১০ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৬:৫৩

আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমাদসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সারাদেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ পালিত

বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম বলেছেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে দলন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও আমীরে জামায়াত মকবুল আহমাদ এবং সেক্রেটরি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতৃবৃন্দকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু জুুলুম-নির্যাতন চালিয়ে অতীতে কোন ফ্যাসীবাদী ও স্বৈরাচারি শক্তির শেষ রক্ষা হয়নি, আর আওয়ামী লীগেরও হবে না। তিনি জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। অন্যথায় সরকারকে গণরোষের মুখোমুখী হতে হবে।

তিনি আজ রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আমীরে জামায়াত মকবুল আহমাদ ও সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান সহ ৯ নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এ বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি উত্তর বাড্ডা থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সহকারি সেক্রটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম ও মাহফুজুর রহমান, শিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরীর মজলিশে শুরা সদস্য ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, মোস্তাফিজুর রহমান, ডা. শফিউর রহমান, আবুল হাসান, হোসাইন আহমদ, আলাউদ্দীন, নাসির উদ্দীন, আনোয়ারুল করিম ও আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার, জামায়াত নেতা আতিকুর রহমান, সাইফুল ইসলাম ও ফেরদৌস, ছাত্রনেতা মুজাহিদুল ইসলাম ও সজীব প্রমূখ। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ হলে পুলিশ সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ৬ পথচারীকে আটক করে।

ড. এম আর করিম বলেন, জামায়াত একটি নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও বৈধ রাজনৈতিক সংগঠন। জামায়াত দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় দেশের আইন, সংবিধান ও প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করে আসছে। কিন্তু পুলিশ সম্পূর্ণ ন্যাক্কারজনকভাবে আমীরে জামায়াতের নেতৃত্বে ঘরোয়া বৈঠক চলাকালে তিনিসহ কেন্দ্রীয় নেতৃব্ন্দৃকে গ্রেফতার করেছে। যা আইনের শাসন, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় সংবিধানের মারাত্মক লঙ্ঘন। তিনি সরকারকে বিরাজনীতিকরণের পথ পরিহার করে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক শাসনে ফিরে আসার আহবান জানান। অন্যথায় জনগণ ফ্যাসীবাদী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

তিনি বলেন, সরকার দেশকে নেতৃত্বশুণ্য করে করদরাজ্য বানানোর জন্যই দেশপ্রেমী জাতীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এ সরকারের আমলেই জামায়াতকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য পরিকল্পিতভাবে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ফরমায়েসীবাদী বাদী, সাজানো সাক্ষী ও দলীয় প্রসিকিউশনের মাধ্যমে বিচারের নামে প্রসহন করে সাবেক অমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা এবং সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। কিন্তু নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে, জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে জামায়াতের অগ্রযাত্রা অতীতে রুদ্ধ করা যায়নি আর কখনো যাবেও না। তিনি সরকারের গণবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জননেতা মকবুল আহমাদ এবং বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজসেবক সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, সাবেক এমপি নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পারওয়ার সহ ৯ কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ও অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবিতে আজ মঙ্গলবার সকাল ৯:০০টায় রাজধানীতে এক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। মিছিলটি রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নবাবপুর রোডে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

বিক্ষোভ মিছিল পরর্বতী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্ব শূন্য করার যে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে তারই অংশ হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর বয়োবৃদ্ধ জননেতা মকবুল আহমাদ ও সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ ৯ কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে। বর্তমান অবৈধ সরকার জনগণের কণ্ঠরোধ করে অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দকে একের পর এক গ্রেফতার করছে। দেশে আজ গণতন্ত্র ও আইনের শাসন বলতে কোন কিছুই নেই। সরকার বছরের পর বছর ধরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস সহ দেশের অন্যান্য সকল অফিস বন্ধ করে রেখেছে। ঘরোয়া বৈঠক গুলোতেও হামলা চালিয়ে গ্রেফতার ও ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রদান করছে। সরকারের এই জুলুম নির্যাতন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য নেতৃবৃন্দ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ আরোও বলেন, জামায়াতের আমীর মকবুল আহমাদ ও সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ ৯ কেন্দ্রীয় নেতাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া না হলে এবং তাদের সাথে কোন অন্যায় আচরণ করা হলে সরকারকে এর জন্য কঠোর জবাবদিহী করতে হবে।

বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন- মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য শামসুর রহমান, কামাল হোসেন, মহানগরী শূরা সদস্য আমিনুর রহমান, হাফিজুর রহমান, মতিউর রহমান, মহিবুল্লাহ ফরিদ, আবু আব্দুল্লাহ, মাহবুবুর রহমান, বাহার উদ্দিন ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক খালিদ মাহমুদ, ঢাকা মহানগরী পূর্বের সভাপতি ছাত্রনেতা সোহেল রানা মিঠু, ঢাকা মহানগরী পূর্বের সেক্রেটারি ছাত্রনেতা তোফাজ্জল হোসেন, শিবির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সেক্রেটারি তারিক মাসুম, জামায়াত মতিঝিল থানা সেক্রেটারি মুতাসিম বিল্লাহ, খিলগাঁও থানা সেক্রেটারি মাহমুদ হাসান, রমনা দক্ষিণ থানা সেক্রেটারি আব্দুস সাত্তার সুমন প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।

চট্টগ্রাম মহানগরীঃ

আমীরে জামায়াতসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। নগরীর চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা জনাব খালেদুল আনোয়ার, একরামুল হক, শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, মোজাহিদুল ইসলাম, ছাত্রনেতা আনোয়ার হোসেন, জহিরুল ইসলাম, সরওয়ার আলম ও আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাকিব প্রমুখ।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমীরে জামায়াতসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া না হলে সারাদেশ থেকে চট্টগ্রাম নগরীকে অচল করে দেয়া হবে। আর এই উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সরকার কোনভাবেই দায় এড়াতে পারবে না। 

সিলেট মহানগরীঃ 

সিলেট মহানগর জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেছেন, অবৈধ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলাদেশের সবুজ ভু-খন্ডে ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ বিনির্মানের প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলা জামায়াত ইসলামীকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য পরিকল্পিতভাবে একের পর এক শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় বিচারের নামে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় জামায়াতের আমীর মাওলানা মকবুল আহমদ, সেক্রেটারী জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পারওয়ার সহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর পরিনতি অবৈধ সরকারের জন্য মঙ্গলজনক হবেনা। বিচারের নামে অবিচার চালিয়ে ফাসি দিয়ে জামায়াতের অগ্রযাত্রা দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি, শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে আটক করে জামায়াতের অগ্রগতি স্তব্ধ করা যাবে না ইনশাআল্লাহ। অবিলম্বে আমীরে জামায়াতসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতৃবৃন্দকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার জামায়াত কেন্দ্র ঘোষিত দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসুচীর অংশ হিসেবে আমীরে জামায়াত মকবুল আহমদ, সেক্রেটারী জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পারোয়ার সহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সিলেট মহানগর জামায়াত। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত কথা বলেন।

বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য দেন- সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা সোহেল আহমদ, সহকারী সেক্রেটারী মো: শাহজাহান আলী, জামায়াত নেতা মুফতী আলী হায়দার, মশাহিদ আহমদ, মু. আজিজুল ইসলাম, চৌধুরী আব্দুল বাছিত নাহির ও ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সেক্রেটারী নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

নেতৃবৃন্দ বলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক, আইনানুগ রাজনৈতিক দল। জামায়াতে ইসলামী দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান অনুযায়ী তার দলীয় কর্মসূচী পরিচালনায় করে আসছে। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে দলের ঘরোয়া বৈঠক চলাকালে পুলিশ অন্যায়ভাবে দলের আমীরসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের ঘটনায় জাতি বিস্মিত। সরকারের এ অন্যায় ন্যক্কারজনক ভূমিকার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। জাতি যখন একটি অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের জন্য স্বোচ্ছার হচ্ছে সেই মুহুর্তে দেশের সর্ব বৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের মাধ্যমে দেশে ধ্বংসপ্রায় গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হলো। অবিলম্বে আমীরে জামায়াত-সেক্রেটারী জেনারেল সহ আটক সকল নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিতে হবে।

এছাড়াও, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, নারায়াণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নরসিংদী, পাবনা, নীলফামারী, দিনাজপুর, মানিকগঞ্জ, যশোর, বগুড়া, সুনামগঞ্জ, মৌলবীবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, চাদপুর, লক্ষ্মীপুর, চাপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের আরো বিভিন্ন জায়গায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ পালন করেছে জামায়াত।