৩০ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বৈঠকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক বৈঠক সংগঠনের আমীর ডা: শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয় যে, “বর্তমান সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট ও ব্যাপকভাবে চড়া সুদে বিদেশী ঋণ নিয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উচ্চাভিলাষী কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের গোটা অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। দেশের অর্থনীতির এ দুরবস্থায় দেশবাসী সকলেই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, দেশের অর্থনীতির উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলছে আশঙ্কাজনকভাবে। শেয়ার বাজার ধ্বংস, রিজার্ভ কমে ১৩ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। রফতানিও কমেছে। বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্স কমেছে এবং স্বর্ণের দাম বাড়ছে। ঘুষ-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাত, বিদেশে অর্থ পাচার বাড়ছে ব্যাপকভাবে। ডলারের দাম বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। খোলা বাজারে প্রতি ডলার ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে টাকা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেগুলো কোনোভাবে টিকে আছে। চারিদিকে শুধু নেই আর নেই।

গত ৭ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীগণ ও বর্তমানে অনুষ্ঠিত প্রহসনের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচন কমিশনে তাদের সম্পদের যে হিসাব জমা দিয়েছে তাতে দেখা যায় একেকজন নেতার সম্পদ বেড়েছে একশত থেকে হাজার গুণ পর্যন্ত। এ থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে, সরকার ও সরকার দলের নেতাদের লুটপাট ও দুর্নীতির কারণেই দেশের অর্থনীতির এ বিপর্যস্ত পরিস্থিতি। বর্তমান সরকার ঋণের ভারে জর্জরিত। দেশের প্রতিটি নবজাতক ১ লক্ষ টাকার ঋণ মাথায় নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। সরকারকে বছরে বিদেশী ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে প্রায় সোয়া লক্ষ কোটি টাকা। বর্তমান সরকার ঋণ নিয়ে সে টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করছে। জনগণের আশঙ্কা সরকার ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়েছে তা পরিশোধ করতে পারবে না।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা মনে করে, ব্যাংকিং খাতে লেনদেনে ছন্দ পতন ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন কমেছে ১ লক্ষ ১১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায় যে, ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের লেনদেনে ছন্দ পতন ঘটেছে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে। বৈদেশিক বাণিজ্য বিশেষ করে আমদানি, রফতানি ও রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটা পড়েছে। এসব ব্যাংকে গত জানুয়ারি মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। অথচ ফেব্রুয়ারিতে এসেছে মাত্র ৯ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। একটি জাতীয় দৈনিকে ৩০ মে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে আসা বিদেশী বিনিয়োগের ৭০% চলে গেছে ভারতে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করছে যে, বর্তমান সরকার ও সরকারি কর্মকর্তাদের লুটপাট ও অদক্ষতা-অযোগ্যতার কারণে দেশের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে গিয়েছে।

সরকারের লুটপাট, ঘুষ-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে অর্থ পাচার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিস শূরা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।”