১৯ জানুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ৪:৪৯

শীতে জবুথবু মানুষ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি

 

শীতে জবুথবু দেশ। এর মধ্যেই হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিও হয়ে গেল দেশের বিভিন্ন স্থানে। গতকাল সকালে রংপুর বিভাগের সর্বত্র এবং রাজশাহী বিভাগের কিছু অঞ্চলে ছিল মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে আজ শুধু নওগাঁ ও কিশোরগঞ্জে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে। গতকাল শৈত্যপ্রবাহ অঞ্চলে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ার মতো ছিল। বাধ্য না হলে কেউ ঘরের বাইরে বের হননি বলে আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া গতকাল দিনের কিছুটা সময় সূর্যের দেখা মিললেও অনেক দিন থেকে ঠাণ্ডা হয়ে থাকা পরিবেশকে গরম রাখার মতো সুর্যের আলো যথেষ্ট ছিল না। ফলে পুরোদেশই ছিল প্রচণ্ড শীতের কবলে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশে যেমন কুয়াশা ছিল তেমনি কোনো কোনো স্থানে পড়েছে বৃষ্টি। আবার এর সাথে যোগ হয়েছে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস। ফলে খোলা আকাশের নিচে হিম হাওয়ায় যারা রাত কাটাচ্ছেন তাদের জন্য রাতটি ছিল বিভীষিকাময়। গ্রামের দিকে কুঁড়ে ঘর অথবা টিনশেড ঘরে যারা বসবাস করছেন তাদের জন্য অনেক দিন থেকেই কুয়াশা ও বৃষ্টি ভেজা রাতটি কাটছে নির্ঘুমে। অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন ঘরে আগুন জ্বালিয়ে নিজেদের উষ্ণ রাখতে এবং দিনের বেলা ঘুমাচ্ছেন তারা।

গতকাল দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে খুলনা বিভাগে। ঢাকা ও বরিশাল বিভাগেও বৃষ্টি হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে যশোরে ২২ মিলিমিটার। চুয়াডাঙ্গায় ২০ মিলিমিটার, সাতক্ষীরায় ১২ মিলিমিটার, গোপালগঞ্জে ১১ মিলিমিটার, বরিশালে ৫ মিলিমিটার, খুলনায় ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র ১ মিলিমিটার অথবা কোথাও সামান্য বৃষ্টি হয়েছে তা মিলিমিটারের স্কেলে মাপার মতো ছিল না।

ঢাকায় বিকেলের দিকে খুবই সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও রাস্তা কিছুক্ষণের জন্য ভিজে গেলেও গাড়ির চাকার ঘর্ষণে মুহূর্তেই শুকিয়ে গেছে পানি। তবে সামান্য বৃষ্টি হলেও বেড়েছে শীতের মাত্রা। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাই এই শীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। এর বাইরে ডিমলায় ৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তেঁতুলিয়ায় ৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

রাজধানী ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি শীতে ঢাকায় এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আজ শুক্রবারও খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা থাকতে পারে। তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যেই আবহাওয়া বিভাগ তাপমাত্রা বৃদ্ধির সুখবর জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাপমাত্রা সামান্য বাড়ার পূর্বাভাস দিলেও দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কক্সবাজারে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঠাণ্ডার কারণে সারা দেশেই মানুষের মধ্যে বেড়ে গেছে জ্বর, সর্দি ও কাশি। কারো কারো ডায়রিয়াও শুরু হয়েছে। এই শীতে কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সক্রিয় হয়ে থাকে বলে এদের দ্বারা মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, শিশু ও বৃদ্ধদের উচিত খুব সাবধানে রাখা। কারণ এই বয়সীদের মধ্যে ঠাণ্ডা থেকে শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়া হয়ে যাচ্ছে। একবার নিউমোনিয়া হয়ে গেলে তা থেকে সেরে উঠতে অনেক দিন লাগে এবং অনেক টাকা ব্যয় হয়। অনেকের আবার হাসপাতালেও যেতে হতে পারে। ফলে নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সব ধরনের প্রতিরোধী ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তারা বলছেন, সব সময় গরম কাপড়ে আবৃত করে রাখা, প্রয়োজন না হলে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল না করা, গোসল করতে হলে যেন গরম পানিতে গোসল করে।

