২০ জানুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ১:১১

নির্বাচনের পর থেকে বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে

নির্বাচনের পর থেকে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলছে। বিগত ৭ জানুয়ারির পর থেকে প্রায় সকল প্রকার পণ্যের দাম বাড়ছে। কোন পণ্যের দামই কমেনি। অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। বাজারে গত কয়েকদিনে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কেজিপ্রতি বেড়েছে ৬ টাকা পর্যন্ত। আবার ভোটের আগে যে গরুর  গোশত ৬৫০ টাকা কেজিতে নেমেছিল, তা এখন ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আটা-ময়দা ও ডালের দাম এক লাফে কেজিতে ১০ টাকা ও তেলের দাম লিটারপ্রতি ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। শুধু এই কয়েকটি পদ নয়, দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে প্রায় সব ধরনের শাক-সবজি, মাছ, ব্রয়লার মুরগি, ফার্মের ডিম, আদা-রসুনসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যও।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, সরু (মিনিকেট) চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৪ টাকা দরে। যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে সর্বোচ্চ ৬ টাকা বেড়েছে। মাঝারি (বি আর-২৮, পায়জাম) চালের কেজিতে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’র (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম ৫ দশমিক ৩৮, মাঝারি চাল প্রায় ৩ এবং মোট চালের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে। ভোটের আগে গরুর  গোশতের বেঁধে দেওয়া দাম ছিল ৬৫০ টাকা কেজি। ভোটের পরে তা এক দফা বেড়ে ৭০০ টাকা হয়। এখন ঢাকা শহরের অধিকাংশ বাজারে প্রতি কেজি গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়।

সবজি বাজারে দেখা গেছে, পেঁপে, মুলা ও শালগম ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজি কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৪০ থেকে আকারভেদে ৬০ টাকা পর্যন্ত। ভরপুর শীতে বাজারে শিমের দামও চড়া; প্রতি কেজি ৮০ টাকা। আর মাঝারি আকারের একটি লাউয়ের দাম ৮০ টাকা, বড় হলে ১০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। শিম ৬০-৮০ টাকা, শালগম ৫০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৫০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, পেঁয়াজকলি ৬০ টাকা, মটরশুঁটি ১৪০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, লাল মুলা ৫০ টাকা, দেশি গাজর ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, ক্ষীরা ৬০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, পটল ৭০ টাকা,  মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা,  কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ১০০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা, ব্রকলি ৬০ করে বিক্রি হচ্ছে। 

ক্রেতারা বলছেন, কোনও সবজির দাম ১০ টাকা কমলে দুই-একদিন পরে আবার ২০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে তো কেনাকাটা করে সস্তি পাওয়া যায় না। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, কেনা বেশি বলেই তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে কিছু বিক্রেতা সবজির দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন।

এছাড়া মানভেদে পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৪৫-৫০ টাকা, দেশি রসুন ২৮০, চায়না রসুন ২৪০-২৬০, ভারতীয় আদা ২৪০, চায়না আদা ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে হুট করেই ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকা। যা গত মাসে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যে ছিল। সোনালি জাতের মুরগির দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায়। অন্যদিকে মুদি বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। বেড়েছে মসুর ডালের দামও। প্রতি কেজি ভালো মানের মসুর ডাল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের থেকে ১০ টাকা বেশি। এর আগে বিভিন্ন সময় ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো বা কমানোর কাজ ঘোষণা দিয়ে করলেও এবারে চুপিসারেই দাম বাড়িয়েছে।

বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা করা হয়েছে, যা ভোটের আগে বিক্রি হয়েছে ১৬৯ টাকায়। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪৫ টাকা করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দাম ১০ টাকা এবং চিনির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটের আটার দাম এখন ৬৫ টাকা। ময়দার দাম বেড়েছে হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। চিনির দামেও একই ধরনের অস্থিরতা। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বাজারে ১৪৮ টাকা মূল্য থাকলেও বিক্রেতারা সেটা খুলে বিক্রি করছেন ১৫০-১৬০ টাকায়। বাজারে এখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা। একই সঙ্গে রসুনের দাম ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং আদার দাম ২ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়েছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি আদা এবং রসুন একই দামে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া মাছের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী  ১০০০-১২০০ টাকা, রুই মাছ ৩৬০-৬০০ টাকা,  কাতল মাছ ৩৮০-৫৫০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৬০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, কাচকি মাছ ৪৫০ টাকা, কৈ মাছ ২০০-১০০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪৫০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১৩০০ টাকা, বেলে মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ১১০০-১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০- ১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, শোল মাছ ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

https://www.dailysangram.info/post/546568