১৬ জানুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:১৬

ব্যাংক রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আস্থা

-ড. মো: মিজানুর রহমান

 

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তথ্য মতে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। কেবল ২০০৮-২৩ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া ২৪টি ঘটনা বিশ্লেষণে এই আত্মসাৎ বা অপচয়ের তথ্য বের হয়ে আসে। পুনঃতফসিলকৃত ঋণ, অবলোপন করা ঋণ, অর্থঋণ আদালতে আটকে থাকা বিপুল অঙ্কের ঋণ, বিশেষ বিবেচনায় নবায়ন করাসহ আরো অনেক ঋণ রয়েছে, যেগুলো খেলাপির যোগ্য। এসব ঋণ যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ চার লাখ কোটি টাকার বেশি হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র ও ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশের চার লাখ কোটি টাকা কত বড় তা দেশের রাজস্ব ঘাটতি, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয়, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ইত্যাদির পরিমাণ বিবেচনা করলে অনুমান করা যায়। উল্লেখ্য, ব্যাংকের এই টাকা জনগণের টাকা।

এই আত্মসাৎগুলো এক দিনে নয়; বরং ধারাবাহিকভাবে হয়েছে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা। গত ১৫ বছরে ব্যাংক থেকে যে অর্থ বের করে নেয়া হয়েছে, তা বর্তমান মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। ব্যাংক খাত দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে মূলত এ খাতের নীতিমালাকে প্রভাবিত করতে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ কাজ করার কারণে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোও আরো বেশি ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরো খারাপ।

 

ব্যাংকিং সঙ্কটের প্রভাব অর্থনীতিতে
ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। ফলে পুরো অর্থনীতি ভয়াবহ নৈরাজ্যকর অবস্থায় পতিত হয়েছে। অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের অবস্থান এতটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কট আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। কী ভয়ঙ্কর ও বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে শ্রীলঙ্কা কত দ্রুত ওভারকাম করতে শুরু করেছে। অথচ আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে তো পড়ছেই। যেভাবে জোড়াতালি দিয়ে অস্বচ্ছ ও সমন্বয়হীনভাবে সমস্যাগুলোর সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আরো বেড়েছে।

ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম এক বছরে ৩০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পতনও ঠেকানো যাচ্ছে না। রেমিট্যান্সের বিপর্যয় আরো গভীর হয়েছে। ডলারের অভাবে ব্যবসায়ী ও শিল্পমালিকরা এলসি খুলতে পারছেন না। দেশের সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে পারে না। অথচ সরকারের প্রতিনিধিরা উন্নয়নের কথা বলে দেশটিকে ঋণের জালে জর্জরিত করে দেউলিয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে। উন্নয়নের নামে সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ফলে দেশ এখন প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা ঋণের চাকায় পিষ্ট। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব, ভ্রান্তনীতি গ্রহণ, নীতির সমন্বয়হীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, সর্বোপরি লাগামহীন দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ সঙ্কট থেকে বের হতে পারছে না।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে ক্যাপিটাল অ্যাডিকুয়েসির অনুপাত ১১ দশমিক ২ শতাংশ, যেখানে ভারতের ১৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সর্বশেষ গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্যাংকিং ব্যবস্থা সাউন্ডনেসে ১৪১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম, যা সাউথ এশিয়ান অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বনি¤œ। অপর দিকে, গ্লোবাল ইকোনমির গবেষণা মতে, বিশ্বের ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় ১৩৬ দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮৫তম, যা ২০০৯ সালের তুলনায় ২২ ধাপ পিছিয়েছে।

