২৫ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৩:১৬

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

১৭.১ শতাংশ কৃষকের বদলে গেছে চাষাবাদের ধরন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চর, হাওর, পাহাড় ও উপকূলীয় এলাকায় ১৭.১ শতাংশ কৃষকের চাষাবাদের ধরন বদলে গেছে। প্রধানত চারা বা বীজ ও সারের ব্যবহার, ফসল কাটার সময় ও বীজ সংরক্ষণে এই বদল এসেছে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার সকালে গবেষণা ফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়।

সুইডেন দূতাবাসের সহায়তায় এমজেএফ চার বছরব্যাপী (২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৬ সালের আগস্ট) ‘কমিউনিটিভিত্তিক জলবায়ু সহনশীলতা ও নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচি (ক্রিয়া)’ নামের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির আওতায় ১৪টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জেলার ২৮টি উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং বিশেষ করে নারী ও মেয়ে শিশুদের যেকোনো প্রয়োজনে সরকারি সংস্থাগুলো কিভাবে সাড়া দেয়, তা মূল্যায়নের জন্য অ্যাসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এআইআরডি) লিমিটেডের সহযোগিতায় এই বেসলাইন জরিপ পরিচালিত হয়।

জরিপে ৩৫৩ জন পুরুষ, ৬৫৭ জন নারী ও ১২ জন হিজড়া অংশ নেন। কৃষির সঙ্গে জড়িত ১৭.১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানান, কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাব পড়েছে।

প্রভাব মোকাবেলায় তাঁরা চাষাবাদের ধরন বদলে ফেলেছেন। যেমন—উচ্চ ফলনশীল জাতের চারা/বীজ ব্যবহার করছেন, ফসল কাটার সময় বদলে ফেলছেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বীজ সংরক্ষণ করছেন, জমিতে দিচ্ছেন কেঁচো সার ও জৈব সার।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৫.৭ শতাংশ বিবাহিত। তাঁদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, পুরুষদের বিয়ের গড় বয়স ২৬ ও নারীদের বয়স ১৬ বছর।

গুণগত বিশ্লেষণ থেকে উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্য ও সামাজিক রীতি-নীতি মেয়েদের কম বয়সে বিয়ের মূল কারণ।

জরিপে আরো উঠে এসেছে, অংশগ্রহণকারীদের ৩০.৭২ শতাংশ (২২৭ জন নারী, ৮৩ জন পুরুষ ও পাঁচজন হিজড়া) গত এক বছরে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার (শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন) শিকার হয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ জমা দিয়েছেন ১৫.৬ শতাংশ। চর এলাকায় অভিযোগ করার হার সর্বোচ্চ এবং পাহাড়ি এলাকায় সহিংসতার শিকার হলেও কেউ অভিযোগ করেননি।
গুণগত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গ্রামীণ নারীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা ও করণীয় বিষয়ে ঘাটতি আছে।

তাঁরা সহিংসতার শিকার হলে সামাজিক অপবাদের ভয়ে ঘটনাগুলো প্রকাশ করেন না। অনেকেই মনে করেন, এ ধরনের সহিংসতা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়।

ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লুবনা ইয়াসমীন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এখন একটা বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশের মতো দুর্যোগপ্রবণ দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বড় ধরনের প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমাদের মন্ত্রণালয় দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেমন—জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা, ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি), মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান। জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে আমরা আমাদের পরিকল্পনার মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিজ্ঞা করেছি।’

যুগ্ম সচিব বলেন, ‘এগুলো খুবই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। এগুলো বাস্তবায়নে আমাদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। যেমন—২৭ বছর মেয়াদি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আমাদের লাগবে ২৩০ মিলিয়ন ডলার, মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যানে লাগবে ৮০ মিলিয়ন ডলার, এনডিসিতে লাগবে ১২৭ মিলিয়ন ডলার। অর্থাত্ গড়ে প্রতিবছর প্রয়োজন ১১ মিলিয়ন ডলার। এর জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাহায্য নিতে হচ্ছে এবং তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে খুবই আগ্রহী। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের উন্নয়ন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে, যা অন্যদের আগ্রহী করে তুলছে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যেসব উন্নয়ন সংস্থা মাঠ পর্যায়ে এসব বিষয়ে কাজ করছে, তারা যদি বাধাগুলো শনাক্ত করে জানায় তাহলে আমাদের জন্য নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।’

গবেষণাসংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তারা জলবায়ুর প্রভাবে তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় কী ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে এবং এ ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরেন।

সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘আমাদের এই বেসলাইন সার্ভেতে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টিও উঠে এসেছে। এই প্রসঙ্গে আমরা বারবার হোঁচট খাই। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বেশ কিছু বিষয় একসঙ্গে কাজ করতে হয়। যেমন—আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়ন, নারীদের দক্ষতা বাড়ানো, তার অবদান স্বীকার করা। এভাবেই নারীর অবস্থা ও অবস্থানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে।’

https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/01/25/1357754