২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ৯:০৬

পদ্মায় নাব্য সংকটে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি

এক সপ্তাহ ধরে আটকা পাথরবাহী জাহাজ

নদীপথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি চালু হয়েছে সুলতানগঞ্জ-ময়া আন্তর্জাতিক নৌরুট। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ ঘাটে ওইদিন আনুষ্ঠানিকভাবে এই নৌরুটের উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। পদ্মার ওপারে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা থানার ময়ায় একইদিন রুটটির উদ্বোধন করেন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। উদ্বোধনের সময় পদ্মার এই নৌরুটটিকে সম্ভাবনাময় নৌবাণিজ্য পথ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে উদ্বোধনের মাত্র চারদিনের মাথায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে পদ্মায় নাব্য সংকটে এই নৌপথে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত পানিপ্রবাহ না থাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে নদীতে আটকা পড়ে আছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী পাথরবোঝাই জাহাজ ‘এমভি আতিয়া’। ভারত থেকে আমদানি করা প্রায় দুইশ টন পাথর নিয়ে ওইদিন সকাল ১০টায় ময়া নদীবন্দর ছেড়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরে আসার কথা ছিল জাহাজটির। কিন্তু সুলতানগঞ্জ নৌঘাট থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাকিমপুরে পদ্মার চরে আটকা পড়েছে এমভি আতিয়া। এতে বিপাকে পড়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। আগ্রহী অন্য আমদানিকারকরাও আর এলসি খুলছেন না।

অন্যদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মায় পানির গভীরতা কম থাকায় জাহাজে কিছুটা কম পণ্য বোঝাই করার জন্য পূর্ব নির্দেশনা ছিল। কিন্তু আমদানিকারক ও জাহাজ পরিচালনার সঙ্গে যুক্তরা সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই করেছেন। আর ঠিক এ কারণেই জাহাজটি পদ্মা নদীর হাকিমপুর চ্যানেলের একটি চরে আটকা পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেঘনা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ১ হাজার ১০০ টন ভারতীয় পাকুড় পাথর আমদানির জন্য এলসি খোলেন মনিরুজ্জামান নামে একজন আমদানিকারক। প্রথম চালান হিসেবে ১৮৩ টন পাথর নিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদের ময়া নৌবন্দর থেকে এমভি আতিয়া রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ নৌ-বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। কিন্তু সুলতানগঞ্জ নৌঘাট থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের পর পদ্মার হাকিমপুর চরে এসে জাহাজটি আটকা পড়ে। নাব্য সংকটের কারণে জাহাজটি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুলতানগঞ্জ বন্দরে ভিড়তে পারেনি। গত কয়েকদিনে জাহাজটি উদ্ধারও করা হয়নি। হাকিমপুর চ্যানেলেই আটকা পড়ে আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথে মালবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য কমপক্ষে সাত ফুট গভীরতায় পানির প্রয়োজন। কিন্তু গেল কয়েকদিনে হঠাৎ করেই পদ্মার পানি কমে গেছে। ফলে এ মুহূর্তে হাকিমপুর চ্যানেলে পানির গভীরতা আছে মাত্র সাড়ে চার ফুট। আটকেপড়া জাহাজের পাথর খালাসের মাধ্যমে ছোট নৌকায় করে আনার জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি সোনামসজিদ স্থলবন্দরের উপ-কাস্টমস কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেন আমদানিকারক মনিরুজ্জামান। তবে এ পর্যন্ত কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দিক থেকে কোনো সাড়া মেলেনি বলে জানান তিনি। ফলে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

জানতে চাইলে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের কাস্টমস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি-পোর্ট) নূর উদ্দিন মিলন বলেন, পণ্যবাহী জাহাজ লোড-আনলোডের সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। রাজশাহীর কাস্টমস কমিশনারের কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহী অঞ্চলের অন্য আমদানিকারকরা বলছেন, এই নৌবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানিতে সড়ক পথের চেয়ে সময় অনেক কম লাগে। একজন ব্যবসায়ী এলসি খোলার পরের দিনই এই নৌবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি করতে পারেন। সেই সঙ্গে সাশ্রয় হচ্ছে প্রায় ১০০ কিলোমিটার সড়ক পথের পরিবহণ খরচও। দেশে ভারতীয় পাথরের চাহিদা থাকায় ব্যবসায়ীরা এই রুটের দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু পদ্মায় নাব্য সংকট থাকলে এই রুট থেকে আমদানিকারকরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন। এজন্য নাব্য ঠিক রাখতে সরকারের উদ্যোগ জরুরি। প্রয়োজনে ড্রেজিং করে পদ্মার এই চ্যানেলটিতে নাব্য স্বাভাবিক করা দরকার।

https://www.jugantor.com/todays-paper/city/777385