২৮ জানুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ১১:৪৯

সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫২৪ জন নিহত

২০২৩ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ হাজার ৯১১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫২৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১১ হাজার ৪০৭ জন। গতকাল ধানমণ্ডিস্থ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে ২০২৩ সালের সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও পর্যালোচনা বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান- সংগঠনটির চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এআই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এবং কানাডা রিসার্চ ইন্টারন্যাশনালের যৌথভাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে ড. মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে নারী ৯৭৪ জন, শিশু ১ হাজার ১২৮। ২ হাজার ৫৩২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৪৮৭ জন নিহত হয়েছেন। যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ। দুর্ঘটনায় পথচারী নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪৫২ জন, যা মোট নিহতের ২২ দশমিক ২৫ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৪২ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এছাড়া ২৭৪ জন বাসযাত্রী, ৩৮৪ জন ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী, প্রাইভেটকার- মাইক্রোবাস-এম্বুলেন্স-জিপ যাত্রী ২২৯ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-টেম্পো-লেগুনা) ১২০৯ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-চান্দের গাড়ি-মাহিন্দ্র-টমটম) ২৯৬ জন এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১৯৩ জন নিহত হয়েছেন। মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে- দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৩৭৩টি মহাসড়কে, ২ হাজার ৮৮৭ টি আঞ্চলিক সড়কে, ৯শ’ ৯৪ টি গ্রামীণ সড়কে, ৫শ’ ৮৩ টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৭৪ টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

এছাড়াও বিদায়ী বছরে ২৮৭ টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন নিহত এবং ২৯৬ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে ১০৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত, ৭২ জন আহত এবং ৪৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১ হাজার ৯৬৭ টি দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৬৯৪ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৩৪৭টি দুর্ঘটনায় ৩৮৮ জন নিহত হয়েছেন।

মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে মোট মোটরযানের ৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেল চালকদের বিরাট অংশ কিশোর ও যুবক। এদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা এবং না মানার প্রবণতা প্রবল। দেশে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় কিশোর-যুবকরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং অন্যদেরকে আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী নিহতের ঘটনাও বাড়ছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার একটি ব্যাপক অংশ ঘটছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ ও বাসের ধাক্কা, চাপা এবং মুখোমুখি সংঘর্ষে। এসব দ্রুত গতির যানবাহন চালকদের অধিকাংশই অসুস্থ ও অদক্ষ। এদের বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানোর কারণে যারা সতর্কভাবে মোটরসাইকেল চালান তারাও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। মোটরসাইকেল ৪ চাকার যানবাহনের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন শিশুবান্ধব না হওয়া এবং সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে শিশুদের মধ্যে সচেতনতার অভাব। পাশিপাশি পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ না দেয়া, অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক কর্তৃক যানবাহন চালানো বড় কারণ।

সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১০টি সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি। সুপারিশগুলো হলো- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে। চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে। বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে। পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে। গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে। টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

https://mzamin.com/news.php?news=95169