাপিয়ে দিয়েছে। তাই ৫ জানুয়ারীকে দেশের ইতিহাসে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করে দেশপ্রেমিক জনতা আওয়ামীলীগকে ধিক্কার জানায়। গণতন্ত্র বিনাশী অপশক্তি যতোই শক্তিশালী হোক না কেন? দেশপ্রেমিক জনতার দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবেই ইনশাআল্লাহ।

এছাড়াও ঢাকা জেলা উত্তর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, নারায়াণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর  নরসিংদী, পাবনা, নীলফামারী, দিনাজপুর, মানিকগঞ্জ, যশোর, বগুড়া, সুনামগঞ্জ, মৌলবীবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, চাদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চাপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের আরো বিভিন্ন জায়গায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পালন করেছে জামায়াত।