২১ জানুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ৪:১৫

বেঁধে দেওয়া সময়েও নিয়ন্ত্রণে আসেনি চালের দাম

 

চালের দাম চার দিনের মধ্যে আগের দামে ফিরিয়ে আনতে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের হুঁশিয়ারির পরও পরিস্থিতি একই আছে। গত বুধবার খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে ধান-চালের বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে এক মতবিনিময়সভায় খাদ্যমন্ত্রী এই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, চার দিনের মধ্যে আগের দামে না আনলে মজুদকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে চাল আমদানি করা হবে। কিন্তু চার দিন পরও খুচরা বাজারে এখনো বাড়তি দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর চালের বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে।

জাতীয় নির্বাচনের পর চালের দাম হুট করে বস্তাপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। গত মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে চাল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। নিয়মিত অভিযানের কারণে পাইকারি পর্যায়ে কিছুটা দাম কমেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, বস্তায় ৩০০ টাকা বাড়লেও অভিযানের কারণে কমেছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। অভিযান অব্যাহত রাখার আবেদন জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ৬৪ জেলার ডিসি-এসপিকে দৃশ্যমান অভিযানের নির্দেশ দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল বৈঠকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।

নির্দেশ অনুযায়ী, দেশের প্রতিটি উপজেলায় অভিযান চালাবে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন। ধান ও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সব জেলার ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) একসঙ্গে দৃশ্যমান অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়। মজুদদার, মিল মালিক, লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী, লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাঁরা নিয়ম ভঙ্গ করবেন, অভিযানে তাঁদের কাউকে ছাড় না দিতে বলা হয়েছে।

গত বুধবার খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে ধান-চালের বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধকল্পে মতবিনিময়সভায় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাজার মনিটরিংয়ে আমরা টিম করেছি, কন্ট্রোলরুম খুলেছি। আমাদের অভিযান চলছে।

হঠাৎ যেমন লাফিয়ে দাম বেড়েছে, তেমনি কমাতে হবে। বিশেষ করে মোটা চাল বা আমন চালের দাম কমিয়ে আনতে হবে।’

কারওয়ান বাজারে চালের পাইকারি ব্যবসায়ী ঢাকা রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. সায়েম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচনের পর মিলাররা এক লাফে বস্তাপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এখন সারা দেশে অভিযানের কারণে তাঁরা ৫০ থেকে ১০০ টাকার মতো বস্তাপ্রতি দাম কমিয়েছেন। এই কমার প্রভাব খুচরা বাজারে দেখা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশের বাজারে পর্যাপ্ত চালের সরবরাহ রয়েছে। কোনো সংকট নেই। এর পরও চালের দাম বাড়তি।’

রাজধানীর বাজারে অভিযান

চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরে শাহ আলী বাজার এবং উত্তর বাড্ডায় চালের বাজারে অভিযান পরিচালনা করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি দল।

শাহ আলী বাজারে অভিযানে শাকিল রাইস এজেন্সি, চিশতিয়া রাইস এজেন্সি, সততা রাইস এজেন্সিসসহ বেশ কিছু দোকানে অভিযান চালায় দল। এ সময় স্টক রেজিস্টার চাওয়া হয় ব্যবসায়ীদের কাছে। তবে তা দেখাতে পারেননি মালিক ও কর্মচারীরা। এ ছাড়া ক্রয় রসিদও দেখাতে পারেননি অনেকে।

এ অভিযানে দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মর্জিনা আক্তার বলেন, ‘দাম বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাজারে যথেষ্ট পরিমাণে চাল আছে, কোথাও ঘাটতি নেই। পাশাপাশি আমাদের খাদ্য ব্যবস্থাপনাটাও ভালো আছে। এর পরও অস্থিরতা করার চেষ্টা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, বেশির ভাগ ব্যবসায়ী মজুদের তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করছেন না। রেজিস্টার একনজরে দেখে আমরা বুঝতে পারব যে তাঁরা কত দিন আগে চাল সংগ্রহ করেছেন, এখানে কী পরিমাণ আছে। কিভাবে বিক্রি করছেন, সেটা পরিষ্কার হওয়ার জন্য যে রেজিস্টার মেইনটেইন করার প্রয়োজন, সেটা করছেন কি না।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বড় কম্পানিগুলো চাল মজুদ রেখেছে। তারা পণ্য দিচ্ছে না। বিভিন্ন গ্রুপ ও কম্পানিগুলো চালের দাম বাড়াচ্ছে।

উত্তর বাড্ডা এলাকায় চালের বাজারে গতকাল অভিযান চালিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ সময় অভিযানের খবর পেয়ে দোকান বন্ধ করে চলে যান বিক্রেতারা। তবে অসংগতি না থাকায় জরিমানা করা হয়নি কাউকে।

উত্তর বাড্ডা এলাকায় চালানো অভিযানে নেতৃত্ব দেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. জয়নাল আবেদিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিযান চলমান থাকবে। আজ (গতকাল) জেনে গেছে বলে বন্ধ করেছে। তবে সামনের দিনগুলোতে না জানিয়েই অভিযান চালানো হবে।’

ড. জয়নাল আবেদিন বলেন, মিলার পর্যায়ে দাম কমছে। তবে খুচরা পর্যায়ে নতুন চাল না আসায় এখনো প্রভাব পড়েনি। আমরা মনে করছি, মিলার ও খুচরা পর্যায়ে দুই দিনের মধ্যে প্রভাব পড়বে।

নওগাঁয় লাখ টাকা জরিমানা, গুদাম সিলগালা

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, অবৈধভাবে ধান মজুদ করায় নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি ও নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিকের এক লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন ধানসহ তাঁর তিনটি গুদাম সিলগালা করা  হয়েছে।

এ ছাড়া মফিজ উদ্দিন অটো রাইস মিল নামে অন্য এক চালকলে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা ও তছিরন অটোমেটিক রাইস মিলে অভিযান চালিয়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত। গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গঠিত দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত চালকলগুলোতে অভিযান চালান।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা জানান, অবৈধ মজুদবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে।

https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/01/21/1356579