২২ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ১:০০

চট্টগ্রামে গ্যাসচালিত ইন্ডাস্ট্রি এখনো বন্ধ

 

গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সংযোগ একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুইদিনের মাথায় পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। লাইনের চাপ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম হলেও প্রায় সব বাসাবাড়ি ও রি-ফুয়েলিং স্টেশনে গ্যাস এসেছে। তবে গ্যাসচালিত ইন্ডাস্ট্রিগুলো এখনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। জানা যায়, গতকাল সকাল থেকেই অনেকটা স্বাভাবিকভাবে মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ  করা হচ্ছে। তবে মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিদ্যমান পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ তৈরি হতে সময় লাগছে। যে কারণে স্বাভাবিক সময়েও গ্যাসের চাপ অনক কম। গতকাল সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

নগরের অক্সিজেন এলাকার বাসিন্দা আয়েশা সিদ্দিকা জানান, ‘স্বাভাবিকভাবেই ৫ জন মানুষের জন্য এক কেজি ভাত রান্না করতে ২৫-৩০ মিনিট লাগে। সেখানে গতকাল দুপুরে প্রায় দ্বিগুণ সময় লেগেছে। গ্যাসের চাপ অনেক কম। এরপরও যে গ্যাস এসেছে সেটাই বড় বিষয়।’ মুরাদপুরের পেট্রোল পাম্প ফুসিলের কর্মকর্তা শাহজাহান বলেন, গতকাল রাত থেকে গ্যাস পাচ্ছি।

তবে চাপ অনেক কম। আগে একটা গাড়িতে গ্যাস দিতে ১-২ মিনিট লাগতো। আজকে ৮-১০ মিনিট সময় লাগছে। যে কারণে আমাদেরকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ড্রাইভাররাতো এসব আর বুঝতে চান না।

এদিকে আকস্মিক গ্যাস সংকটে দুইদিন ধরে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের গ্যাস নির্ভর সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পুরো চাপ আসতে একটু সময় লাগবে। বিশেষ করে সার কারখানায় পুরো চাপ আসতে প্রায় এক সপ্তাহ এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২-১ দিন লাগবে। যে কারণে বিপুল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবেন এই  কারখানাগুলো। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় আছে গ্যাস নির্ভর ৩টি বড় প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) , কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (ডিএপিএফসিএল)। এদের মধ্যে সিইউএফএল ও ডিএজিতে  গতকাল সকাল থেকে গ্যাস আসতে শুরু করলেও চাপ কম থাকায়  উৎপাদন বন্ধই রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। তবে কাফকোতে কোনো গ্যাস আসেনি। সিইউএফএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান মানবজমিনকে  বলেন, ‘গ্যাস না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেও মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস আসতে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে। গ্যাসের পুরো চাপ এখনো আসেনি। এ ছাড়া সিইউএফএল একবার বন্ধ হলে এর কারিগরি সিস্টেমের কারণে আবার চালু করে উৎপাদনে যেতে ৫-৭ দিন সময় লেগে যায়। এদিকে গ্যাস পরিস্থিতির উন্নতি হলেও হঠাৎ সৃষ্ট এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা বেশি ভাড়া নিচ্ছেন যাত্রীদের কাছ থেকে। এমনকি গ্যাসের সিলিন্ডারের দামও স্থান ভেদে ১৫০-২০০ টাকা বাড়তি নেয়া হচ্ছে।

হিলভিউ এলাকার গৃহকর্মী জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমি কয়েকটি বাসায় কাজ করি। এদের মধ্যে আগে একটিতে লাইনের গ্যাস নেই। তারা সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। এদের বাসায় শুক্রবার রাতে সিলিন্ডার শেষ হয়ে যায়। তখন তাদেরকে ১৬০০ টাকায় গ্যাস ভর্তি করতে হয়েছে। এই গ্যাসের নাকি এখনকার স্বাভাবিক দাম ১৪০০ টাকা।’ চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন)  আমিনুর রহমান গতকাল সন্ধ্যায়  মানবজমিনকে বলেন, গতকাল রাত থেকেই অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে গ্যাস সরবরাহ। আজকে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত সরবরাহ পেয়েছি। স্বাভাবিক সময়েও আমরা ঠিক এমনটা পেতাম। যে কারণে বলা যায়, এখন আর গ্যাস সংকট নেই। গ্যাসের চাপ একটু কম। তবে সেটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আর থাকবে না। তিনি বলেন, কাফকো ছাড়া বাকি কারখানগুলোতে অলরেডি গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছি। তবে যান্ত্রিক বাস্তবাতার কারণে হয়তো তারা এখনো উৎপাদনে যেতে পারেননি। আর কাফকোর বিষয়েও শীগগির সিদ্ধান্ত হবে।

প্রসঙ্গত, সিঙ্গাপুর থেকে মেরামত করে আনার পর কক্সবাজারের মহেশখালীতে সাগরে থাকা এলএনজি টার্মিনালটি গত বৃহস্পতিবার চালু করা হচ্ছিল। কিন্তু সাগরের তলদেশে পাইপলাইনে সংযোগ দেয়ার সময় যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ে। এতে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাসশূন্য হয়ে যায় পুরো চট্টগ্রাম। 

https://mzamin.com/news.php?news=94236