২৬ মে ২০১৭, শুক্রবার, ১১:১২

অভিযোগ স্থানীয় কাউন্সিলর ও পুলিশের বিরুদ্ধে

রাতের আঁধারে মতিঝিলে ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি দখল

রাজধানীর মতিঝিলের আরামবাগ এলাকায় রাতের আঁধারে প্রায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার মধ্যরাতে এ ঘটনার সময় 'আফতাবুন্নেছা প্লাজা' নামের বাণিজ্যিক ভবনটির ছাদ ভেঙে ফেলা হয়। ভবনের দোকান মালিকদের অভিযোগ, জাল দলিলের মাধ্যমে সুজা উদ্দিন সুজা নামে এক ব্যক্তি কিছু দিন ধরে ভবনটি দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এ নিয়ে আদালতে চলমান মামলা নিষ্পত্তির আগেই তার লোকজন জোর করে তিনতলা ভবনটির দখল নেয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় কাউন্সিলর ও মতিঝিল থানা পুলিশ দখলদারদের সহায়তা করেছে বলেও দাবি ব্যবসায়ীদের।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ সমকালকে বলেন, অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। নতুন মালিক ভবনের দখল নিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে বুঝতে পারছি না।

মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক সমকালকে বলেন, ভবনের মালিকানা নিয়ে ঝামেলা আছে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীরা একটি জিডি করেছেন। পুলিশ এ

ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। দখলে পুলিশের সহায়তার অভিযোগ সঠিক নয়।

এর আগে বুধবার রাতে ভবন ভাঙা শুরু হলেও তখন ওসি দাবি করেন, ভবন ভাঙা হচ্ছে না। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মালিকানার ঝামেলার কারণে দোকানগুলো কাউন্সিলরের জিম্মায় আছে বলেও জানান তিনি।

ভবনটির মালিক দাবিদার সুজাউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে গতকাল অনেকবার তার মোবাইল ফোনে কল করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি টিকাটুলির হাজী সালাহউদ্দিন হাসপাতাল মালিকের ছেলে ও আকিজ গ্রুপের মালিকদের একজনের জামাতা বলে জানা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, আরামবাগের ১৮৮ নম্বর ভবনের সামনে বাঁশ বেঁধে ভাঙার কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকরা। তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, ছাদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। উপস্থিত কয়েকজন জানালেন, কাউন্সিলরের নির্দেশেই ভবন ভাঙা হচ্ছে। ভবনের তৃতীয় তলায় ছিল আয়কর আইনজীবী ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কার্যালয়। গতকাল দুপুরে সেখান থেকে মালপত্র সরানো হচ্ছিল। ওই আইনজীবীর সহকারী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সমকালকে জানান, আগে না জানিয়ে বুধবার রাত ১২টার দিকে হঠাৎ ছাদ ভাঙা হয়। এতে কংক্রিট পড়ে তাদের আসবাবপত্র ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে মূল্যবান কাগজপত্র।

ভবনটির ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার সমকালকে জানান, ভবনের মালিক শামসুল আলম শ্যামলের কাছ থেকে দখলস্বত্ব কিনে প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনিসহ নয়জন ব্যবসা করে আসছেন। এর মধ্যে সুজাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি নিজেকে ভবনের মালিক দাবি করলে ব্যবসায়ীরা মূল মালিকের কাছে যান। তিনি তখন বেশ অসুস্থ। ওই অবস্থাতেই পুলিশের উপস্থিতিতে জানান, কারও কাছে তিনি জমি বিক্রি করেননি। তবে তার অসুস্থতার সুযোগে ভবনের তত্ত্বাবধায়ক আবদুস সালাম ভুয়া 'পাওয়ার অব অ্যাটর্নি' দেখিয়ে জমি বিক্রি করে বলে শুনেছেন। এরপর জমির মালিকানার বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আদালতে যান ব্যবসায়ীরা। মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত দোকান ভাড়া আদালতে জমা দেওয়ারও নির্দেশনা আসে। মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, মামলা নিষ্পত্তির আগেই এবং কোনো নোটিশ না দিয়ে বুধবার ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়। জমি যদি বিক্রিও হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে নতুন মালিককে অবশ্যই দখলস্বত্ব কিনে নেওয়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাদের পাওনা মেটাতে হবে।

ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ভবনের মূল মালিক কিছু দিন আগে মারা গেছেন। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। এ সুযোগে জাল দলিলের মাধ্যমে স্থানীয় কাউন্সিলরকে ম্যানেজ করে ভবনটি দখলে নিয়েছেন সুজা উদ্দিন সুজা। নুরুল ইসলাম বলেন, দু'দিন আগে কাউন্সিলর উপস্থিত থেকে দোকানগুলোয় তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর বুধবার তার লোকজন এসে সবাইকে বের করে দিয়ে ভবনের দখল নিয়ে ছাদ ভাঙতে শুরু করে। এ সময় মতিঝিল থানা পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা ছিল নীরব দর্শক। গতকাল কাউন্সিলর কার্যালয়ের সচিবও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

কাউন্সিলর কার্যালয়ের সচিব রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, একজন আইনজীবী ভবন থেকে তার মালপত্র নিতে চাচ্ছিলেন। তাই কাউন্সিলরের অনুরোধে তিনি সেখানে যান।

কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ দাবি করেন, বুধবার রাতে তিনি মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরেন। সেক্ষেত্রে দোকানে তালা ঝোলানো বা দখলে সহায়তার অভিযোগ অবান্তর।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা রাতে জানান, গতকাল আদালত দোকানের তালা খুলে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

http://bangla.samakal.net/2017/05/26/295778