১৮ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৪:৩৮

শিল্প-কারখানায় উৎপাদনে ধস

গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কালিয়াকৈর, কাশিমপুরের অনেক কারখানা বন্ধের পথে

 

সারা দেশে গ্যাসের তীব্র সংকটে শিল্প উৎপাদনে ধস নামছে। বিশেষ করে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় বিরাজ করছে চরম স্থবিরতা। গ্যাস সংকটে গাজীপুরের কোনাবাড়ি, কালিয়াকৈর, কাশিমপুর ও এর আশপাশের এলাকার বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে। গত এক সপ্তাহ ধরে এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। শ্রমিকরা কারখানায় আসছেন ঠিকই কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে কাজ করতে পারছেন না।

এতে কারখানা মালিকরা পড়েছেন মহাবিপদে। প্রতিদিন তাদের লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। গাজীপুর ও ফতুল্লায় কয়েক দিন ধরে গ্যাসের চাপ শূন্যে নেমেছে। এতে পোশাক কারখানা, ডাইং কারখানা, স্পিনিং, টেক্সটাইল, রি-রোলিং মিলসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা না হলে রপ্তানি বাণিজ্যে মারাত্মক ধস নামার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া এতে দেশের অর্থনীতিও চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। 

কারখানার মালিকরা বলছেন, বয়লার চালানোর জন্য প্রতি ঘনফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকা দরকার। কিন্তু অনেক কারখানায় চাপ কমে প্রতি ঘনফুটে ১ থেকে ২ পিএসআইতে দাঁড়িয়েছে। কোথাও কোথাও শূন্যে নেমেছে। তারা বলেন, একদিকে ডলার ক্রাইসিস অপরদিকে গ্যাস সংকট চলতে থাকলে এ সেক্টরে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। 

পাশাপাশি গ্যাস সংকটে আবাসিক গ্রাহকরাও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে বাসা-বাড়িতে রান্নার কাজ হচ্ছে মাটির চুলায়, কোথাও সিলিন্ডার গ্যাসে। সুযোগ বুঝে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবসায়ীরাও দাম নিচ্ছেন যার যেমন খুশি। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন আবাসিক গ্রাহকরাও। সিএনজি পাম্পেও গ্যাস সংকট। লাইনে গ্যাস নেই। প্রায় প্রতি পাম্পেই প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের দীর্ঘ জট দেখা যাচ্ছে। বুধবার সরেজমিন বিভিন্ন কারাখানা ও আবাসিক এলাকা ঘুরে এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

গ্যাস সংকটের বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে দেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কাজ চলছে। তবে সম্প্রতি যে সংকট চলছে সেটি কিছুদিনের মধ্যে সমাধান হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করা গ্যাস সরবরাহে দেশে দুটি রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) আছে। 

গত নভেম্বরে একটি ইউনিট সংস্কারের জন্য পাঠানো হয়। যে কারণে গ্যাসের সংকট বেড়েছে। সংস্কার শেষ হওয়ার দু-একদিনের মধ্যেই ইউনিটটি গ্যাস সরবরাহ শুরু করবে। কিন্তু একই সঙ্গে অন্য একটি এফএসআরইউ সংস্কার কাজের জন্য পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই ইউনিটটির সংস্কার কাজ চলবে। এরপর আগামী রমজান ও বোরো সেচ মৌসুমকে সামনে রেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

দুটি ইউনিট চালু থাকলে প্রতিদিন প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয়। বর্তমানে একটি ইউনিট প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে। অর্থাৎ দ্বিতীয় ইউনিটটি চালু হলেও গ্যাস সরবরাহ বাড়ছে না। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

গাজীপুর ও কালিয়াকৈর : গাজীপুরে বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এগুলোর অন্যতম উপাদান হচ্ছে প্রাকৃতিক জ্বালানি। অর্থাৎ গ্যাসের ওপর ভিত্তি করেই এসব এলাকায় শিল্প গড়ে ওঠে। এখন সেই গ্যাসেরই চলছে তীব্র সংকট। এ কারণে এসব এলাকার অনেক শিল্প-কারখানা প্রায় বন্ধের জোগাড় হয়েছে। শিল্প মালিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এলাকার তৈরি পোশাক শিল্পগুলো বিদেশি কার্যাদেশ সময়মতো সরবরাহ করতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছে। 

