১৭ জানুয়ারি ২০২৪, বুধবার, ১২:৩৯

হাসপাতালে রোগীর চাপ

 

প্রকৃতিতে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ঠাণ্ডায় ঠকঠক কাঁপছে সারাদেশ। ঘন কুয়াশার চাদরে ছেয়ে আছে উত্তরাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে মধ্যাঞ্চল, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। সূর্যের দেখা মেলেনি সপ্তাহখানেক। গত কয়েক দিনে শীতের প্রকোপ বেশ ভালোই টের পেয়েছে এমনকি রাজধানীবাসীও। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ, যাতে আক্রান্তদের বেশিরভাগই ৫ বছরের কম বয়স্ক শিশু। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। এরই মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে শিশুমৃত্যুর হারও।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ঠাণ্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ভাইরাস ডায়রিয়ার প্রকোপই এখন বেশি। আর এতে নবজাতক ও শিশুদের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধরাও। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের সর্বশেষ দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সারাদেশে ৩ হাজার ৪৯৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হয় ১ হাজার ৯৬ জন। ভাইরাল ডায়রিয়াজনিত কারণে ভর্তি হয় দুই হাজার ৪০২ জন। এই সময়ে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়। অবশ্য ইনকিলাবের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য মতে, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ এবং রংপুরে গত এক সপ্তাহে শীতেই মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলায়। আর ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি রোগী বেশি ছিল ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজার জেলায়। হাসপাতালগুলোতে শয্যা না পেয়ে অনেকেই মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভর্তি রোগীদের ৮০ শতাংশই শিশু ও বৃদ্ধ। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর চাপ লক্ষ করা গেছে রাজধানীতেও।

শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ভাইরাসের বংশ বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ থাকায়, দূষিত পানি পান ও খাবার গ্রহণের কারণে এই সময়ে শিশুরা ডায়রিয়াসহ অন্যান্য ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে শীতে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে শিশুদের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। দেশের অনেক এলাকায় তাপমাত্রা ১০-এর নিচে নেমে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালেও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত সোমবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল বরিশালে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দেশের বেশিরভাগ এলাকায় ্এক সপ্তাহ ধরে দিনভর ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের অনুভূতি থাকছে। গতকালও বরিশাল, রংপুর, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগের বেশিরভাগ এলাকায় শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি তাপমাত্রা ছিল। কুয়াশা বেশি থাকায় সৈয়দপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠা-নামায় সমস্যা হয়েছে। ফেরি চলাচলেও বিঘ্ন ঘটেছে। বরিশাল, রংপুর, সিলেটসহ দেশের অনেক স্থানেই চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আর তাই প্রচণ্ড শীতে ঢাকাসহ সারাদেশেই জনজীবন বিপর্যদস্ত। শীত থেকে রক্ষা পেতে মানুষ রাস্তার পাশে, খোলা স্থানে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করার চেষ্টা করছেন। তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পুরো জানুয়ারিজুড়েই শীতের প্রকোপ থাকবে। আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাসে বলেছে। এতে শীতের প্রকোপ আরো কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদদের মতে, মূলত কুয়াশার কারণে দেশে তীব্র শীতের এলাকা বাড়ছে। একসময় জানুয়ারিতে দেশের উত্তরাঞ্চল ও সিলেট বিভাগে মূলত তীব্র শীতের অনুভূতি থাকত। উপকূলীয় জেলাগুলোতে শীত পড়ত কম। কারণ, সমুদ্রের কাছাকাছি এলাকায় জলীয় বাষ্প বেশি থাকে। ফলে হিমালয় পেরিয়ে আসা শীতের শুষ্ক বাতাস উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে উত্তরাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে মধ্যাঞ্চল, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত তীব্র শীত থাকছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, তা মূলত কুয়াশার কারণে ঘটছে। এদিকে দেশব্যাপী চলমান এ শৈত্যপ্রবাহে যেসব জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেখানে স্কুল বন্ধ রাখা যাবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।

