২২ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ১২:৫৪

গ্যাস সংকট: চট্টগ্রামে ২ দিনে গ্রাহকের গচ্চা দেড়শ কোটি টাকা

 

দুদিনের গ্যাস সংকটে চট্টগ্রামের আবাসিক গ্রাহকের পকেট থেকে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে। গ্যাস না থাকায় বিকল্প উপায়ে রান্নার কাজ সারতে গিয়ে এবং সাময়িকভাবে হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনতে গিয়ে এই টাকা খরচ হয়েছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) প্রায় ৬ লাখ গ্রাহক এই ক্ষতির শিকার হয়েছেন। 

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাব অনুযায়ী, কেজিডিসিএল’র প্রতিটি গ্রাহক বা পরিবার সংকটের দুদিনে গড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ করেছে। এতে ৬ লাখ পরিবারের গচ্চা গেছে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। সংকটকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী হাতিয়ে নিয়েছে টাকা। 

জানা যায়, ৬ লাখ ২ হাজার ৩৮৫টি সংযোগে গ্যাস সরবরাহ করে কেজিডিসিএল। এর মধ্যে সংস্থাটির আওতাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ৫টি, সার কারখানা ৪টি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ১ হাজার ১৮৭টি, কেপটিভ পাওয়ার ২০৫টি, বাণিজ্যিক সংযোগ ২ হাজার ৯১১টি, চা-বাগান ২টি, সিএনজি স্টেশন ৭০টি ও গৃহস্থালি সংযোগ রয়েছে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ১টি। কয়েক বছর ধরে কেজিডিসিএল কক্সবাজারের মহেশখালীর দুটি ভাসমান টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) গ্রাহকদের সরবরাহ করে আসছে। 

তবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে চট্টগ্রামজুড়ে হাহাকার সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে ফুয়েলিং স্টেশনগুলোর সামনে গ্যাসচালিত গাড়ির লাইন দীর্ঘ হতে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় সার কারখানাসহ বিদ্যুৎকেন্দ্র। আবাসিক গ্রাহক বিষয়টি জানতে পারে শুক্রবার সকালে। রান্নার জন্য উপায় না পেয়ে কেউ ছুটে যান সিলিন্ডারের দোকানে। কেউ বা কিনতে বাধ্য হন বৈদ্যুতিক চুলাসহ রান্নার বিভিন্ন সামগ্রী। ঝামেলা এড়াতে অনেকে নির্ভর করেন হোটেল-রেস্টুরেন্টের খাবারের ওপর। শুক্রবার রাত থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরুর কথা বলা হলেও শনিবার দুপুর পর্যন্ত একই অবস্থা ছিল। আবাসিকের চুলা জ্বলে বিকালের পর। এরই মধ্যে কেজিডিসিএল গ্রাহকের পকেট থেকে খরচ হয়ে যায় হাজার হাজার টাকা।  

নগরীর হালিশহরের শাপলা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গ্যাস লাইনের সংযোগ থাকার পরও শুক্রবার ৬ হাজার টাকায় সিলিন্ডার গ্যাস ও এলপিজি চুলা কিনতে বাধ্য হয়েছি। কেবল আমি নই; আমার ভবনের আরও চার পরিবার এলপিজি গ্যাসের চুলা কিনেছে। কেউ কেউ অনলাইনে অর্ডার করে এবং হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার সংগ্রহ করে খেয়েছে।’   

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নাজের হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট হয়েছিল। সে সময় আমরা হিসাব করে দেখেছি, প্রতিটি পরিবার দুদিনে চার হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে বাধ্য হয়েছে। কেজিডিসিএল’র গৃহস্থালি গ্রাহক সবমিলিয়ে প্রায় ২৩৮ কোটি টাকা খরচ করেছে। তখন অবশ্য একশ্রেণির ব্যবসায়ী অরাজকতা করেছিল। যা এবার হয়নি। তারপরও গ্রাহকের দেড়শ কোটি টাকার বেশি গচ্চা গেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের টিম বাজার পরিস্থিতি যাচাই করে দেখেছে, গ্যাস সংকটের কারণে একটি পরিবারকে রান্নার সমাধান করতে নানাভাবে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়েছে। এছাড়া গ্যাসচালিত গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় ভাড়া নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। বাড়তি বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে যাত্রীদের। পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতেও।’ 

এর আগে গত বছরের ১২ মে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের আশঙ্কায় কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। এর ফলে ওইদিন রাত ১১টা থেকে পাইপলাইনে এলএনজি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীসহ কেজিডিসিএল আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। দুদিন পর ১৫ মে থেকে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছিল। ওই সংকট কাজে লাগিয়ে চুলা, কেরোসিন, গ্যাস সিলিন্ডার, রাইস কুকার ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ দামে পণ্য কিনতে বাধ্য করে ক্রেতাদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। 

https://www.jugantor.com/national/others/765746