২০ জানুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ১:১৬

চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধে হাহাকার

চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধে হাহাকার

 

- গ্যাসনির্ভর সব বিদ্যুৎকেন্দ্র সারকারখানা শিল্প ইউনিট বন্ধ
- বাসাবাড়িতে রান্না বন্ধ

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহে নজিরবিহীন টোটাল শাটডাউনের কারণে সর্বত্র হাহাকার পড়ে গেছে। কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে এলএনজির সরবরাহব্যবস্থায় যান্ত্রিক ত্রুটির গতকাল টোটাল শাটডাউন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তারা। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় সবগুলো গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র, রাষ্ট্রায়ত্ত সারকারখানা সিইউএফএল ও বহুজাতিক সারকারখানা কাফকোসহ গ্যাসনির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সিএনজি ফিলিংস্টেশন এবং বাসাবাড়ির চুলা। বাসাবাড়িতে রাত-দিনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় খাবার জোগাতে নগরজুড়ে মানুষের হাহাকার পড়ে গেছে।

এমনিতেই চাহিদার তুলনায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহে, যা মিলছিল তাও অনেকটাই আমদানিকৃত এলএনজি-নির্ভর। কিন্তু মহেশখালীতে স্থাপিত দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটির (জাহাজের) ড্রাইডকিং শেষে কমিশনিং এবং অপর জাহাজের ড্রাইডকিংয়ের জন্য খালি করতে গিয়েই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। সূত্র মতে, দৈনিক ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি পাইপলাইনের মধ্যে আসার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা পাঁচ শ’ মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে নেমে আসে। পরে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তা শূন্যে নেমে আসে।

গতকালের টোটাল গ্যাস শাটডাউন পরিস্থিতি ছাড়াও গত কয়েক মাস ধরেই চট্টগ্রামে গ্যাসসঙ্কট তীব্র রূপ নেয়। মধ্যে নির্বাচন পর্যন্ত সপ্তাহখানেক বাসাবাড়ির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও ভোটের পর হতেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। গ্যাসসঙ্কটের তীব্রতায় নাগরিক দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। গ্যাসের চাপ সঙ্কটে গত প্রায় ১০ দিন ধরে বিস্তীর্ণ এলাকার বাসাবাড়ির রান্নাবান্না প্রায় বন্ধই বলা চলে। ফলে উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক সামগ্রী যেমন রাইস কুকার, ইলেকট্রিক কেটলি, ইনফ্রারেড কুকার, ইনডাকশন কুকার, ওয়াটার হিটার, মাইক্রোওভেন ইত্যাদির ব্যবহার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থায়ও এসবের ব্যবহার মারাত্মক চাপ বাড়িয়েছে। কিন্তু গ্যাসসঙ্কটে আবার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ বিভাগ চাহিদানুযায়ী বিদ্যুতের জোগানও মিলছে না।

পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। এর প্রায় অর্ধেকই দিয়ে দেয়া হয় কাফকো ও সিইউএফএল-কে। ফলে বাসাবাড়িেেত সরবরাহ নেই বললেই চলে। নগরবাসীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশের ধারণা সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়েই বাসাবাড়ির সরবরাহে সঙ্কোচনমূলক নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে।

কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিসিএল) অপারেশন ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, এমনিতেই সারা দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম। পাশাপাশি ভাসমান এলএনজি স্টেশনে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, গতকাল লাইনে গ্যাসের কোনো সরবরাহ ছিল না, টোটাল শাটডাউন ছিল। পাইপে যা ছিল তা কোথাও কোথাও মিলেছে বলে তিনি জানান। রাতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে এই প্রকৌশলী জানান, একটির (জাহাজ) মেনটেন্যান্স শেষে কমিশনিং এবং অপর জাহাজটির ড্রাইডকিংয়ের জন্য খালি করতে গিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। যে জাহাজটি ড্রাইডকিংয়ে পাঠানো হচ্ছে সেটি দুই মাস পর ফেরত আসার পরেই গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/807723