কোনাবাড়ী শিল্পাঞ্চল (বিসিক) এলাকার লাইফ টেক্সটাইল (প্রাইভেট) লিমিটেড ও কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরের ময়জউদ্দিন টেক্সটাইল লিমিটেডের পারসোনাল অফিসার (এমডি এসআইআর) এমডি হাসান বলেন, মাস ঘুরতেই শ্রমিকের বেতন-ভাতা গুনতে হয় ১০ থেকে ১১ কোটি টাকা। অথচ গ্যাস সংকটে ফ্যাক্টরি চার দিন ধরে বন্ধ। বিকল্প হিসাবে মাত্রাতিরিক্ত? খরচে সিএনজি ও ডিজেলের মাধ্যমে ব্রয়লার ও জেনারেটর চালু করা হয়েছে। গত এক-দেড় মাস ধরেই গ্যাস সংকটে কারখানা চলেছে ঢিমেতালে। 

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সফিপুরের ময়জউদ্দিন টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে ৪ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এখানে দৈনিক বয়লার চালাতে ১৫ পিএসআই এবং জেনারেটর চালাতে লাগে ১০ পিএসআই, কিন্তু সেখানে গ্যাসের সরবরাহ জিরো (শূন্য)। আমরা ভেবেছিলাম নির্বাচনের পর হয়তো ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু গ্যাসের সংকট আরও প্রকট হয়েছে। ৪ দিন কারখানা বন্ধ থাকার পর বায়ারের অর্ডার ডেলিভারির স্বার্থে আমরা কয়েকগুণ বেশি খরচে (ডিজেল ও সিএনজি) বিকল্প ব্যবস্থায় কারখানা চালু রাখা হয়েছে। 

এবিএম ফ্যাশন লিমিটেডের এজিএম মিলন বলেন, যেখানে ফ্যাক্টরির গ্যাস বিল আসত মাসে কোটি টাকা সেখানে ডিজেল দিয়ে চালানোর ফলে ঘণ্টায় খরচ হচ্ছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ অবস্থায় ফ্যাক্টরির বয়লার মেশিন চালাতে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছে। অনেকে বায়ারের কাছ থেকে ১ মাস ১৫ দিন অতিরিক্ত সময় চেয়ে নিতে হচ্ছে। তারপরেও সময়মতো ডেলিভারি দেওয়া যাচ্ছে না। 

এ এলাকার শতভাগ রপ্তানিমুখী অন্তত ২৫টি গার্মেন্টস কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি ও মোবাইলে কথা বলে একই চিত্র পাওয়া গেছে। খাড়া জোড়া এলাকার এসএ স্পিনিং মিলসে গ্যাস সংকটের কারণে সুতা তৈরির বেশিরভাগ মেশিন চলছে না। এ কারখানায় সুতা তৈরির ৪০টি মেশিন থাকলেও তাদের ১২টি মেশিন ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ। কারখানার সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. তালেবুর রহমান বলেন, ছয় মাস ধরে গ্যাস সংকটে স্পিনিং মিল বন্ধের উপক্রম হয়েছে। যেখানে মোট ৪০টি সুতা তৈরির মেশিন চালাতে ১০ পিএসআই গ্যাস লাগে। সেখানে প্রতিদিন গ্যাসের চাপ পাচ্ছি ১ থেকে দেড় পিএসআই। এ কারণে প্রতি মাসে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছি।

