১৯ জানুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ৪:৪৫

সিইসির ধন্যবাদ অনুষ্ঠান!

-স্টালিন সরকার

 

‘আমি কোন পথে যে চলি/কোন কথা যে বলি/তোমায় সামনে পেয়েও খুঁজে বেড়াই/মনের চোরাগলি’ (মান্না দে)। কালজলীয় শিল্পীর গানের মতোই যেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের জীবনাবলি। ‘একই অঙ্গে নানান রূপ’ প্রবাদের মতো তিনি কখন কোন কথা বলেন এবং তিনি কখন কি খোঁজেন বা তার মনের চোরাগলিতে কি বাসা বেঁধেছে সত্যিই বোঝা দুষ্কর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের পর্যবেক্ষণ, ‘২৬ আসন সমঝোতা’ করে নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ‘ভোট কারচুপি’র বক্তব্য, নৌকার পরাজিত প্রার্থী, আওয়ামী লীগের ‘ডামি প্রার্থী’ হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করা সাবেক এমপিদের বক্তব্য এবং কিং পার্টি হিসেবে পরিচিত নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর নেতাদের বক্তব্যে পরিষ্কার ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে কি কাÐ ঘটেছে। কত শতাংশ মানুষ ভোট কেন্দ্রে গেছেন। নির্বাচনের দিন কেন্দ্রের বাইরে সিনেমা হলের টিকিট বø্যাকারদের মতোই হৈ চৈ এবং কিছু মানুষের জটলা দেখা গেলেও ভেতরে ছিল সুনসান নীরবতা। অনেক পোলিং এজেন্ট ঘুমিয়ে সময় পার করেছেন। আবার নির্বাচন নিয়ে সিইসির স্ববিরোধী বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনের সচিবের বক্তব্যে প্রমাণ মেলে নির্বাচনের নামে ওই দিন কেমন ‘রঙ্গমঞ্চে নাটক’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটের দিন বিকেল ৩টায় নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ৭ ঘণ্টায় প্রায় ২৬.৩৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচন শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে বলেন, ২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ সময় পাশে থাকা একজন কমিশনার ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলার পরামর্শ দেন। তারপর সিইসি বলেন, ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। পরবর্তীতে সিইসি দাবি করেন সাড়ে ৪১ শতাংশ ভোট পড়েছে। কাস্টিং ভোট নিয়ে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে গ্রহণ করা হবে। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান, ২৮ শতাংশ ভোটের কথা বলেছেন কেন? জবাবে সিইসি বলেন, ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে উঠে সংবাদ সম্মেলনে গেছি তো তাই বলেছি। পাঠক কি বুঝলেন? জাতীয় নির্বাচনের সময় সিইসি ঘুমিয়ে ছিলেন! জাতীয় নির্বাচনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমিয়ে কাটানোর রহস্য অবশ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে। তার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আগারগাঁওস্থ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ফলাফল ঘোষণার কেন্দ্রীয় মঞ্চে একজন নির্বাচন কমিশনার সিরাজগঞ্জের একটি আসনে ৭০ শতাংশ ভোট দেখানো হয়েছে নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করলে পাশে বসা নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নির্বাচনকে বিতর্কিত করে ফ্যালাইসি স্যার। য্যায়া ঘুমাইয়া যাব স্যার। বসে থেকে লাভ আছে? সবাই রেজাল্ট জানে। ডিসিদের মেসেস দেয়া আছে না, সেটা পইড়্যা চইল্যা যামু’।

 

