২০ জানুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ১:৩৩

সর্বত্রই অর্থসঙ্কট

 

বরিশাল শহরে বসবাস করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া এবং সংসারের খরচ কুলাতে না পেরে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সম্প্রতি পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র তুলে ফেলেছেন। এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। তার ওপর ক্রমাগত সংসারের খরচ বাড়তে থাকা, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ মিলিয়ে সামাল দিতে পারছিলাম না বলেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে বাধ্য হয়েছি। তিনি জানান, এটুকু ছাড়া তার আর কোনো সঞ্চয় নেই। সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবেন এ নিয়ে চিন্তিত মিজান। রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী হাসান মাহমুদ মাস দুয়েক আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা ১০ লাখ টাকা তুলেছেন। নিজের আয়ে মায়ের চিকিৎসা আর সংসারের অন্যান্য খরচ যোগাতে না পেরে তিনি ওই সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হন। তিনি জানান, সর্বশেষ সম্বল ছিল এটা। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়াসহ সাংসারিক খরচে কুলাতে পারছিলাম না, এজন্য ভাঙাতে হয়েছে। শুধু মিজানুর রহমান বা হাসান মাহমুদই নয়; সারাদেশে সঞ্চয় ভেঙে খাওয়া মানুষের সংখ্যাটা বেশ বড়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সৃষ্ট দ্রব্যমূল্যের চাপ সামলাতে মানুষের জমানো টাকা থেকে শুরু করে সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছে মানুষ। কেউ কেউ ঋণ করে সংসারে অর্থের যোগান দিচ্ছেন। অর্থনৈতিক সংকটের কথা স্বীকার করে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

বৈশ্বিক সংকট করোনাভাইরাসের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা থমকে আছে। দেশে প্রায় দুই বছর ধরে ডলারের সঙ্কট চলছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ২০ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বর্তমানে ডলারের সে সঙ্কট চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। এমনকি সম্প্রতি ডলার সঙ্কটে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট বন্ধ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান সংস্থা ইতিহাদ এয়ারওয়েজ। টাকার সংকটে সরকার সার ও বিদ্যুৎ খাতে বড় অঙ্কের দেনার মুখে পড়েছে। আর দেনা মেটাতে বাজারে বন্ড ছাড়ছে। পাশাপাশি দেশের মেগা প্রকল্পগুলোও ডলার সঙ্কটে স্থবির হয়ে আছে। স্থবির হয়ে পড়েছে শিল্পের কাঁচামাল, জ্বালানি আমদানিসহ বৈদেশিক লেনদেন। ব্যাংকে এলসি খোলা ব্যবসায়ীদের কাছে যুদ্ধজয়ের মতো ঘটনা। সময়মতো পণ্য আমদানি করতে না পারায় অনেক ছোট ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্যাংকে জমা টাকা এবং হাতে গচ্ছিত অর্থ ব্যয় করে ফেলেছে। ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেয়ায় ব্যাংকগুলোও তারল্য সঙ্কটে ভুগছে। এতে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি মূলধারার ব্যাংকগুলোও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ধার করছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স বা ডলার আসা কমে গেছে। এই ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ২৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। অর্থাৎ সেই পরিমাণ টাকা বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো ডলার কেনায় তাদের কাছে টাকা নেই। অবশ্য শুধু মানুষের হাতে অর্থ নেই এটা নয়; সঙ্কটে পড়েছে সরকারও। অনেক সরকারি কর্মচারীর চাকরি শেষ হলেও অর্থের অভাবে পেনশন দিতে পারছে না সরকার। মাঝে আর্থিক সংকটে থাকা সরকারকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া শুরু করেছিল। তবে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত আগস্ট মাস থেকে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করেছে। সরকার এখন বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের চাহিদা পূরণ করছে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকগুলোর হাতেও টাকা কমে গেছে। পাশাপাশি অর্থের প্রবাহ বাড়াতে বন্ড ছেড়েছে সরকার। এদিকে এলএনজি ও গ্যাসের সংকটে অভ্যন্তরীণ শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেকগুলো বন্ধের পথে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও প্রতিদিন কমছে। আর সবকিছু মিলে নানামুখী সঙ্কটে দেশের মানুষের হাতে অর্থ নেই। অর্থনীতি গভীর সংকটের মুখে আছে।