বেতাগী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে রয়েছে। মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এবং উত্তরের হিমেল বাতাসে কনকনে ঠাণ্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বিকেলে বৃষ্টি হয়েছে বরগুনার বেতাগীতে।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল বলেন, বৃহস্পতিবার সকালের তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯৩ শতাংশ। এর সাথে ঘন কুয়াশা ও মেঘ থাকবে। মেঘ কেটে গেলে তাপমাত্রা আরো কমবে। জানুয়ারি মাসজুড়েই এমন অবস্থা থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, গত কয়েকদিন যাবৎ এই অঞ্চলে ঘন কুয়াশা এবং ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। দুপুরে দুই-তিন ঘণ্টার মতো সূর্যের আলো দেখা মিললেও তাপমাত্রা খুবই কম। হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে অনেকে।

বিকেলে বেতাগীর কাজিরহাট, লক্ষ্মীপুরা, হোসনাবাদ ও চান্দখালীতে ঘণ্টাব্যাপী বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পরে ঠাণ্ডা বাতাসে শীত আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। শীতের কারণে রাস্তাঘাটে মানুষের আনাগোনা এমনিতেই কম, এর মধ্যে বৃষ্টির কারণে জবুথবু অবস্থা সবার। এতে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সব শ্রেণীর মানুষের।

সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে এখনো শীতার্তদের মাঝে তেমন গরম কাপড় বিতরণ করা হয়নি। ভুক্তভোগীদের দাবি শীত নিবারণে গরম কাপড় বিতরণে বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাহমিদা লস্কর বলেন, ‘শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে। সাধারণত শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই শিশুদের ওপর বিশেষ যত্ন নিতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। ঠাণ্ডা লাগলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, মেঘলা আকাশের সাথে ঘন কুয়াশা আর উত্তরের কনকনে শীতল বাতাসে কাহিল পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষগুলোর দুর্ভোগ কিছুটা কমেছে। গত তিন দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা মিলেছে ঝলমলে রোদের। শুরু থেকেই কড়া রোদে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে উত্তরের এই জনপদের মানুষগুলো। তবে রাতে ঘন কুয়াশা না থাকলেও হাড় কাঁপানো শীতে পারদ নেমেছে ব্যারোমিটারের। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আগের দিনের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। বুধবার এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বুধবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আগের দুই দিনের মতো গত বুধবার দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় উত্তরের কনকনে শীতল হাওয়া। হিমেল বাতাসে কাবু হতে থাকে পঞ্চগড়ের মানুষ। তবে রাতে কুয়াশা কম থাকলেও শীতের তীব্রতা কমেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সূর্যের মুখ দেখা যায়। শুরু থেকেই কড়া রোদের কারণে তাপমাত্রা অনেকটা বেড়ে গিয়ে দুর্ভোগে থাকা শীতার্ত মানুষগুলো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। নিজেদের উষ্ণ করতে আগুনের তাপ না নিয়ে রোদের তাপ নিতে দেখা গেছে সব বয়সী মানুষকে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কয়েকদিনের ভেজা কাপড় রোদে শুকিয়ে নিতে দেখা গেছে গৃহিণীদেরও।

