১৯ জানুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ৪:৪৮

দেশে করোনার নতুন উপ-ধরন শনাক্ত

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আতঙ্ক ছড়ানো করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ এবার বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত পাঁচজনের নমুনা পরীক্ষায় জেএন.১ উপধরন শনাক্ত হয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, ৫ ব্যক্তির শরীরের নমুনা পরীক্ষায় জেএন.১ শনাক্ত হয়েছে।  

গতকাল  বৃহস্পতিবার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত পাঁচজনের নমুনা পরীক্ষায় জেএন.১ উপধরন শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তদের মধ্যে এই মুহূর্তে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের রোগী আছেন। তবে তাদের মধ্যে কারও দেশের বাইরে থেকে আসার কোনো হিস্ট্রি নেই। তারা দেশেই ছিলেন। তাহমিনা শিরীন বলেন, তারা প্রত্যেকেই ভালো আছেন। এ নিয়ে উদ্বেগের কিছুই নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত ডিসেম্বর মাসে সতর্ক করে বলেছে যে, করোনার অমিক্রন ধরনের জেএন.১ উপধরন বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে। ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে অনেক দেশে করোনার এ ধরনটি পাওয়া গেছে। দ্রুত ছড়ানোর কারণে ডব্লিউএইচও এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে ।

সংস্থার পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, শীতকালে কোভিড এবং অন্য সংক্রমণগুলোর প্রকোপ বাড়তে পারে। উত্তর গোলার্ধে ইতিমধ্যে আরএসভির মতো বিভিন্ন শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস এবং শিশুদের নিউমোনিয়ার হার বাড়তে দেখা গেছে। কোভিডের জন্য দায়ী ভাইরাসটি শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে রূপ পাল্টেছে। এর কয়েকটি ধরনও তৈরি হয়েছে। মাঝে কিছুদিন বিশ্বজুড়ে অমিক্রন ধরনের আধিপত্য দেখা গিয়েছিল।

তবে ডব্লিউএইচও বলেছে, বর্তমানে এ করোনার ধরনটির সংক্রমণজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি কম এবং বিদ্যমান টিকাগুলোই এ ধরন থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেবে। যুক্তরাজ্যের হেলথ সার্ভিস বলেছে, বর্তমানে একটি পরীক্ষাগারে যতগুলো করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসছে, তার প্রায় ৭ শতাংশের জন্য জেএন.১ দায়ী। 

ধারণা করা হচ্ছে, অমিক্রনের আরেক উপধরন বিএ.২.৮৬ ধরনের তুলনায় জেএন.১-এর স্পাইক প্রোটিনের অতিরিক্ত পরিবর্তনের কারণে সব অঞ্চলে জেএন.১ দ্রুত ছড়াচ্ছে। বিএ.২.৮৬ ধরন থেকেই জেএন.১-এর উৎপত্তি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঝুঁকিসংক্রান্ত এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিশেষ করে, যেসব দেশে শীত মৌসুম শুরু হচ্ছে, সেখানে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত অন্য সংক্রমণগুলোর পাশাপাশি এ ধরনের কারণে সারস-কভ-২ (করোনাভাইরাস) এর প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলো হলো-জনাকীর্ণ ও বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরতে হবে। কাশি বা হাঁচির সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে। কোভিড এবং টিকার নতুন নতুন তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে। বিশেষ করে, যারা সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছেন। অসুস্থ হলে বাড়িতে থাকুন। লক্ষণ দেখা দিলে রোগ শনাক্তের পরীক্ষা করতে হবে।

এদিকে দেশে আবারও করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দ্রুত টিকা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।  কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স বিভাগের সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ফাইজার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রমের ১ম, ২য় এবং বুস্টার ডোজ (৩য়, ৪র্থ ডোজ) বিতরণ এবং প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। শিগগিরই কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী, ৬০ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত ১৮ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছর এবং তদূর্ধ্ব) জনগোষ্ঠী ও গর্ভবতী নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।

https://www.dailysangram.info/post/546480