১৫ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ৩:১৮

ভরা মওসুমে বাড়ছে চালের দাম

 

ধানের ভরা মওসুমেও বাজারে বাড়ছে চালের দাম। গত ৮-১০ দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। এছাড়া চিনিগুড়া চালের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। ঢাকার খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, এখন চালের কোনো সংকট নেই। তাও মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করছে। তাদের কাছ থেকে  ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে খুচরা বিক্রেতাদের। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নওগাঁ ও কুষ্টিয়া জেলা থেকে চাল সরবরাহ হয়। সেখানকার মিলাররা বলছেন, ধানের দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে চালের দাম। যদিও এই মওসুমে ধানের দাম বৃদ্ধি কিংবা চালের কোনো সংকটের কারণ দেখছে না কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। 

ঢাকার খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের বেশি সময়ে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন খুচরায় প্রতিকেজি ভালোমানের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।

তবে কিছুদিন আগেও তা ৬৫ টাকার ভেতরে ছিল। ভালো মানের নাজির চাল ৮-১০ দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ৭৪ থেকে ৭৬ টাকায়, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। আর মাঝারি আকারের পাইজাম, স্বর্ণা, আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। মাঝারি আকারের চালে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। আর মোটা চাল ১-২ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। 

কাওরান বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ভোটের সময় গাড়ি না চলায় ঢাকায় চাল কম এসেছে। আর মিলাররাও দাম কিছুটা বাড়িয়েছে। তাদের বাড়তি দামেই চাল কিনতে হয়েছে। কাওরান বাজারের হাজী ইসমাইল অ্যান্ড সন্স-এর চাল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, এখন অগ্রহায়ণ- পৌষ মাস চলে। কিছু কিছু জায়গায় ধান উঠছে। এই সময় বাজারে চালের কোনো সংকট থাকার কথা না। তাও মিলাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। চিনিগুড়া চালের দামও ১০ টাকার মতো বাড়ছে। ভালো মানের এককেজি চিনিগুড়া খুচরা ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। 

এস. আর. ট্রেডার্সের আনিছ বলেন, ৮-১০ দিন হয়েছে কেজিতে ৫-৬ টাকা দাম বাড়ছে চালের। মাঝে কয়েকদিন চাল কম আসছে। কিন্তু যা আসছে তা পর্যাপ্তই ছিল। তবে বাহার ট্রেডার্সের আনিছ জানিয়েছেন, এখনো ৬৫ থেকে ৬৬ টাকায় মিনিকেট চাল পাওয়া যায়। চালের মানের উপর দাম নির্ভর করে। 

কুষ্টিয়ায় সরু চালের সর্ববৃহৎ মোকাম। সেখানেও কেজিতে ৪ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও যে চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি করা হতো তা এখন ৬৪ থেকে ৬৬ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকরা বলছেন, ধানের দামের ওপর চালের দাম নির্ভর করে। বাজারে এখন ধানের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এজন্য বাড়ছে চালের দাম। 

কুষ্টিয়ার খাজানগরে মিলগেটে গত এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে বস্তা (৫০ কেজি) প্রতি দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা। কুষ্টিয়া পৌর বাজারের মা ট্রেডার্সের চাল বিক্রেতা রিপন বলেন, হঠাৎ করে চাল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন কিছু মিল মালিক। সেই সঙ্গে ভরা মৌসুমে দামও বাড়িয়েছেন। ৬২ টাকার মিনিকেট এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়। কয়েকদিন আগেও ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হওয়া কাজল লতার দাম এখন ৬০ টাকা কেজি। এ ছাড়া ৫০ টাকা দরের আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি।  কয়েকদিনের মধ্যে দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর বাজারের কয়েকজন চাল বিক্রেতা বলেন, বেশি দামে মোকাম থেকে চাল কিনতে হচ্ছে। ক’দিন আগে কাজল লতা চাল ৫৬ টাকায় বিক্রি করেছেন, সেটি এখন ৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। 

চালের দাম বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, ডিসেম্বর থেকে ধানের দাম প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ধানের দাম প্রতি মণে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। মণ প্রতি মিনিকেট যে ধান আগে কিনেছিলেন এক হাজার ৪২০ টাকা মণ, সেই ধান এখন কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৬৮০ টাকায়। সরকার যখন আমন মৌসুমে চাল সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছিল, তখন নতুন ধান ৯৮০ থেকে এক হাজার টাকা মণ কেনা হয়। সেই ধান এখন এক হাজার ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে চার প্রকার ধান উঠেছে। মোটা হাইব্রিড, স্বর্ণা, ধানি গোল্ড ও বিনা-৭। নভেম্বরের শেষের দিকে এই ধান উঠলেও ডিসেম্বরে এসে দাম বেড়ে গেছে। ধানের দামের বৃদ্ধির কারণে মোকাম থেকেই চালের দাম কেজিতে দুই থেকে আড়াই টাকা বেড়েছে। কুষ্টিয়ার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, আমরা মিলগুলোর ধান ক্রয় ও মাড়াইয়ের খরচের সঙ্গে বিক্রয় মূল্যের তুলনা করে দেখছি। কেউ অতি মুনাফা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নওগাঁয় নির্বাচনের দু’দিন আগে থেকেই মিলে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। স্বর্ণা-৫ বস্তা ছিল দুই হাজার ১০০ টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা। এখন তা দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাটারি নাজিরের বস্তা ছিল তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা, তা এখন তিন হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নির্বাচনের আগে মিনিকেটের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার থেকে তিন হাজার ১০০ টাকা। এখন তা তিন হাজার ৩০০ থেকে তিন হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নওগাঁর স্থানীয় সূত্র বলছে, বড় বড় ব্যবসায়ী ও মিলাররা কারসাজি করে চালের দাম বাড়িয়েছে। তারা কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে মজুত করে রেখেছে। এখন কৃষকের কাছে তেমন ধান নেই। তবে মিলারদের গুদামে পর্যাপ্ত ধান মজুত করে রাখা হয়েছে। তাই বাজারে চালের দাম বেশি। 

ক্যাব সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, এই সময়ের চালের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। প্রতিকেজি চালে ৫-৬ টাকা বেড়ে গেছে। এটা ব্যবসায়ীদের কারসাজি। নির্বাচনের কারণে বাজারে খুব একটা মনিটরিং ছিল না। এজন্য দাম বাড়ানো হয়েছে। ভোক্তা অধিদপ্তর সহ অন্যান্য এজেন্সিগুলো যদি তৎপর হয় তাহলে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক যুক্তি দেয়। কখনো রোদ হলে বা বৃষ্টি হলে নানান রকম যুক্তি দেখায়। যেখানে চাল বাজারে দাম বাড়ার তো কোনো কারণ নেই।

https://mzamin.com/news.php?news=93196