গত নভেম্বর মাস থেকে দেশে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। আক্রান্ত হচ্ছেন শিশুসহ সব বয়সীরা। গত সোমবার পর্যন্ত গত আড়াই মাসে ৫৯ জনের মৃত্যু ও ২ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ ৯৪ হাজার ৬১৭ জনের ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে। এরপরই রয়েছে ঢাকা বিভাগের। এই বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার ৩১২ আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকার পরই চট্টগ্রাম ও খুলনায় ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। তবে শীতকালে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণজনিত এবং ডায়রিয়াসংক্রান্ত এই দু’টি বিষয়ে সারাদেশ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

শীত এলেই শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এবং মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। শীতকালে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, স্ট্রোক ও লিভারের রোগীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেছেন, শীতকালে বেশি লোক মারা যান ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, স্ট্রোক ও লিভারজনিত রোগে। কারণ তারা অল্প শীতে বেশি কাবু হয়ে যান। ফলে এই ধরনের রোগীরা শীতে বেশি মারা যান। তাই তাদের অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

শীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা কমেছে। কোনো কোনো অঞ্চলে শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। বরাবরের মতোই প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নিম্ন আয়ের মানুষ। ঠাণ্ডার মধ্যে কাজ করতে ভালো লাগছে না। কিন্তু কাজ না করলে তো সংসার চলবে না, বলেন কুড়িগ্রাম জেলার আশিক হোসেন। পেশায় তিনি একজন রাজমিস্ত্রি। রংপুরের রিকশাচালক মো. সুজা মিয়া বলেন, ‘ঠাণ্ডা, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা। ঠাণ্ডার জন্য বের হতে চাচ্ছিলাম না। তারপরও সংসারের কষ্ট হবে বলে বাড়ালাম। আমাদের রিকশা এখন তেমন কোনো ভাড়াও নাই। কামাইও করতে পারি নে। সারাদিনে তিন-চারশ’, পাঁচশ’ টাকা কামাই করতে আমাদের রাত হয়ে যায়। এই টাকা দিয়ে তো সংসার চলে না। ঠাণ্ডার মধ্যে তো বেশিক্ষণ গাড়িও চালাইতে পারি না’। বরিশালে ছিন্নমূল ষাটোর্ধ্ব গনি মিয়া বলেন, শীতে খুব কষ্ট পাইতে লাগছি। একটা কম্বলও পাই নাই। ছেঁড়া-পাতলা একটা খ্যাতা (কাঁথা) দিয়ে শীত মানে না। রাইতে ঘুমাইতে পারি না।

শীতের প্রভাব দেখা দিয়েছে জনস্বাস্থ্যের ওপরও। ফলে প্রতিদিনই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ। আর এসব মানুষের মধ্যে শিশু রোগীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। একই ধরনের চিত্র রাজধানীর হাসপাতালেও দেখা গেছে। গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে সরেজমিন শিশু রোগীর চাপ দেখা গেছে। ২ দিনের চেষ্টার পর শিশু হাসপাতালে নিজের ৬ মাস বয়সী সন্তানকে ভর্তি করাতে পেরেছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মনিরা বেগম। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঠাণ্ডাজনিত কারণে তার মেয়ের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। বুকের মধ্যে কফ জমে আওয়াজ হচ্ছিল। স্থানীয় চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, তার মেয়ের নিউমোনিয়া হয়েছে। এখন তিনি এই হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করিয়েছেন ভালো চিকিৎসার জন্য। এদিকে অনেক অভিভাবক হাসপাতালে বেড না পেয়ে আউটডোরে চিকিৎসক দেখিয়ে সন্তান নিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ভর্তি হওয়া এবং ফিরে যাওয়া শিশুদের বেশির ভাগই সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্সরা জানিয়েছেন, শীতের তীব্রতা বাড়ায় প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ।

শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. জাহাঙ্গীর আলম ইনকিলাবকে বলেছেন, হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আসছেন। দেশব্যাপী শীত বাড়ায় রোগীর চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে। চলতি মাসে এ পর্যন্ত ২৪৬ শিশু ভর্তি হয়েছে শীতজনিত রোগে। গত মাস ডিসেম্বরে যা ছিল ৪২৫ এবং গত নভেম্বরে ছিল ৩৮৮ জন। তিনি বলেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতালে নিউমোনিয়া ওয়ার্ডই রয়েছে। শীত বাড়ায় সামনে রোগী বাড়লে চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা নেয়ারও কথা জানান ডা. জাহাঙ্গীর আলম। রাজধানীর মিরপুর এমআর খান শিশু হাসপাতালের আউটডোর ঘুরেও ঠাণ্ডাজনিত শিশু রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঠাণ্ডাজনিত রোগে নবজাতক থেকে শুরু করে ৭-৮ বছরের অনেক শিশু ভর্তি রয়েছে।

শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ থাকায়, দূষিত পানি পান ও খাবার গ্রহণের কারণে এই সময়ে শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়রিয়া নিরাময়ের আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর বি’র) মহাখালী সেন্টারের তথ্য মতে, গত সোমবার ৪শ’র বেশি শিশু ডায়রিয়া রোগী ভর্তি ছিল। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩শ’ ছাড়িয়েছে। গত কয়েক দিন থেকেই বাড়ছে ডায়রিয়াজনিত কারণে শিশু ভর্তি। আইসিডিডিআর বি’র চাঁদপুর সেন্টারের তথ্য মতে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫০ শিশু ভর্তি হচ্ছে। ভর্তির এ সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি।

তীব্র শীতের এলাকা বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদফতরের সাবেক পরিচালক ও জলবায়ু গবেষক সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, কুয়াশার কারণে জানুয়ারিতে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকাজুড়ে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকছে, যা এক সময় শুধু উত্তরাঞ্চল ও সিলেটে বেশি দেখা যেত। এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে।

ইতোমধ্যে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ রয়েছে তাদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, শীতে শ্বাসকষ্ট, ব্রংকাইটিজ, অ্যাজমা, হাঁপানি এ ধরনের রোগীর সমস্যা বেড়ে যায়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনহেলার, নেবুলাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাইরে বের হতে গেলে যতটা সম্ভব শীতবস্ত্র পরিধান করে নিজেকে সুরক্ষিত করে বের হতে হবে। এছাড়াও ঘরের ভেতরে থাকলেও রুম হিটারের মাধ্যমে উষ্ণ রাখার চেষ্টা করতে হবে।

শীতে শিশুদের ডায়রিয়াজনিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বাইরের খাবার থেকে বিরত থাকা এবং অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, শীতে ভাইরাসের ছড়াছড়ি থাকে। এদিকে শিশুরা অস্বাস্থ্যকর খাবারে আকৃষ্ট হয়। ফলে স্কুলের সামনে বা রাস্তার পাশে খোলা পানি, ধুলোবালি জমা ও মাছি উড়তে থাকা খাবার খেলে ভাইরাস পেটে গিয়ে শিশুদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত করে। এ সময়টায় প্রাকৃতিকভাবেই ভাইরাসের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যাও বেড়ে যায়। তাই শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। একই সঙ্গে শীতের পুরো সময়টা পানি খাওয়ার বিষয়েও জোর দিয়েছেন তিনি। কারণ পানির অভাবে শরীরের এনজাইমগুলো শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে ঠাণ্ডার ভয়ে পানি না খেলে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি। এছাড়া পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। শীতে ঠাণ্ডা পানির ভয়ে নিয়মিত গোসল থেকে বিরত না থাকার পরামর্শ দিয়ে ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, শীতে শরীর থেকে ঘাম ঝরে না। চামড়া শুষ্কও হয়ে যায়। তাই কোনোভাবেই দীর্ঘ বিরতি দিয়ে গোসল করা যাবে না। কারণ বিরতি দিয়ে গোসল করলেই চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়। তাই কুসুম গরম পানিতে হলেও গোসল সেরে নিতে হবে। বিশেষত বয়স্কদের বাতজনিত সমস্যা বেড়ে যায়। গরম পানিতে গোসল করলে শ্বাসকষ্ট এবং বাতজনিত রোগীরাও আরাম পাবে।

রংপুরে ৮ দিনের শৈত্যপ্রবাহে ১৮ শিশুর মৃত্যু
চলমান শৈত্য প্রবাহে সবচেয়ে বেশি কাঁপছে উত্তরের বিভাগ রংপুর। রংপুর মহানগরীসহ বিভাগের আট জেলায় জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। ঘন কুয়াশায় গত ৮ দিন দেখা মেলেনি সূর্যের। ফলে দিন ও রাতে একই রকম শীত অনুভূত হচ্ছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে এ বিভাগে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক চেয়ে দুই-তিনগুণ বেড়েছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু। গত ৮ দিনে এই হাসপাতালে ১৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

