১৯ জানুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ৫:০৩

ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্র: বিদ্যুৎ নেই, খরচ ৭ কোটি

 

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ডিজেলচালিত ৬০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে নেই দুই বছর হলো।tছবি: সংগৃহীতডিজেলে চলা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ৬০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দুটি ইউনিট বন্ধ করা হয় প্রায় দুই বছর আগে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করা হয়েছে অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে। বাকি একটি ইউনিট এখনো সচল রাখা হয়েছে। তবে এই ইউনিট থেকে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় না। অথচ কেন্দ্রটি রক্ষণাবেক্ষণে গত দুই বছরে সরকারের খরচ হয়ে গেছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে বছরে গড়ে ব্যয় সাড়ে ৭ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জরুরি মুহূর্তে উৎপাদনে যাওয়া লাগতে পারে—এই বিবেচনায় ৩ নম্বর ইউনিটটি এখনো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘণ্টায় সাড়ে ৬ হাজার লিটার ডিজেল লাগা ইউনিটটি ৬ ঘণ্টা চালানো হলে ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। ইউনিটটি ৯১ দিন চালানোর সক্ষমতা নিয়ে ৩৩ লাখ লিটার ডিজেল মজুত করে রাখা হয়েছে। 

কেন্দ্র সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলেও এর রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা এবং অন্যান্য ব্যয় হিসাবে প্রতিবছরই কয়েক কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে সরকারের। হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে ১৩ কোটি, ২০২১ সালে ১২ কোটি, ২০২২ সালে সাড়ে ৮ কোটি, ২০২৩ সালে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। 

বিদ্যুৎকেন্দ্র-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১৯৭৬ সালের ২৭ এপ্রিল জার্মানির এজি কার্নিস কোম্পানির প্রযুক্তিতে একটি জিট ইউনিট নিয়ে প্রথম উৎপাদনে আসে ভেড়ামারার ঐতিহ্যবাহী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। একই বছর ২৮ জুলাই দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয়। সে সময় ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট থেকে মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। চাহিদার কারণে ১৯৮০ সালের ১৯ জানুয়ারি জাপানের হিটাসি কোম্পানির প্রযুক্তিতে ২০ মেগাওয়াটের আরেকটি ইউনিট চালু হয়। তখন মোট সক্ষমতা দাঁড়ায় ৬০ মেগাওয়াট। 

কেন্দ্রসংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিটগুলোর মেয়াদকাল ধরা হয় ১৫ বছর। অথচ ১ ও ২ নম্বর ইউনিট ৪৬ বছর ধরে চলার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় ২০২২ সালে। আর ৩ নম্বর ইউনিটটি সচল আছে ৪৪ বছর ধরে। 

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সক্ষমতা কমে যাওয়া ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলোর তালিকায় পড়ে ভেড়ামারা ৬০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ, জরাজীর্ণ ও ব্যয়বহুল দুটি ইউনিট বন্ধ করে দেয় সরকার। 

ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে জানান, ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জরাজীর্ণ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এখন সচল আছে একটি ইউনিট। আগে ২৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে চালানো হতো কেন্দ্রটি। তবে দুই ইউনিট বন্ধ হওয়ার পর ৭০ জনকে রেখে ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্য কেন্দ্রে বদলি করা হয়েছে।

আসাদুজ্জামান স্বীকার করেন, ৩ নম্বর ইউনিটের যন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিবছর ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা খরচ হয়। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রক্ষণাবেক্ষণ, সংকটকালে দরকার হলে ৩ নম্বর ইউনিটটি চালু করা ও পরিচালনার জন্য কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। তবে ২০২৫ সাল নাগাদ এটিও বন্ধ করে দেওয়া হবে। 

তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ১৯৩৪তম বোর্ড সভায় ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরেই নতুন আরেকটি ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় ২০২২ সালের ৭ জুন। পিজিসিবি এবং পেট্রোবাংলার সমন্বয়ে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটি গঠন করা হয়। ওই বছর ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছে। তবে ১৫০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০২৫ সাল নাগাদ ৩ নম্বর ইউনিটটিও বন্ধ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে এর আগেই ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব হলে উৎপাদন ছাড়া সচল রাখা ৩ নম্বর ইউনিটের পেছনে যে ব্যয় হচ্ছে, তা হবে না। বরং একই খরচে নতুন কেন্দ্রের পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হবে। কেননা, নতুন কেন্দ্র নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য জায়গা, পানিসহ যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রয়োজন, তার সবটাই এখানে রয়েছে।

উপব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামানও জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ভেতরে ১৫০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল প্ল্যান্ট বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ২০২২ সালে জরিপ চালিয়েছে। তবে পরে আর গতি পায়নি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প।

 

https://www.ajkerpatrika.com/314671