১৮ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৪:৩৩

কমবে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়বে ঋণের সুদ

 

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ১১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। একই সাথে বাড়ানো হয়েছে নীতি সুদহার। নীতি সুদহার পৌনে ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে সব ঋণের সুদহার বাড়বে। বাড়বে বিনিয়োগ ব্যয়।
গতকাল অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য মুদ্রানীতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে না আসা পর্যন্ত এমন সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর যথাক্রমে কাজী ছাইদুর রহমান, এ কে এম সাজেদুর রহমান খান, আবু ফরাহ মো: নাছের ও নূরুন নাহার, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো: হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হকসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অর্থবছরের শুরুতে মূল্যস্ফীতি কমানো ও বেসরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রধান এ দুই সূচকের কোনোটিরই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছিলেন, তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানান পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে এ চলে আসবে। কিন্তু, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.৪১ শতাংশ, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ১.৫ শতাংশ বেশি। এমন এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, গতবারের মুদ্রানীতিতে নেয়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও আগের চেয়ে বৃদ্ধি পায়নি, বরং নভেম্বর থেকে কমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একটু সময়ের প্রয়োজন হয়। বেশ সময় লেগে যায়। এবারো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকারে রেখে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করার কথা বলেন গভর্নর।

কয়েকটি ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। কিন্তু এর পরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে তহবিল জোগান দিয়ে গেলেও ব্যাংকের পর্ষদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। কেন এমনটি করা হচ্ছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাতের অনিয়ম রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি কাউকে ভয় করেন না উল্লেখ করে বলেন, সে জন্য তিনি নিয়মিত সরকারি চাকরি ছেড়ে চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে এসেছেন।

গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাতের অনিয়ম রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি কাউকে ভয় করেন না উল্লেখ করে বলেন, সে জন্য তিনি নিয়মিত সরকারি চাকরি ছেড়ে চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে এসেছেন।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা রিভার্স রোপো সুদহার (স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি-এসডিএফ) বিদ্যমান ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। নীতি সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্ন সীমার মধ্যে ব্যবধান ২০০ শতাংশ পয়েন্ট থেকে কমিয়ে ১৫০ শতাংশ পয়েন্টে নামিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ নীতি সুদহার ৮ শতাংশের সাথে সর্বোচ্চ ১৫০ বেসিস পয়েন্ট যোগ করে এসএলএফ সুদহার ও নিচে ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বিয়োগ করে এসডিএফ সুদহার নির্ধারণ করা হবে। খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। কিছু ব্যাংক তারল্য সঙ্কটে ভুগছে। প্রতি দিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা উপকরণের মাধ্যমে টাকার জোগান দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়ে গভর্নর বলেন, আমরা করপোরেট গভর্নেন্স নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তা নতুন বছরও অব্যাহত থাকবে। আমানতকারীদের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো পদক্ষেপ নেবে। কারণ আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা দেয়াই হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূলনীতি।

নতুন মুদ্রানীতিতে বিদেশী মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি ব্যবহারের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। তবে এ পদ্ধতিতে ডলারের বিনিময় হার কত হবে, তা বলা হয়নি। পরে তা জানানো হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

প্রসঙ্গত, উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক বছরে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আইএমএফের ঋণের শর্তানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহারের করিডোর প্রথা চালু, সুদহারের সীমা প্রত্যাহার, ডলারের একক দাম, রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়নসহ নানা উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি রোধে মুদ্রা সরবরাহনির্ভর নীতি থেকে সরে এসে সুদহার লক্ষ্য করে মুদ্রানীতি প্রণয়ন শুরুর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

 https://www.dailynayadiganta.com/first-page/807245