গত রোববার রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের দুইটি ওয়ার্ডের সূত্রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৮০ শয্যার বিপরীতে গত রোববার সকাল পর্যন্ত ভর্তি ছিল তিন শতাধিক শিশু। কোনো কোনো বেডে তিন-চারজন শিশু রোগীকে রাখা হয়েছে। শয্যা সঙ্কটের কারণে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে অনেক শিশুকে। এছাড়া ডায়রিয়া ওয়ার্ডেও ধারণক্ষমতার চারগুণ রোগী ভর্তি আছে বর্তমানে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. ইউনুস আলী বলেন, ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৬০ শিশু ও বয়স্ক রোগী ভর্তি হচ্ছে। এতে রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। বারান্দায়ও আর জায়গা নেই।

ময়মনসিংহ মেডিক্যালে গড়ে ৪০০ শিশু রোগী, ৭ দিনে ১৫ শিশুর মৃত্যু
গত কয়েক দিনের তীব্র শীতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি। হাসপাতালের শিশু বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. বিশ্বজিত চৌধুরী বলেন, রোগীর সংখ্যা বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। শিশু বিভাগের তিনটি ইউনিটে গড়ে প্রায় চার শ রোগী ভর্তি আছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহে এ হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোগী বাড়ায় হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সঙ্কট।

ডা. বিশ্বজিৎ চৌধুরী আরও জানান, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে এক সপ্তাহ ধরে নবজাতকসহ শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তীব্র শীতে শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় প্রতিদিনই শিশু মারা যাচ্ছে। ঠাণ্ডায় বেশি অসুস্থ হওয়ার পর অভিভাবকরা সন্তানদের হাসপাতালে নিয়ে আসছেন। সে কারণে চেষ্টা করেও তাদের বাঁচানো যাচ্ছে না। শিশু ওয়ার্ডের পাশাপাশি মেডিসিন ওয়ার্ডেও ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এমনকি হৃদরোগ ওয়ার্ডেও রোগী ভর্তির জায়গা নেই।

হবিগঞ্জে ৭ দিনে মারা গেছে ১৫ নবজাতক
শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশুমৃত্যু বেড়েছে হবিগঞ্জেও। গত এক সপ্তাহে ১৫ নবজাতক ও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. দেবাশীষ দাস।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত শুক্রবার একদিনে হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিটে (স্ক্যানু) পাঁচ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এক সপ্তাহে এখানে মারা গেছে ১৫ নবজাতক। এছাড়াও হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বুধবার মারা গেছে এক শিশু। বর্তমানে শিশুরোগীর চাপে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ
গত কয়েকদিনের শীতে লক্ষ্মীপুরে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এদের মধ্যে কেউ জ্বর-ঠান্ডা, আবার কেউ সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। এদিকে, আগের তুলনায় হাসপাতালে হঠাৎ রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।

সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শারমিন আক্তার জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বয়স্ক ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া দেখা দিয়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় শিশু ওয়ার্ডে প্রতিটি বেডে দুজন করে রোগী। অটটি বেডের বিপরীতে মেঝেতেসহ মোট ২৪ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর, রামগতি, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সব হাসপাতালের চিত্র প্রায় একই।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আনোয়ার হোসেন জানান, এই তীব্র শীতে বয়স্ক ও শিশুরা নানা রকম ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এরমধ্যে শিশুদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। ঠান্ডাজনিত এসব রোগ এড়াতে শিশুদের গরম কাপড় পরানো, ঘনঘন মায়ের দুধ সেবন করাসহ বাড়তি নজর রাখা এবং সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বরিশালে শয্যার ৭ গুণ রোগী

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৩৬ শয্যার বিপরীতে গতকাল ভর্তি ছিল প্রায় ২৫০ শিশু। তাদের বেশির ভাগই শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত। পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন করে আরো ৭১ শয্যা যুক্ত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। ছয়জন চিকিৎসক ও ১৫ জন নার্স দিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে।

