২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ১২:০৭

বিটিসিএল’র প্রকল্পে ব্যয় বাড়ে, শেষ হয় না কাজ

সময় মেনে এগোচ্ছে না বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো। সংস্থাটির বেশ কয়েকটি প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বার বার মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হলেও প্রকল্পগুলো গতি পায় না। ২০১৭ সালের অক্টোবরে অনুমোদন পাওয়া ‘ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ’ প্রকল্পটির মেয়াদ দুই দফায় তিন বছর বাড়ানো হয়েছে। তারপরও শেষ হয়নি কাজ। এজন্য আরও ১ বছর বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনে আবেদন করেছে বিটিসিএল। এদিকে মেয়াদ বাড়ার সঙ্গে প্রকল্পটির ব্যয়ও ২৮ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। ২ হাজার ৫৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার প্রকল্পটি ব্যয় বেড়ে ৩ হাজার ৩১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বিটিসিএল ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) নেটওয়ার্ক উন্নতকরণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পটির আড়াই বছর আগে অনুমোদন পেলেও অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর ২০২১ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ২৫ শতাংশ। ঢিমেতালে চলছে প্রতিষ্ঠানটির অন্য প্রকল্পগুলোও।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আইএমইডি সূত্র বলছে, ২০১৯ সালে শুরু হওয়া ডিজিটাল কানেকটিভিটি শক্তিশালীকরণে সুইচিং ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হতে বাকি আর মাত্র সাড়ে ৪ মাস। কিন্তু প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। আইএমইডি বলছে, নির্ধারিত সময়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এই প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য। এদিকে চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৫০ শতাংশ। আর চলতি অর্থ বছরে এডিপিতে বরাদ্দের ৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে। ৫-জি উপযোগীকরণে বিটিসিএল’র অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। কিন্তু প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রকল্পের মেয়াদ বাকি আছে মাত্র ৮ মাস। কিন্তু কাজ বাকি আছে ৮৪ শতাংশ।
ওদিকে ভিশন-২০২১ এর আওতায় টেলিকম বিষয়ক উদ্দেশ্য সাধনের মাধ্যমে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়ন, নিরবচ্ছিন্ন, গ্রাহকবান্ধব ও সুলভ টেলিযোগাযোগ সেবা সম্প্রসারণ, ব্রডব্যান্ড সুবিধা সম্প্রসারণ এবং তথ্য ও যোগাযোগ সম্প্রসারণে সহায়তা প্রদান করতে ২০১৭ সালের অক্টোবরে অনুমোদন পায় বিটিসিএলের বাস্তবায়নাধীন ‘ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ’ প্রকল্প। প্রথমে প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতেও কাজ শেষ না হওয়ায় আরও ১ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু তাতেও কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। এজন্য আরও ১ বছর মেয়াদ বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনে আবেদন করেছে বিটিসিএল। অর্থাৎ প্রকল্পটির মেয়াদ ১৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে প্রকল্প গ্রহণ করার পর প্রকল্পটির ব্যয়ও ২৮ দশমিক ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২ হাজার ৫৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার প্রকল্পটি ব্যয় বেড়ে ৩ হাজার ৩১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আইএমইডি’র এক কর্মকর্তা জানান, ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের গত অর্থবছরের এডিপিতে জিওবি খাতে ২০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটি শেষ করতে হলে জিওবি খাতে মোট প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ ইতিমধ্যে প্রদত্ত বরাদ্দ ছাড়াও আরও প্রায় ২৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন। ফলে প্রকল্পের অনুকূলে চলতি অর্থবছরের এডিপি বরাদ্দে অর্থের যথেষ্ট স্বল্পতা রয়েছে। আর বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড কর্তৃক অপ্টিক্যাল ফাইবার ও ডাক্ট সরবরাহে অপারগতার কারণে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া বিটিসিএল’র চলমান অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করতে সময়ের প্রয়োজন হবে। ফলে, প্রকল্প বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জসমূহ বিবেচনায় ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় ৩ বছর বাড়ানো হয়েছে। এডিপি বরাদ্দে অর্থ স্বল্পতার কারণে মেয়াদ বেড়েছে। তবে বিটিসিএলের অন্য প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিও কম।

https://mzamin.com/news.php?news=99028