১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ৮:৪৪

সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্ত

বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মকবুল আহমাদের সভাপতিত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক বৈঠকে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সম্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করে যে, “বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে বিগত ১০ বছরে কোন নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বর্তমান ক্ষমতাসীন কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করবে না।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে সমঝোতা করে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার যে ব্যবস্থা করে তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থার কবর রচিত হয়েছে।

জাতি গত ১০টি বছর যাবত প্রত্যক্ষ করে আসছে যে, বর্তমান সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একটি ভোটারবিহীন ব্যালট ডাকাতির প্রহসনের নির্বাচনের নাটক অনুষ্ঠিত হয়। যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার আশঙ্কায় জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলো কেউই অংশগ্রহণ করেনি। জনগণ বিরোধী দলের ডাকে সাড়া দিয়ে এ নির্বাচন বয়কট করে। নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া আর কোন প্রার্থী ছিল না।

অবশিষ্ট আসনগুলোতে শতকরা ৫ ভাগ ভোটারও ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যায়নি। নির্বাচনের নামে এই প্রহসন সারা দুনিয়ায় নজিরবিহীন। প্রবল সমালোচনার মুখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। দ্রুতই আর একটি নির্বাচন হবে।’ কিন্তু ক্ষমতার মোহে তিনি তার ঘোষণা থেকে সরে আসেন এবং জোর করে ক্ষমতা ধরে রেখে দলীয়করণ আরও পাকাপোক্ত করেন।

পরবর্তী সময়ে এই ভোটারবিহীন সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য নির্বাচনে বিরোধীদলগুলো অংশগ্রহণ করলেও কোন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। সেই নির্বাচনগুলোতে ভোট ডাকাতির মোকাবেলা করে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার নানা ছলছুঁতায় তাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে জেলখানায় আটক রেখে অনেককেই বারবার বরখাস্ত করেছে। শুধু তাই নয়, অনেককে গুমও করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার এবং তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গালভরা প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে বিরোধীদলগুলো গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের দ্বারা নজিরবিহীনভাবে প্রতারিত হয়।

ক্ষমতাসীন কর্তৃত্ববাদী সরকার নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার পরিবর্তে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্ব থেকেই বিরোধী দলগুলোর উপর জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়। সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত গায়েবি মামলা দিয়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে জেলে আবদ্ধ করে রাখে। অনেককে গুম করে বিরোধী দলগুলোকে মাঠ থেকে বিতাড়িত করে দেয়।

বিরোধী দলীয় জোটের ধানের শীষ প্রতীকের ১৬ জন প্রার্থীকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়, অনেককে গুলি করে আহত করে এবং গুম করে। সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মী এবং নির্বাচনী এজেন্টদেরকে ব্যাপকভাবে গ্রেফতার করে। এহেন পরিস্থিতিতে ২৯ ডিসেম্বর রাতে সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অবৈধভাবে ব্যবহার করে সরকারের মনোনীত প্রার্থীদের নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে এবং ভোটের দিন বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদান করে।

এভাবে একতরফা নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ করে আওয়ামী লীগ আবারও জোর করে ক্ষমতায় বসে। বর্তমান সরকারের ১০ বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হচ্ছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে কখনই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব নয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১, ’৯৬ ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন তিনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। তাতে জনগণ ভোট দিতে পেরেছে এবং সে নির্বাচন তিনটি দেশে-বিদেশে সকলের নিকট প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে দাবি জানিয়ে আসছি তা আবারও সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।

এমতাবস্থায় জামায়াতে ইসলামী বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমাদের দাবি অব্যাহত থাকবে এবং একটি সুদৃঢ় ও কার্যকর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ। দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সকল অন্যায়-জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার এবং সচেতন হওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।”