এদিকে সর্দি-জ্বর, নিউমোনিয়া ও অ্যাজমা জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাবে ওষুধ প্রয়োগে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বলছেন, রোগের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের চিকিৎসাপত্র ছাড়া কোনো অবস্থায় প্রয়োগ করা যাবে না অ্যান্টিবায়োটিক। অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগের ফলে বেড়ে যেতে পারে মৃত্যুঝুঁকি। তবে ঠাণ্ডার প্রাদুর্ভাব বেশি থাকায় নবজাতক থেকে শুরু করে অনূর্ধ্ব তিন বছর পর্যন্ত বছর শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। তাই কনকনে শীতে সর্দি-জ্বর ও নিউমোনিয়া থেকে শিশু ও বয়স্কদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনে দৈনিক গোসল করা থেকে বিরত রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ শফি আহমেদ মুয়াজ বলেন, যদি কোনো শিশুর ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে সর্দি বা কাশি হয়, তাহলে তার নাক পরিষ্কার করে দেওয়া এবং কুসুম গরম পানি খাওয়ানো জরুরি। এ সময় অযথা অ্যান্টি-হিসটামিন বা অ্যান্টি-বায়োটিক জাতীয় ওষুধ সেবন করানো থেকে বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের।

রাজধানী ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. রুহিনা তাসমিন বলেন, দুই থেকে তিন বছরের শিশুদের প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। এ বছর অস্বাভাবিক শীত; তাই আরেকটু বড় বাচ্চাদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য গোসল করা থেকে বিরত রাখাই শ্রেয়। আবার যদি গোসল করানো হয়, অবশ্যই শিশুকে ভালোভাবে মুছিয়ে শুকাতে হবে। বলেন, শূন্য থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিশু সুরক্ষায় মায়েদের উচিত বুকের দুধ খাওয়ানো, এটা বড় ধরনের প্রতিষেধক এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করে। আর যেসব শিশু বুকের দুধ পান করানো হয়, তাদের নিউমোনিয়ার ঝুঁকি অনেক কম।

স্টাফ রিপোর্টার, গাইবান্ধ থেকে জানান, গাইবান্ধার সর্বত জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত কুয়াশার কারনে সড়কে লাইট জ¦ালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ঘন কুয়াশার ফলে ঠান্ডা জনিত কারনে শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে । ফলে এ সব অসুস্থ রোগীরা হাসপাতালে ভীড় করছে। শিশুরা শীত জনিত রোগ বিশেষ করে ডায়রিয়া ও নিমোনিয়া আক্রান্ত হচ্ছে এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা শ^াসকষ্ট ভুগছে। তাই চিকিৎসার জন্য তারা হাসপাতালে ভীড় জমাচ্ছে। এ ব্যাপরে গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মাহাবুব হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান হঠাৎ করে অতিরিক্ত শীত পরায় শিশু ও বৃদ্ধরা শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারনেই এসব রোগীরা হাসপাতালে আসছে।

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুর-চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা পারের বসতিরা গত তিন দিনের তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলার ভাঙন কবলিতরা পদ্মা পারের বিভিন্ন বেড়িবাঁধ, ও উন্মুক্ত ফসলী মাঠের মধ্যে আশ্রিত, পরিবারগুলো তুষারাচ্ছন্ন বাতাস আর হাড় কাঁপানো শৈত্য প্রবাহে জবুথবু হয়ে পড়েছে। এসব শীতার্ত পরিবারে নারী, শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ, আবাল বনিতা সহ গবাদী পশুর মধ্যে দেখা দিচ্ছে শীতজনিত রোগবালাই। তীব্র শীতের কবল থেকে রক্ষা পেতে গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে অনেক দিন মজুররা। ফলে কর্মহীন জীবন কাটাচ্ছে হতদরিদ্র পরিবারগুলো। এদের মধ্যে বেশীরভাগ শ্রমজীবী, মজুর ও জেলে পরিবার রয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে ইরি ও বোরা ধান রোপনের ধুম পড়েছে। তাই ধান রোপনের কাজগুলো কাদা পানির ফলে উপজেলার বেশীরভাগ বৃদ্ধ কৃষক ও শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারে মাঘের শুরুতে আবারও জেঁকে বসছে শীত। একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমে নেমে এসেছে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পুরো জেলাজুড়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিন রাত সমান তালে বইছে কনকনে হিমেল হাওয়ার সাথে শৈত্যপ্রবাহ। ঘর থেকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বেড় হচ্ছেন না। যারা বের হচ্ছেন তারা গরম কাপড় পরিধান করে বের হচ্ছেন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কর্মকর্ত বিবলু চন্দ্র জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশা কেটে গেলে তাপমাত্রা আরও নামতে পারে। মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক বিনেন্দ্র ভৌমিক জানান, শুধু শিশুদের জন্য সিট রয়েছে ৩৯টি। গত সপ্তাহে শীতজনিত রোগে হাসপাতালে শিশু ভর্তি ৭০ থেকে ৭৫ জন ছিল। যা প্রায় দ্বিগুণ ভর্তি ছিল। বর্তমানে শিশু ভর্তি কমে আসছে। এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গুলোতে শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। পৃথক ভাবে প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে। ফুটপাতে গরম কাপড়ের দোকানে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ভিড় প্রতিদিন ভাড়ছে।