বিগ থ্রি হিসেবে পরিচিত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী তিনটি রেটিং এজেন্সি বাংলাদেশের ঋণমান যেভাবে হ্রাস করেছে বা নেতিবাচক সঙ্কেত দিয়েছে, তাতে অর্থনীতি ‘রেড ফ্ল্যাগস’-এ উঠে এসেছে। গত মে মাসে বৈশ্বিক রেটিং এজেন্সি ‘মুডিস’ বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং বিএ-৩ থেকে নামিয়ে বিএ-১ এ পুনর্নির্ধারণ করেছে। গত জুলাইয়ে বাংলাদেশের ‘রেটিং আউটলুক’ হ্রাস করেছে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। দেশের সার্বভৌম ঋণমান দীর্ঘমেয়াদে ‘বিবি মাইনাস’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘বি’ নিশ্চিত করেছে। সর্বশেষ ফিচ রেটিংসও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ‘নেতিবাচক’ ঘোষণা করেছে। বিদেশী ঋণ প্রদানকারী ও বিনিয়োগকারীরা আর আস্থা রাখতে পারছেন না।

ব্যাংকিং খাত নজিরবিহীন তারল্য সঙ্কটের কারণে দেশের অনেক ব্যাংক ধার করে চলছে। এ সময়ে নিরাপত্তার কথা ভেবে এবং আস্থার সঙ্কটের কারণে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রাখছেন অনেকে। অনাদায়ী ঋণ, খেলাপি এই ঋণের ফলে তারল্য সঙ্কটের কারণে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে লোন দেয়া সঙ্কুুচিত হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগ ও ব্যবসার ওপর যার নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট। লুটপাটের শিকার ব্যাংকগুলো ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণেও ব্যর্থ হচ্ছে; মূলধন ঘাটতি পূরণে বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় জনগণের অর্থ ঢালছে সরকার। এদিকে লুটপাটের শিকার বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে বেইল আউট করতে সরকারি ফান্ড ২৫ শতাংশের স্থলে ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখার নির্দেশ দিয়ে সরকার লুটপাটের আরো সুযোগ করে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সব ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে বাধ্যতামূলক নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে হয়, তা-ও ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করেছে সরকার। এতে আমানতকারীদের অর্থের ঝুঁঁকি আরো বৃদ্ধি পেল।

বর্তমানে যে সঙ্কট চলছে, এর আগে একসাথে এত চ্যালেঞ্জে পড়েনি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। অর্থনীতি ক্রমেই ভঙ্গুর থেকে ভঙ্গুরতর হচ্ছে। ব্যাংকিং খাত আরো দুর্বল হচ্ছে। কমছে রাজস্ব আয়। বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। পাঁচ বছরে জিনিসপত্রের দাম ৯ শতাংশ থেকে শুরু করে ৪০০ শতাংশ বেড়েছে। অর্থনীতির সঙ্কট সমাধানে বড় ধরনের সংস্কার দরকার। অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে ঋণের ফাঁদ। অভ্যন্তরীণ যে আয় হচ্ছে, তা সরকার পরিচালনায় ব্যয় হচ্ছে। আর ঋণের টাকায় বাস্তবায়ন হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার কারণে অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হয়েছে। রাজস্ব আহরণ কাক্সিক্ষত মাত্রায় হচ্ছে না। ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে মানুষের কষ্ট বাড়ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নি¤œআয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি আরো উসকে দিচ্ছে সিন্ডিকেট।

ব্যাংকিং খাতে লুটপাট রাজনৈতিক প্রভাবেই
সিপিডির প্রতিবেদন নিয়ে দেশের শীর্ষ তিন অর্থনীতিবিদের অভিমত হলো- লুটপাটের প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ। তার চেয়ে ভয়াবহ হলো- এ টাকার বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে। মূলত সরকারের ভুল নীতির কারণেই অপরাধীরা সুবিধা পেয়েছে। আর এ ধরনের ঘটনা অপরাধী এবং নীতিনির্ধারক সবার জন্য লাভজনক। ফলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তারা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা বন্ধে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। ব্যাংকিং খাতে কমিশন গঠনের কথা বলছে অনেকে। যদি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হয় তারপরও রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে ওই রিপোর্টের সুপারিশ বাস্তবায়ন হবে না। ফলে আপাতত এর কোনো সমাধান দেখছেন না।

