২৫ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৩:০৯

মানবাধিকার সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের

মানবাধিকার সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়ে বড় ধরনের সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলেছেন, বর্তমান সরকার টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় এসেছে। দেশটিতে বিদ্যমান দমনমূলক পরিস্থিতি থেকে সরে এসে অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি ও সংলাপের পথে ফিরতে ওই সংস্কার করতে হবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) ওয়েবসাইটে বুধবার প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর আক্রমণ, হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানোর ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।’

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দলের আনুমানিক ২৫ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের খবর জানা যাচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় দেশটিতে ৫৬ জন নিহত হয়েছেন। রাজনৈতিক বন্দীদের নির্যাতন ও চিকিৎসাসেবা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছেন। দুর্বৃত্তরা অগ্নিকাণ্ড ও সহিংসতার ঘটনাও ঘটিয়েছে। কিন্তু দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব ঘটনা নিয়ে স্বাধীনভাবে তদন্ত করা হয়নি।

নির্বাচনব্যবস্থার ওপর আস্থা না থাকা প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জন করার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের চাপ দেন বলে অভিযোগ আছে। ভোট না দিলে হামলা ও সামাজিক সুরক্ষার আওতায় পাওয়া সরকারি আর্থিক সুবিধা বাতিলেরও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।Ads 


জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘এ নিয়ে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো অবিলম্বে স্বাধীনভাবে তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।’

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসনের বিপজ্জনক অবনতি এবং একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দেশটির মানুষের আস্থা নষ্ট হতে দেখে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এতে দেশটির ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি একই সঙ্গে এতে করে বাংলাদেশের সার্বিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়বে।’

মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, ‘নয়া কর্মপরিকল্পনায় মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার এনে মুক্তভাবে জনগণের মৌলিক অধিকার চর্চা ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা ফেরাতে উদ্যোগী হতে আমরা সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।’

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়ে মতপ্রকাশ, সংগঠন করা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নিশ্চয়তা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এসব আহ্বান জানানোর পাশাপাশি আরও বলেছেন, ‘মানবাধিকার সুরক্ষা ও আইনের শাসন জোরদার করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা এবং এসব বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’

বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা হলেন: শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠন করার স্বাধীনতাবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ক্লেমেন্ট নায়ালেটসোসি ভোল; বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার মার্গারেট স্যাটারথওয়েট; মানবাধিকার সুরক্ষা পরিস্থিতিবিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ম্যারি ললোর; মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিকাশ ও সুরক্ষাবিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান; চেয়ার-র‍্যাপোর্টিয়ার প্রিয় গোপালান; ভাইস চেয়ার ম্যাথিউ গিলেট ও গানা ইয়ুদকিভস্কা; এবং নির্বিচারে আটকবিষয়ক ওয়ার্কিং কমিটির মিরিয়াম এস্ত্রাদা-ক্যস্তিলো ও মুম্বা মালিলা।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/3vglhvoeho