বুধবার কোনাবাড়ী, কাশিমপুর ও সফিপুর এলাকার এবিএম ফ্যাশন লি.র এজিএম মো. মিলন, কেয়া স্পিনিং নিটিং অ্যান্ড ডাইংয়ের জিএম (অ্যাডমিন) পরিমল বাবু, ইসলাম গামের্ন্টস লি.র ম্যানেজার (এইচআর) মি. রেজা, গ্রুপের এজিএম ইউছুফসহ, ওই এলাকার রিপন জিন্স অ্যাপারেল্স লিমিটেড, স্বাধীন গার্মেন্টস লিমিটেড, জিন্নাত অ্যাপারেলস (ডিবিএল), এমএম নিট অ্যাপারেলস লিমিটেড, নোভেলী গার্মেন্টস লিমিটেড, তুসুকা ডেনিম লিমিটেড, কটন ক্লাব (মন্ডল গ্রুপ) লিমিটেড, ফ্যাশন পয়েন্ট লিমিটেড, মেডিট্রাক্স সোয়েটার লিমিটেড, সফিপুর পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার ফারিস্ট, ইকো, অ্যাপেক্স, ডালাস, রহিম টেক্সটাইল ও কোনাবাড়ী বিসিক এলাকার বাজন অ্যাপারেলস, তমিজউদ্দিন, মাসরিকসহ অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে গ্যাসের এমন তীব্র সংকটের চিত্র পাওয়া গেছে। 

ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ) : ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরী ও কুতুবআইলের শিল্প-কারখানাগুলোয় এক সপ্তাহ ধরে গ্যাস নেই। ফলে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা, ৪৫০টি ডাইং কারখানা, স্পিনিং, টেক্সটাইল, রি-রোলিং মিলসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফতুল্লার সস্তাপুরের এপি নিট ডাইং কারখানার পরিচালক কামাল হোসেন জানান, যেখানে আমাদের উৎপাদন হতো ১০০ টন, সেখানে গ্যাসের অভাবে উৎপাদন নেমে এসেছে ৩০-৪০ টনে। তাও এ উৎপাদন করতে হচ্ছে নরসিংদী থেকে। সাবকন্ট্রাক্টে অর্ডার দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। এতে লাভ না হলেও পার্টি ধরে রাখার চেষ্টা করছি। এভাবে চলতে থাকলে প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নেওয়া কঠিন হবে। 

নিট পোশাক শিল্পের মালিকরা যুগান্তরকে বলেন, এ মুহূর্তে গ্যাস সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে নিটওয়্যার সেক্টর। যেখানে আমাদের ১৫ পিএসআই সংযোগ নেওয়া, সেখানে আমাদের ৭-১০ পিএসআই পর্যন্ত গ্যাসের চাপ থাকে। ৩ মাস ধরে তা আরও কমে মাত্র ০.৫ থেকে ১ পিএসআই-এ দাঁড়ায়। আর এক সপ্তাহ ধরে এ চাপ জিরোতে নেমেছে। ফলে উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা বলেন বর্তমানে প্রতিটি কারখানায় উৎপাদন প্রায় বন্ধ। ফলে উৎপাদনে বড় ধরনের ধস নামবে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে একটা বড় ধরনের সংকটে পড়বে নিটওয়্যার সেক্টর। 

দেশের অন্যতম স্টিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাস সংকটে তাদের জ্বালানি চাহিদার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিজেল ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে তাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। গ্যাস সংকটের কারণে বর্তমানে প্রতি টন রড উৎপাদন করতে খরচ বেড়েছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

সিরামিক শিল্পের অন্যতম প্রধান উপকরণই গ্যাস। ফলে চলমান সংকটে এই ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতিও হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ফার সিরামিকস লিমিটেডের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, তাদের কারখানায় গ্যাসের চাপ কমপক্ষে ১০ পিএসআই (চাপের একক) থাকতে হয়। কিন্তু দিনের বেলা বেশিরভাগ সময়ই চাপ থাকে দুই থেকে চার পিএসআই। ফলে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে।

মোহাম্মদ আলী খোকন
শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত
-সভাপতি, বিটিএমএ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে নারায়ণগঞ্জের সব টেক্সটাইল মিল বন্ধ রয়েছে। আড়াইহাজার ও ভুলতায় কিছু কারখানা গ্যাস পেলেও তা দিয়ে উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় আগামীতে শিল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে তা বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, গ্যাস সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত টেক্সটাইল মিলগুলো। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গ্যাসের ট্যারিফ ৬১৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০০৯ সালের আগস্টে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ১৮ পয়সায় এবং শিল্প সংযোগের জন্য প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ৮৬ পয়সায় গ্যাস দেওয়া হতো। এখন তা বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে, এলএনজি আমদানির বাড়তি খরচ মেটাতে এই মূল্যবৃদ্ধি। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ট্যারিফ বৃদ্ধির আগে এবং পরে গ্যাস সরবরাহ অবস্থা শোচনীয়ই রয়ে গেছে। বর্তমানে অসহনীয় পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এখন বাড়তি দাম দিয়েও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। 

মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোয় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এখন গ্যাস সংকটের কারণে সেটি আরও বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ১৬ বিলিয়ন ডলারের ঝুঁকিতে পড়বে। ১০ লাখ মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। উৎপাদন করা না গেলে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শঙ্কাও তীব্র হবে। শিল্পের স্বার্থে সরকারকে গ্যাস সরবরাহের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। কোন খাতে গ্যাস সরবরাহ করলে তার ফিডব্যাক কী পাওয়া যাবে সেটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রেখে জ্বালানিনীতি প্রণয়ন জরুরি। 

সৈয়দ নজরুল ইসলাম
শিল্পের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা 
-প্রথম সহসভাপতি, বিজিএমইএ
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে তৈরি পোশাকশিল্প কঠিন সময় পার করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় পোশাকের চাহিদা কমেছে। রপ্তানি ও অর্ডারে যার প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে মজুরি বৃদ্ধি শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা হ্রাস করেছে। এ অবস্থায় শিল্পে গ্যাস সংকট মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সৈয়দ নজরুল বলেন, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের মতো চট্টগ্রামেও গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক কারখানা উচ্চ প্রযুক্তির মেশিনের কারণে নিজেরাই ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশন করে থাকেন। ছোট কারখানাগুলোর বয়লার গ্যাসে চলে। গ্যাস সংকটের কারণে ফিনিশিংয়ে দেরি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পোশাকশিল্প প্রাইসিংয়ের চ্যালেঞ্জে আছে। কমে যাওয়া দাম কীভাবে শিল্পের উৎপাদন খরচের সঙ্গে এডজাস্ট করা যায়, সবাই সেদিকে নজর দিচ্ছেন। কিন্তু গ্যাস সংকট অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। শিল্পের স্বার্থেই নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে গ্যাস রেশনিং করা যেতে পারে।  

মোহাম্মদ হাতেম
সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে
-নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ
বাংলাদেশ নিটপণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছিল সস্তা শ্রম ও গ্যাসের ওপর ভিত্তি করে। এখন দুটোই ব্যয়বহুল। 

নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের শিল্প এলাকায় গ্যাস সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ৩ মাস যাবৎ কারখানায় গ্যাসের চাপ কম ছিল। আগের দিনে গ্যাস পাওয়া না গেলেও রাত ১১টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত পাওয়া যেত। কিন্তু এক সপ্তাহ যাবৎ অবস্থা খুবই নাজুক, কারখানায় একেবারেই গ্যাস নেই। 

দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই গ্যাসশূন্য। নারায়ণগঞ্জে প্রায় ৮০০ গ্যাসনির্ভর কারখানা রয়েছে, যার সবগুলোই প্রায় বন্ধ। শ্রমিকদের বসিয়ে বেতন দিতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েই গত বছর ব্যবসায়ীদের দাবি উপেক্ষা করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। কষ্ট সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা তা মেনে নিয়েছে। 

জানুয়ারি মাসে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এ অবস্থায় গ্যাস সংকটের কারণে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। রপ্তানি করতে না পারলে মালিকরা শ্রমিকদের নতুন মজুরিতে বেতন দেবে কীভাবে। তাই আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রপ্তানিমুখী শিল্পে জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করা উচিত। 
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে সহসা এ সংকট সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নেই। নারায়ণগঞ্জ জোনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখে সার উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। সার কিন্তু উৎপাদন না করেও আমদানি করা যেতে পারে, কিন্তু শিল্পে গ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। আমদানিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উৎপাদনের চেয়ে খরচ কম পড়ে। সরকারকেই অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/764271