মার্চে শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস। ইতোমধ্যেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে রমজাননির্ভর নিত্যপণ্য আটা, ময়দা, ডাল, ছোলা, বেসন, ব্রয়লার মুরগি, খেজুর, চিনি, চিঁড়াসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। রমজান আসতে পণ্যের দাম কোথায় ঠেকে এ নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে ব্যবসায়ীদের মাঝে। কারণ ডলার সংকটে দীর্ঘদিন থেকেই নিয়ন্ত্রিত আমদানির কারণে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি ও ঋণপত্র খুলতে না পারায় সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য এলসি জটিলতা না কাটিয়েই রমজানকেন্দ্রিক পণ্য সংকট কাটাতে বাকিতে পণ্য আমদানি করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরবরাহ বাড়াতে আসন্ন রমজান মাসে ৮ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভোজ্য তেল, ছোলা, ডাল, মটর, পিঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুর বাকিতে আমদানির সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আটটি পণ্য আমদানিতে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত নগদ মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দেশনাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণের পরও দেশে এখনো ডলারের তীব্র সংকট বিদ্যমান। পাশাপাশি রিজার্ভ কমছে অব্যাহতভাবে। ব্যাংকে ডলার সংকট। ফলে চাহিদামাফিক আমদানি করা যাচ্ছে না। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে পণ্যের মজুতের ওপর। এ কারণে রমজানকে ঘিরে এসব পণ্যের চাহিদা, মজুত ও সম্ভাব্য যোগানের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্য পণ্যের দাম। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির, নতুন করে আয়ের ক্ষেত্র তৈরি না হওয়ায় জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে মানুষ জমানো অর্থ ভেঙে খাচ্ছে। তাই মানুষের হাতে অর্থ নেই। এমনকি আগামীতে হাতে অর্থের সংস্থান হবে এ রকম উপায়ও নেই। তাই নি¤œমধ্যবিত্ত-মধ্যবিত্তরা বিপাকে আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে আর্থিক খাতের মূল সূচক মূল্যস্ফীতি, রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রাজস্ব আয়Ñ এসব সূচক নিম্নমুখী। বিদেশি ঋণের ছাড়, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই, রফতানি কিংবা প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কোনো উৎস থেকে ডলার আশা করার সুযোগও নেই। সব উৎসে চলছে ভাটার টান। অন্যদিকে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হচ্ছে আগের চেয়ে ঢের। এ ঋণে সুদের হারও এখন বেশি। একে তো ডলার আসছে কম, আবার পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি। এ দ্বিমুখী পরিস্থিতি রিজার্ভ সঙ্কটের চাপকে আরও অসহনীয় করে তুলেছে। পাশাপাশি ডলার সংকট নিয়ে এলসি জটিলতা কাটেনি। তাই অচিরেই আর্থিক খাতে সমস্যা কাটছে না। তবে দ্রুতই এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে দেশের অর্থনীতি বিপাকে পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সব সমস্যার মূলে ডলার সঙ্কট। এ কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে। এতে করে শিল্প-বাণিজ্যে সমস্যা হচ্ছে এবং কর্মসংস্থান কমছে। ডলার বাজারে অস্থিরতার কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার খরচ বেড়েছে। এখান থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় দ্রুত ডলারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। আর এজন্য বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

