৭ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:১৮

এখনো ভিসা হয়নি অর্ধেক হজযাত্রীর

হজের ভিসার আবেদনের সময় আজ শেষ হচ্ছে। কিন্তু এখনো প্রায় অর্ধেক হজযাত্রীর ভিসার আবেদনই করা হয়নি। আজকের মধ্যে ভিসার আবেদন না করলে তাদের হজে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চতা তৈরি হতে পারে। এ দিকে আগামী ৯ মে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। এর আগের দিন আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছরের হজ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি সরকার বাংলাদেশকে এবার এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী যাওয়ার সুযোগ দিলেও সে কোটা পূরণ হয়নি। এবার হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৮৩ হাজার ২০৯ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার কোটা থাকলেও নিবন্ধন করেছেন মাত্র চার হাজার ৩১৪ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা থাকলেও নিবন্ধন করেছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন। হজের এখনো এক মাস এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও আগামী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হচ্ছে। এর আগে আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছরের হজ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। আশকোনা হজ ক্যাম্পে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তবে হজ ফ্লাইট শুরু হলেও এখনো প্রায় অর্ধেক হজযাত্রীর ভিসা হয়নি বলে জানা গেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক চিঠি থেকে জানা গেছে, এ বছর মোট ২৫৯টি বেসরকারি লিড হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রীররা হজ পালনে যাবেন। কিন্তু গত রোববার পর্যন্ত ২০৪টি এজেন্সি তাদের হাজীদের জন্য ভিসার প্রসেস শুরুই করেনি। যাতে হজযাত্রীদের হজে যাওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি করেছে। সৌদি আরবের জেদ্দার বাংলাদেশ হজ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভিসা প্রসেস করার জন্য আগে সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করা ও ই-হজ চুক্তি করতে হয়। কিন্তু বাড়ি ভাড়ার চুক্তি সম্পাদনের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশিসংখ্যক হজযাত্রীর মক্কা-মদিনায় এখনো বাড়ি ভাড়া করা হয়নি। জেদ্দার বাংলাদেশ হজ অফিসের কাউন্সিলর (হজ) মো: জহিরুল ইসলাম জানান, হজ ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য সৌদি আরব ইতঃপূর্বে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছিল। কিন্তু সে সময় বাংলাদেশের খুবই কমসংখ্যক এজেন্সি হজযাত্রীদের ভিসার আবেদন করেছিল। এরপর সৌদি আরব ই-হজ সিস্টেম বন্ধ করে দেয়। এতে বাড়ি ভাড়া চুক্তি সম্পাদনও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হজযাত্রীদের হজ করা নিয়ে বড় রকমের আশঙ্কা তৈরি হয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন দেশের আবেদনে সাড়া দিয়ে সৌদি সরকার ই-হজ সিস্টেম ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ রাখার পর আবারো চালু করে এবং ৭ মে পর্যন্ত ভিসা আবেদনের সময় বৃদ্ধি করে। এ সময় সৌদি সরকার মুচলেকাও নিয়েছিল যাতে ভবিষ্যতে আর দেরি করা না হয়। কিন্তু সময় শেষ হতে চললেও বাংলাদেশের হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া করা ও ভিসা করা এখনো শেষ হয়নি। যা খুবই হতাশাজনক। এ কারণে হজযাত্রীদের সবার হজ করা নিয়ে আবারো আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জহিরুল ইসলাম আরো জানান, এবার বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো হাজীদের সৌদি অংশের ব্যয়ের সব টাকা নিয়মানুযায়ী জেদ্দার হজ অফিসের অ্যাকাউন্ডে পাঠিয়েছে। তাদের সেই সব টাকা ইতোমধ্যে এজেন্সিগুলোর নিজস্ব আইবিএএন অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। ফলে বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন না করা ও ভিসার আবেদন না করার ব্যর্থতার দায়ভার এজেন্সিগুলোর ওপর বর্তায়। এ দিকে ২৮ হাজার ৩৩ জন হজযাত্রীর মিনার তাঁবুতে স্থান পাওয়া ও মুজদালিফায় অবস্থান নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট কেটেছে বলে জানিয়েছে জেদ্দার বাংলাদেশ হজ অফিস। এসব হাজী বাস ও ট্রেন যোগাযোগের সুবিধা সম্পন্ন মিনা তাঁবু, আরাফাতের তাঁবু এবং মুজদালিফায় খোলা আকাশে অবস্থান করতে পারবেন। তবে একটি মাত্র কোম্পানির অধীন (রিফাদ তাওয়াফা) এতসংখ্যক হজযাত্রীর সেবার দায়িত্ব দেয়ায় তা কতটা সঠিকভাবে কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. আবদুল্লাহ আল নাসের। তিনি বলেন, গত বছর একটি কোম্পানির অধীনে পাঁচ হাজার হাজী থাকার পরও সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেখানে এবার ২৮ হাজার হাজীর সঠিকভাবে সেবা করা কঠিনতর হতে পারে।

ঢাকার আশকোনা হজ অফিসের পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, হজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে হজ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। এরপর ৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। আর ভিসা নিয়ে এখনো যে সঙ্কট রয়েছে, তা-ও কেটে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/833147