দিরাই (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গত এক সপ্তাহ পর পৌষের শেষ দিকে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও ঘন কুয়াশা আর দমকা হাওয়ায় জনজীবনে নেমে এসেছে ছন্দপতন। দিনে তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াল হলেও রাতে ১৪ ডিগ্রিতে নেমে আসে। বৃষ্টির মতো টপ টপ করে কুয়াশা পড়ে। ভোর রাত ও সকালে ঘন কুয়াশায় দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষজন নিয়মিত কাজ করতে পারছে না। এই শীতে দেখা দিয়েছে নানা রোগ ব্যাধি। এরমধ্যে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, চর্ম রোগ ও ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। তীব্র শীতে বিভিন্ন বয়সী মানুষ আক্রান্ত হলেও বেশি হচ্ছে শিশুরা। গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যায়ও শিশুরা বেশি বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

দিরাই উপজেলা সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. রায়হান উদ্দিন জানান, এই শীতে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, চর্ম রোগ ও ডায়রিয়া দেখা দেয়। এসব থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে ঠাণ্ডা না লাগানো, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, শীতবস্ত্র ব্যবহার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ গায়ে রোদ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, শীতের প্রকোপে ঠান্ডা জনিত কারণে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে প্রতিদিন গড়ে ৪শতাধিক শিশু অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। এদের অধিকাংশ শিশু শ^াসকষ্ট এবং ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গত ১ সপ্তাহে বৈরী আবহওয়ায় ঠান্ডাজনিত রোগে নবজাত এবং ৪ বছর বয়সের শিশুরা আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছে। হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২ শতাধিক শিশু চিকিৎসা নিতে আসে। এরা সবাই জ্বর সর্দি, শ^াসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় অবস্থান করছে। বর্তমানে এখানে ভর্তি আছে ২১জন শিশু। এদের মধ্যে ডায়রিয়ায় ৩ জন, শ^াসকষ্ট রোগে ১৪জন আক্রান্ত। হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম মাওলা এ তথ্য জানান।

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ঘনকুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় জেঁকে বসেছে শীত। তীব্র শীতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। পৌষের শেষ হাড় কাঁপানো শীতের কামড়ে কাঁপছে উপজেলাবাসী। ঠান্ডায় কাঁপছে মানুষ ও পশুপাখি। ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে শিশু ও বয়স্করা। মাঘের প্রথম কয়েকদিন ধরে চলছে মৃদু মৃদু শৈত প্রবাহ, সোমবার সর্বনিম্ন ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত রোববার বিকেল পর্যন্ত উপজেলার কোথাও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। সকাল থেকেই সর্বত্র ঘনকুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিলো। তাপমাত্রা নেমে আসার পাশাপাশি প্রচন্ড হিমেল হাওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে এলাকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা। মাঘের এই ঘনকুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে উপজেলাতে জেঁকে বসেছে শীত। গরম কাপড় ছাড়া সাধারণত কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি। আক্রান্তরা বেশিরভাগই আউটডোরে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।

https://dailyinqilab.com/national/article/632163