২৩ জানুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ৯:০৯

প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রস্তাব

বৃহস্পতিবার পিইসি সভায় উঠছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

 

প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য আসছে পুষ্টিকর খাদ্য কর্মসূচি। এজন্য হাতে নেওয়া হচ্ছে ‘গভর্নমেন্ট স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম (প্রথম পর্ব)’। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪ হাজার ৭৫৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪ হাজার ৬৯৫ কোটি ১৫ লাখ এবং বৈদেশিক অনুদান থেকে ৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। কিন্তু এর আগে ‘স্কুল মিল’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব বাতিলের পর নতুন এ প্রস্তাবের পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন খাতের ব্যয়সহ নানা বিষয়ে ব্যাখ্যাও চাইবে সংস্থাটি। আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব নিয়ে প্রশ্ন ও ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকী। জানতে চাইলে সোমবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি সাধারণত যেটি করি সেটি হলো পিইসি সভার আগের দিন একটি ব্রিফিং নিই। সেখানে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও সেটি করা হবে। আমি তখন দেখব আগের বাতিল হওয়া প্রস্তাবের সঙ্গে এটির কী ধরনের পার্থক্য আছে। সেই সঙ্গে কোথায় কোথায় প্রশ্ন আছে সেগুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখব। পিইসি সভা করাই হয় এসব খুঁটিনাটি বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্যই।

সূত্র জানায়, এর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ১৭ হাজার ২৯০ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত ওই ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয় ২০২১ সালের ১ জুন। সেদিন এটি অনুমোদন না করে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়ার পরিবর্তে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তবসম্মত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে বলে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।

আরও জানা গেছে, পিইসি সভায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার বিতরণ ব্যবস্থাপনা ব্যয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট তথ্য সম্পর্কে সভায় জানতে চাওয়া হবে। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় এরই মধ্যে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি (তৃতীয় সংশোধিত) বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে সমাপ্ত করা প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত এবং এই প্রকল্পের আওতায় খাদ্য সংগ্রহ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনার তুলনামূলক বিবরণী সম্পর্কে সভায় জানতে চাওয়া হবে।

এছাড়া উল্লিখিত প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ১৫০টি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যাসহ শিক্ষার্থীরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে তা জানতে চাওয়া হবে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ডব্লিউএফপি অনুদান হিসাবে ৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা স্কুল ফিডিং কার্যক্রম খাতে ব্যয় করা হবে। মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার তালিকায় প্রকল্পটি কী অবস্থানে রয়েছে তা জানা দরকার।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, গত বছরের ৩০ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রকল্পের যাচাই কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গুণগত মান বজায় রেখে রান্না করা খাবার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ অসুবিধাজনক তাই প্রকল্প থেকে এ মডালিটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে এবারের প্রকল্পে রান্না করা খাবার বিতরণের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হবে।

প্রকল্প প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে একটি জিপ, ৩টি মাইক্রোবাস এবং ১৫০টি মোটরসাইকেল ক্রয় বাবদ ৫ কোটি ১১ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এর আগে সমাপ্ত দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি প্রকল্পটিতে ২টি যানবাহনসহ অন্যান্য অফিস সরঞ্জামাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই অফিস সরঞ্জামাদিও সর্বশেষ কী অবস্থায় আছে তাসহ প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় এগুলো অন্তর্ভুক্তির কারণ এবং ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি ও যৌক্তিকতা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হবে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে খাদ্যসামগ্রী বা স্কুল ফিডিং খাতে মোট ৪ হাজার ১৮১ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। যা মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৮৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এ ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি ব্যয়ভিত্তিক কার্যক্রম ও যৌক্তিকতা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হবে। প্রকল্পে জরিপ মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন খাতে দুই কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জরিপ মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশনের সার্বিক রূপরেখা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) হ্যান্ডওয়াশ দুই কোটি, সেমিনার বা ওয়ার্কশপে দুই কোটি, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনায় দুই কোটি টাকা এবং এয়ারকন্ডিশনার অঙ্গে ২৮২ কোটি ৬০ লাখ টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে। এসব ব্যয়ের ভিত্তি ও যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হবে পিইসি সভায়।

https://www.jugantor.com/index.php/todays-paper/last-page/766154