এ দিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হলেও জেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ছিল খোলা। গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা গেছে সকাল থেকেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যথারীতি শুরু হয়।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় সব মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাঈদুল আরিফ।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নবেজ উদ্দিন বলেন, আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করছি। জেলার উপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যার ফলে প্রাথমিকের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরে ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রা হলে অটোমেটিক স্কুল খুলে যাবে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আরম জানান, আমরা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের বিষযটি অবগত হওয়ার পর বিদ্যালয়গুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এ দিকে বিদ্যালয়গুলো খবর নিয়ে দেখা সেখানে সকাল ৮টা থেকে ক্লাস চলছিল। পরবর্তী বেলা পৌনে ১১টায় চিঠি পাওয়ার পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছুটি দেয় বিদ্যালয় প্রধান।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি ও দামুড়হুদা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীতের সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল ভোর ৫টা ৪৫ থেকে সকাল ৮টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় ১৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আবার দুপুরের পর থেকে জেলার দামুড়হুদা ও দর্শনাসহ কিছু এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃৃষ্টিপাত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় আজ বৃহস্পথতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শীত আর হিমেল হাওয়ার সাথে বৃষ্টিতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। অপর দিকে গত কয়েকদিন ধরে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহের কারণে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়া) চুয়াডাঙ্গা জেলার সব মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা শিক্ষা অফিস।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় থেমে থেমে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। গত শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শনিবার ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রোববার ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। তাপমাত্রা সোমবার ও মঙ্গলবার কিছুটা বেড়ে ১০ দশমিক ৯ ও ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও বুধবার তা আবার নেমে আসে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর আজ সকাল ৬টায় ও সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, সপ্তাহজুড়ে শৈত্যপ্রবাহে জেলার সর্বত্র জনজীবনে চরম দুর্ভোগ বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কুয়াচ্ছন্ন ভোরে ঘণ্টাখানেক গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সাথে শীতের প্রকোপ আরো তীব্রতর হয়ে উঠেছে। টানা কয়েক দিন দুপুরের আগে সূর্যের আলো দেখা মেলে না। দুপুরের পর খানিকটা সময়ের জন্য সূর্যের আলো চোখে পড়লেও শীতের তীব্রতায় তা তাপ বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য সহায়ক হচ্ছে না ফলে এই শীতে সব বয়সের মানুষের নাকাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের অবস্থা খুবই নাজুক। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ঠাণ্ডাজনিত রোগে শিশুদের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে।

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে দিনমজুর ও শ্রমিকদের অবস্থা আরো খারাপ। শীতের কারণে কাজ কমে গেছে। আবার যেখানে কাজ হচ্ছে সেখানকার শ্রমিকরা শীতের প্রকোপে ভালোভাবে কাজ করতে পারছে না। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এই তীব্র শীত নিবাড়নের জন্য দুস্থ ও ভাসমান মানুষের জন্য কম্বল বিতরণের মাধ্যমে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। কুষ্টিয়া শহরের নির্মাণশ্রমিক ও কৃষি শ্রমিকের বিচরণ দেখা যায় শহরের থানাপাড়া ছয় রাস্তা মোড়ে। আজ সকালে সেখানে দিনমজুর ও নির্মাণশ্রমিকের সংখ্যা নিতান্তই কম ছিল। আবার যারা কাজের জন্য উপস্থিত হয়েছিল সকালের বৃষ্টির কারণে তা ভেস্তে গেছে।

ঝিকরগাছা (যশোর) সংবাদদাতা জানান, সারা দেশের মতো যশোরের ঝিকরগাছায় গত কয়েকদিনের তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। দিনভর এই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এ দিন বৃষ্টি উপেক্ষ করে কুলি-মজুর, ভ্যানচালক, ইজিবাইক, সিএনজি চালক ও নিজেদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে কৃষকসহ নিম্ন আয়ের মানুষকে বাজারে আসতে দেখা গেছে। বিকেলে বৃষ্টির তীব্রতা বেড়ে গেলে অধিকাংশ ভ্যান-রিকশাচালক বাড়ি চলে যায়। সরেজমিন ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ড, উপজেলা মোড়, থানা মোড়, রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ঘুরে অধিকাংশ স্থানে মানুষের উপস্থিতি কম লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া ভ্যান-রিকশা, ইজিবাইক, সিএনজির সংখ্যাও কম ছিল। এ দিন তরকারি, মাছ, গোশত, ওষুধের ফার্মেসিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান অন্য দিনের চেয়ে কম খোলা ছিল। এ দিন নিজেদের উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা কৃষকদেরকে বেশি বিপাকে পড়তে দেখা গেছে। ভ্রাম্যমাণ এই কৃষকরা প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার নিজেদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে এসে খোলা জায়গায় বসে বিক্রি করেন। বৃহস্পতিবার দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও তীব্র শীতে তারা খুব কষ্টে দিন পার করেছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/807500