দেশের অর্থনীতি বর্তমানে যেসব সমস্যার মুখে পড়েছে, এর মূলে রয়েছে মার্কিন ডলারের সঙ্কট। ডলার সঙ্কট ও দর বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি ব্যয় মেটাতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এমনিতেই আমদানিতে এলসি নেই বললেই চলে। ডলার সঙ্কট এবং বাজার অস্থির হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে আমদানি আরও কমবে। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতি অর্থনীতিকে আরও বিপদে ফেলছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে জীবনযাত্রার মান ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে সীমিত আয়ের মানুষেরা। খরচ বাড়ায় সঞ্চয়ে টান পড়েছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ ঘাটতি এবং নিয়ন্ত্রিত আমদানিতে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির।

শুধু মানুষই নয়; সরকারও আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। আর্থিক সংকটে থাকা সরকারকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া শুরু করেছিল। তবে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সে পথ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরে এসেছে। এখন সরকার হাঁটছে বন্ড ছাড়ার পথে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। অবশ্য এই হিসাব পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। বাস্তবে মূল্যস্ফীতি এর থেকে অনেক বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে মানুষের নিট বিনিয়োগও ঋণাত্মক। শেষ তিন মাসে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বেড়েছে। সর্বশেষ নভেম্বরে নিট বিনিয়োগ (বিক্রি) ঋণাত্মক হয়েছে এক হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। আগের মাসেও নিট বিক্রি এক হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণাত্মক ছিল। সেপ্টেম্বরে ঋণাত্মক ছিল ১৪৭ কোটি টাকা। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্য ও সেবার দামে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে মানুষের, যার প্রভাব পড়ে সঞ্চয়ের ওপরও। বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ে যাদের সংসার চলে, তাদের অনেকে এখন সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছেন। এছাড়া নানা কড়াকড়ির কারণেও এ সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেকে। ফলে এ খাতে আশানুরূপ বিক্রি বাড়ছে না।

এদিকে সঞ্চয়পত্রেও মানুষের আগ্রহ না থাকায় টাকার সংকটে পড়া সরকার সার ও বিদ্যুৎ খাতের দেনা মেটাতে বাজারে বন্ড ছেড়েছে। এই বন্ড কিনবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বিপরীতে সুদ পাবে তারা। বন্ড হলো এক ধরনের আর্থিক পণ্য, যা বিক্রি করে সরকার ও বেসরকারি খাত দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নিতে পারে। রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় সার ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির টাকা পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। তাই এবার বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি। সার ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ সরকারের দেনা প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুতের ভর্তুকি ১৪ হাজার কোটি টাকা বকেয়া। সারে বকেয়া ১২ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় বন্ড ছাড়া হবে সারের পাওনা পরিশোধ বাবদ। এ জন্য অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অণুবিভাগ কয়েক দিন থেকেই কাজ করছে। আর বিদ্যুতের বন্ডও খুব শিগগরিই ছাড়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমদানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। তাই রাজস্ব আদায় কম। এ কারণে নগদ টাকায় ভর্তুকির দায় পরিশোধের বদলে বন্ড ছাড়তে হচ্ছে। কত বছর মেয়াদি বন্ড ছাড়া হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।

গত বুধবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধ্বের মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার তারল্য সংকটের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ডলারকে। তিনি বলেন, ডলার আসা কমে গেছে। সে কারণে বাজারে টাকা ছাড়ার পরিমাণ কমেছে। অথচ আমরা চলমান অর্থবছরসহ গত তিন অর্থবছরে বাজারে ২৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার বিক্রি করেছি। অর্থাৎ সেই পরিমাণ টাকা বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এর সমপরিমাণ টাকা কিন্তু বাজারে সঞ্চারিত করা সম্ভব হয়নি। ব্যাংকগুলো ডলার কেনায় তাদের কাছে টাকা নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক গত আগস্ট মাস থেকে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করেছে। সরকার এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের বদলে আর্থিক খাত থেকে ঋণ করছে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকগুলোর হাতে টাকা কমে যাচ্ছে। তবে এটা কাঠামোগত সমস্যা; আমরা তা মোকাবিলার চেষ্টা করছি। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

https://dailyinqilab.com/national/article/632839