১৯ জানুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ৪:৫২

অন্য বিমানবন্দরে অবতরণে আর্থিক ক্ষতি

ভিজিবিলিটি কম থাকায় ঢাকায় ফ্লাইট নামাতে হিমশিম খাচ্ছেন পাইলটরা

 

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রানওয়ের ভিজিবিলিটি (দৃশ্যমানতা) কম থাকায় পাইলটরা প্রতিনিয়ত উড়োজাহাজ অবতরণে হিমশিম খাচ্ছেন। উপায় না পেয়ে ঢাকার পরিবর্তে চট্টগ্রাম, সিলেটে গিয়ে অবতরণ করাচ্ছেন। সেখানেও কখনো-কখনো সম্ভব না হলে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে উড়োজাহাজ অবতরণ করাচ্ছেন।

ঘনকুয়াশা কেটে গেলে ওই সব বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের নিয়ে আবার ঢাকায় নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে নিরাপদে ফ্লাইট অবতরণ করানোর ঘটনা ঘটছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার পর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মাস্কাট, দুবাই, জেদ্দা, মদিনা, শারজাহ ও কুয়েত থেকে ছেড়ে আসা ফ্লাইটগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নির্ধারিত সময়ের মধ্য অবতরণ করেছে। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বেসরকারি বিমান সংস্থা ও বিদেশী এয়ারলাইন্সের কতগুলো ফ্লাইট ঘনকুয়াশার কারণে ঢাকায় নামতে পারেনি সেই তথ্য সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করার পরও জানা সম্ভব হয়নি। যদিও একদিন আগে অর্থাৎ বুধবার মধ্যরাত থেকে সকালে ছেড়ে আসা সময়ের মধ্যে মোট দেশী-বিদেশী ১১টি ফ্লাইট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামতে পারেনি। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ওই ফ্লাইটগুলো চলে যায় আশপাশের বিমানবন্দরগুলোতে।

গতকাল ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে বেশ কিছু দিন ধরে ঢাকার রানওয়েতে ভিজিবিলিটি একেবারে কম থাকছে। কখনো মধ্যরাত থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ভিজিবিলিটি নিল (শূন্য) থাকছে। বুধবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ভিজিবিলিটি পুরো নিল ছিল। তবে আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টার পর চট্টগ্রামে এবং ঢাকায় ১০টার পর আমাদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটগুলো নামতে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। তারা বলছেন, বিভিন্ন দেশ থেকে ছেড়ে আসা বিমানের ফ্লাইটগুলোকে আগেই ডিলে করে দেয়া হয়েছিল। যার কারণে ভিজিবিলিটি সমস্যায় এ ফ্লাইটগুলোকে আজকে পড়তে হয়নি।

গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বলাকা ভবনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, ভিজিবিলিটি কম থাকায় ইদানীং যাত্রীদের যেমন-ভোগান্তিতে পড়ে সময় নষ্ট হচ্ছে, তেমনি দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোকেও অনেক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এর জন্য দায়ী আমাদের সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। তারা আসলে কাজটা মোটেও ভালো করেননি।

এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলছেন, ঘনকুয়াশার মধ্যেও রানওয়ে যেটি দিয়ে দেখা যায়, সেই ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) অনেক আগেই চলে এলেও সেটির আপগ্রেড সম্পন্নের কাজ তারা এখনো শেষ করতে পারেননি। শীতকাল চলে গেলে এ বছর সেটির আর দরকার হবে না। তারা বলেন, মূলত আইএলএসটি রানওয়ের মাথায় স্থাপন করা থাকে। এটি দেখেই পাইলটরা ভিজিবিলিটি কম থাকলেও তাদের উড়োজাহাজ নামাতে পারেন। নরমালি ঢাকায় উড়োজাহাজ নামাতে ভিজিবিলিটি (দৃশ্যমানতা) দরকার ১২০০। ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) থাকলে ভিজিবিলিটি ৮০০ অথবা তারও কম থাকলে পাইলট উড়োজাহাজ স্বাভাবিকভাবে নামাতে পারবেন।

এই কর্মকর্তারা আরো বলছেন, যতটুকু শুনেছি আপগ্রেডের কাজ চলছে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে আইএলএসের সুবিধা মনে হয় পাওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, ঘন কুয়াশার কারণে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার সকাল সোয়া ১০টা পর্যন্ত ১১টি ফ্লাইট নামতে পারেনি। বিমানবন্দরের রানওয়ে দেখতে না পেরে ১১টি ফ্লাইট সিলেট, চট্টগ্রাম, হায়দ্রাবাদ ও কলকাতা বিমানবন্দরে চলে যায়।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো: কামরুল ইসলাম এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভোর ৪টা ১৫ মিনিট থেকে সকাল ১০টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত এই বিমানবন্দরে আসা ১১টি যাত্রীবাহী ফ্লাইট ঘন কুয়াশার কারণে ডাইভার্ট হয়ে সিলেট, চট্টগ্রাম, হায়দ্রাবাদ ও কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে আবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের পর থেকে ফ্লাইটগুলো বিমানবন্দরে ফিরে আসতে শুরু করে।

জানুয়ারির শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘন কুয়াশা ও ব্যাপক শীত অনুভূত হচ্ছে। মাঝারি বৃষ্টিপাতের কারণে সামনে শীত আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/807498