মূলত সরকার ঋণখেলাপিদের আশকারা দিয়ে দিয়ে এ পর্যন্ত এনেছে। বর্তমান অর্থমন্ত্রী যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, এগুলো খেলাপিদের পক্ষে গেছে। ২০১৯ সালে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর একটার পর একটা ছাড় পেয়েছে খেলাপিরা। বিশেষ করে নীতিমালা করেছে ২ শতাংশ খেলাপি ঋণ জমা দিলে ১০ বছরের জন্য সময় পাবে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদলানো হয়েছে বারবার। এমনকি আইন সংশোধন করে সরকারঘনিষ্ঠ অলিগার্কদের একাধিকবার ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেয়া হয়েছে। সঠিক পর্যালোচনা ও জাস্টিফিকেশন না থাকা সত্ত্বেও মনগড়াভাবে লোন রাইট অফ করা হচ্ছে দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতাঘেঁষা লোকদের রক্ষা করার জন্য। কাগজ-কলমে ক্ষমতা, নিয়ম-নীতি থাকলেও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের তা প্রয়োগের অভাব রয়েছে। প্রভাবশালী বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ার কারণে এ সমস্যা আরো প্রকট হয়েছে। ব্যাংক খাতকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। আইনের চোখে সবাই সমান- এই নীতি অনুসরণ করে প্রত্যেককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। পারিবারিক প্রভাবের বলয় থেকে ব্যক্তি খাতের ব্যাংকগুলো রক্ষা করতে আইনে পরিবর্তন, রাজনৈতিক দৃঢ়তা ছাড়া এ ধরনের অবস্থা থেকে উত্তরণ করা যাবে না বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা। বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে ২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংকে। প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মে একটি গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অথচ গ্রুপটি সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার যোগ্য। এই গ্রুপটি ন্যূনতম এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। অথচ উচ্চ আদালত থেকে এ অর্থ লোপাটের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত এখন জিম্মি দশায় আছে। এ খাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তৃত্ব কমে গেছে। যে ধরনের সুশাসন থাকার কথা তা কাগজ-কলমে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তা প্রয়োগ করতে পারছে না।’ দুর্নীতি ও পুঁজি লুণ্ঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিচয়ে হাজারো কোটি টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী এরা। এ ধরনের ঘটনার ফলে ইসলামী ব্যাংকগুলোর ওপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা চলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর।

পরিশেষে বলতে হয়, ব্যাংকিং খাত তথা দেশের অর্থনীতির এই মহাসঙ্কট এক দিনে সৃষ্ট নয়; বরং ধারাবাহিকভাবে সৃষ্ট। দেশের হাতেগোনা কয়েকজন আর্থিক সেক্টরে কাজ করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই আত্মসাতের সাথে জড়িত এবং এদের সবার একটি রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রাজনৈতিক কারণে অনেক কিছু করতে পারে না; বরং অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতা করতে হয়। সুতরাং এ খাতকে সংস্কার করতে হলে সরকারকে কঠোর মনোভাবের হতে হবে। তবে, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দৃঢ়তা খুব জরুরি। সরকারকে কোনো ব্যক্তিকে রক্ষা নয়; বরং নির্মোহভাবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে পুরো আর্থিক খাতে সংস্কার করতে হবে। ২০০৯ সাল থেকে দেশে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় চতুর্থ প্রজন্মের ১৩টি বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যাংকিং এই দুর্নীতি রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। এত ছোট অর্থনীতির একটি দেশে ৬১টি ব্যাংক অনেক বেশি। একই ধরনের প্রোডাক্ট ও সেবা নিয়ে ব্যাংকিং সেবা দেয়ার প্রতিযোগিতা করছে দেশের ৫২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। পরিসংখ্যান বলছে ৩০০ থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। অর্থনীতিকে তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় সৃষ্ট এই ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং নয়; বরং জনগণের অর্থ লোপাটেই বেশি মনোযোগী। দুর্বল, অলাভজনক ব্যাংকগুলোকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যুগ যুগ ধরে টিকিয়ে রাখার চেয়ে বরং মার্জারের কথা ভাবার কোনো বিকল্প এখন আর নেই।
লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট
Mizan12bd@yahoo.com

https://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/806602