গত ১৭ জানুয়ারি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাচন নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনটি বলেছে, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পাতানো নির্বাচন গণতন্ত্র এবং ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। টিআইবি নির্বাচন ‘অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ হয়নি মন্তব্য করে বলছে, এটা ছিল একপাক্ষিক ও পাতানো প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিসহ এই নির্বাচনের সার্বিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। ২৪১টি আসনে নির্বাচন ‘প্রতিদ্ব›িদ্বতা’ হয়নি। স্বল্প ভোটার আসা ও ডামি লাইন তৈরি, বিভিন্ন আসনে অন্য প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়া, ভোটের আগেই ব্যালটে সিল মারা, ভোট চলাকালে প্রকাশ্য সিল মারাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ, জোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ জন; যাদের ডামি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নামানো হয় এবং এদের মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। প্রতিবেদনে ভোট পড়ার হার নিয়ে বলা হয়, ভোটের দিন বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানানো হয়। পরবর্তী এক ঘণ্টায় ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোটসহ মোট ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়া রহস্যজনক। টিআইবির প্রতিবেদনে পুরো চিত্র উঠে আসে। শুধু তাই নয়, টিআইবির দেয়া চিত্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগের (মমতাজ, ইনু, বাদশাসহ কয়েকজন) পরাজিত প্রার্থী, কিং পার্টির পরাজিত প্রার্থী, গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পরাজিত প্রার্র্থীর বক্তব্যে মিল পাওয়া যায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব যে অংশগ্রহণমূলক হয়েছে তা নয়। একটি বড় দল নির্বাচন শুধু বর্জন করেনি, তারা সেটি প্রতিহতও করতে চেয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারায় জাতি স্বস্তিবোধ করছে। আজ আমরা যে নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছি সেটিও কিন্তু বিতর্কের ঊর্ধ্বে যেতে পারেনি। সরকারের সহায়তা ছাড়া এতবড় কর্মযজ্ঞ সফল করা সম্ভব হয় না। নির্বাচনের মাধ্যমে উদ্বেগ-সংকট থেকে জাতি উঠে এসেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে সত্যি কি দ্বাদশ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি উদ্বেগ-সংকট উতরেছে? তাহলে সরকারের দায়িত্বশীলদের এত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কেন? যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি ও বাংলাদেশের জন্য নেয়া ভিসানীতি নিয়ে স্যাংশনের ভয় কেন? নির্বাচনের পর জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রকাশ কেন? আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এ নির্বাচনকে ‘ওয়ন উয়েম্যান শো’ মন্তব্য করে সম্পাদকীয় ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখছে কেন? এমনকি যাদের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে নির্বাচন করা হয়েছে সেই ভারতের গণমাধ্যমগুলোতেও শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে কেন? একপক্ষীয় এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে না বুঝতে পেরে আগেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর ঘোষণা দেয়। তারপরও ওআইসিসহ কিছু দেশের কিছু মানুষকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দেখাতে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ঢাকায় আনা হয়। পাঁচ তারকা হোটেলে তাদের থাকা-খাওয়াসহ আসা-যাওয়া-পকেট খরচসহ যাবতীয় খরচ দেয়া হয়। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘বিদেশ থেকে যাদের পর্যবেক্ষক হিসেবে আনা হয়েছিল তারা কেউ পর্যবেক্ষক নন; তারা এসেছিলেন অতিথি হিসেবে।’ তারপরও নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা ব্রিটিশ পর্যবেক্ষক জেজ কৌলসন নির্বাচন নিয়ে বলেছেন, ‘আই ফাউন্ড দ্য নর্থ কোরিয়া মডেল হিয়া’র। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছি। সারাদিন রাজধানী ঢাকার ৮টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। প্রচুর মানুষ। কেন্দ্রের চার পাশে তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া চলাফেরা। অনেক জায়গায় তারা আমাকে পেয়ে ঘিরে ধরেছেন। আমি তাদের কাছে জানতে চেয়েছি, তোমরা ভোটার কি না? তোমাদের হাতে ভোটার শনাক্তকরণ চিহ্ন কই? তারা আমাকে সে চিহ্ন দেখাতে পারেনি। অনেক লোক কিন্তু খুব কমই তাদের মধ্যে ভোটার। তিনি আরো বলেন, ‘এখানে অনেক শিশুকে ভোট দিতে দেখেছি। এটা খুবই কৌতূহলের বিষয়। ‘আই ফাউন্ড হিয়া’র লং লাইন বাট মিনিমাম ভোটার্স। আই থিংক দিস মে অন পার্টি ইলেকশন। নো অপজিশন। আই ডাজন’ট ফাউন্ড অ্যানি কম্পিটিশন হিয়া’র। বাট দ্য রুলিং পার্টি লিডার্স, সাপোর্র্টার্স ওয়্যার ভেরি অ্যাকটিভ। যারা ভোট বর্জন করেছে তাদের কোথাও আমি খুঁজে পাইনি। কোনো কেন্দ্রেই ভোটারদের বাধা দিতে দেখিনি। আমি শুনেছি রাশিয়া ও চায়না এই নির্বাচনকে সমর্থন করে। আমি তো এখানে কোনো গণতন্ত্র দেখি না। সারাদিনে যতগুলো কেন্দ্র আমি ঘুরেছি তাতে আমার ধারণা ৬ থেকে ৮ শতাংশ ভোট কাস্ট হতে পারে। এর বেশি হওয়ার সুযোগ নেই।’

রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু নির্বাচনে কারচুরির অভিযোগ তুলে বলেন, প্রশাসন কথা রাখেনি। আমাদের ভোট হয়েছে রাত তিনটার সময়ে। অনেকেই আমাকে ভোট বর্জন করতে বলেছিল। আমি করিনি। আমি আওয়ামী লীগ করি। কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি। তাই সবকিছু জেনে বুঝেও ভোট বর্জন করিনি। ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন (নৌকা প্রতীক) সানজিদা খানম। তিনি বলেন, ১৮টি কেন্দ্রে ভোটে অনিয়ম হয়েছে। মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান ওরফে গোলাপ ভোটের দুই দিন পর সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, সূ² কারচুপি ও ষড়যন্ত্রের কারণে পরাজিত হয়েছি। কালকিনি পৌরসভার ১৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২টি কেন্দ্র প্রতিদ্ব›দ্বীরা দখলে নিয়ে ভোটে সূ² কারচুপি করেছেন। মানিকগঞ্জ-২ আসনের নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগম বলেছেন, কয়েকটি কেন্দ্রে কারচুপি হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের ভোটও ট্রাক প্রতীকে পড়েছে। বরগুনা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেছেন, ফলাফলে ব্যাপক কারচুপি, অনিয়ম ও বেআইনি কার্যকলাপ হয়েছে। পাবনা-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল হামিদ কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপিসহ অনিয়মের নানা অভিযোগ করেছেন। রাজবাড়ী-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরে আলম সিদ্দিকী হক বলেছেন, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, এজেন্ট বের করে দেওয়া, জাল ভোটসহ নানাভাবে অনিয়ম হয়েছে। কুষ্টিয়া-৩ আসনে কারচুপির অভিযোগ এনে গেজেট বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী পারভেজ আনোয়ারের কর্মী-সমর্থকেরা। পাবনা-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল হামিদ কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপিসহ অনিয়মের নানা অভিযোগ করেছেন। ফরিদপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করেন। কুষ্টিয়া-২ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, জনগণের ভোটে নয়, কারচুপির ভোটে আমাকে হারানো হয়েছে। রাজশাহী-২ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, হুমকি ও ভয়-ভীতির কারণে ভোটাররা নির্ভয়ে ও নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেননি। গাইবান্ধা-১ আসনের দু’বারের সংসদ সদস্য জাপার শামীম হায়দার পাটোয়ারী অভিযোগ করেছেন, সারাদিন ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও যে কাস্টিং (প্রদত্ত ভোট) দেখানো হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে ভোটে কারচুপি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে প্রার্থী তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচনকে ‘সাজানো’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, নির্বাচন হইছে সরকার বনাম সরকার, নৌকাও সরকারের, স্বতন্ত্রও সরকারের। মনে হচ্ছে দেশটা একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফরিদুপর-১ আসনের প্রার্থী বিএনএম’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর ও মহাসচিব মো. শাহজাহান অভিযোগ করেন, ভোটের দিন সকাল থেকে ব্যালট কেটে বাক্স ভরা শুরু হয়। বিকেলে তা শেষ হয়।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এবারের নির্বাচনকে ‘ডামি নির্বাচন’ তকমা দিয়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন, প্রবন্ধ, নিবন্ধ এবং সম্পাদকীয় পড়ে বোঝা যায় এবারের নির্বাচন দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি সংকটের সৃষ্টি করবে। শুধু তাই নয়, প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। এর দায় কার? ২০১৪ সালের বিনাভোট ১৫৩ আসনের নির্বাচিত হওয়া এবং ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচনের পর দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক মহলের প্রত্যাশা ছিল ২০২৪ সালের নির্বাচন জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু যার এই দায়িত্ব ছিল সেই নির্বাচন কমিশন কি তা পূরণ করতে পেরেছে? নাকি পূরণের চেষ্টা করেছে। গত বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সিইসি, অন্যান্য কমিশনার এবং কমিশন সচিব একের পর এক স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। ‘কখনো নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নেই; কখনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনা ইসির কাজ নয়; কখনো স্যাংশন এলে সে নির্বাচন করব কেন; কখনো নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাইলে রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা প্রয়োজন; কখনো নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে’ ইত্যাদি স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন ইসির দায়িত্বশীলরা। সংবিধানের ১১৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন এবং স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে উহার জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয়। (ঘ) প্রধান নির্বাচন কমিশনার’ অর্থ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং, ক্ষেত্রমত, সাময়িকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি। (৬) প্রত্যেক নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থাদি গ্রহণ এবং ভোট গ্রহণের নিমিত্ত ব্যক্তিবর্গ নিয়োগ, যেমন- রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসার নিয়োগ করেছেন। নির্বাচনের সময় দেখা গেছে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করেছেন সিইসি। তিনি কি সফল হতে পেরেছেন? নির্বাচনের ভোট কাস্টিংয়ের সংখ্যা একেক সময় একেক রকম, সিইসির ভোট কাস্টিংয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি, অতঃপর ঘুমিয়ে থাকার কারণে ভোটসংখ্যা কম বলা এবং ভোটের ফলাফল প্রকাশের মঞ্চ থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবের ‘ডিসিদের তালিকা দেয়া আছে পড়ে যাব, নির্বাচনকে বিতর্কিত করে ফ্যালাইসি স্যার’ বক্তব্য বলে দেয় নির্বাচন কমিশনই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিতর্কিত করে ফেলেছে। দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় যে সিইসি ঘুমিয়ে থাকেন তিনি কী বিতর্কিত নির্বাচনের দায় এড়াতে পারেন?

 

https://dailyinqilab.com/national/news/632629