১৫ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ৩:১৫

শীতে কাঁপছে দেশ বিপর্যস্ত জনজীবন 

 

* রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ সকাল থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো। 

* বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়েছে শীতবস্ত্রের চাহিদা

ঠাণ্ডাজনিত অসুখ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভিড়

* ধানের বীজতলা আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক 

স্টাফ রিপোর্টার : শীতে কাঁপছে সারা দেশ। বিপর্যস্ত জনজীবন। তাপমাত্রা নেমেছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। রাজশাহী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গা জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।  আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসলে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। এই হিসাবে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ৬ এবং সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস,  অর্থাৎ তাপমাত্রার ব্যবধান মাত্র ৩ ডিগ্রি। 

কয়েকদিন ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রচ- শীত ও কুয়াশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল রোববার বিভিন্ন জেলার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তুলনা করে দেখা গেছে রংপুর, দিনাজপুর, তেঁতুলিয়ার মতো উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ অঞ্চলেই তাপমাত্রার পার্থক্য ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে এসেছে। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা, বগুড়া, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম। বেশিরভাগ জেলাতেই সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়াতে শীতের অনুভূতি বাড়ছে এবং কোথাও কোথাও তা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। কনকনে শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির মুখে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কাজকর্ম ছেড়ে শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তার পাশে বসে উষ্ণতা নেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

এদিকে ঢাকায় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান এখন মাত্র ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে রাজধানীতে বেড়ে গেছে শীতের তীব্রতা। সুর্যের মুখ দেখা তো দূরের কথা, কুয়াশার চাদরে মুড়ে আছে রাজধানী। আগামী শুক্রবার  পর্যন্ত আবহাওয়া এমনই থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। জানা যায়, এই পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে  আসে, তাহলেই শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। আর যদি পার্থক্য পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে তবে শীতের অনুভূতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। অর্থাৎ হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হয়। ঢাকার মতো দেশের প্রায় বেশিরভাগ জেলায় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য আজ অনেক কমে যাওয়ায় শীতের প্রকোপ বেড়ে গেছে।

আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, তাপমাত্রা কমেছে কিন্তু সব এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ বইছে না। দেশের চার জেলায় এখন শৈত্যপ্রবাহ বইছে। ঢাকায় শীতের অনুভূতি বেশি হওয়ার কারণ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়া। দেশে অন্যান্য এলাকায়ই তাপমাত্রার পার্থক্য এখন কম। তাই শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত এই আবহাওয়া থাকতে পারে৷ এরপর তাপমাত্রা হালকা বাড়তে পারে। তবে  পুরো জানুয়ারি মাসজুড়ে শীতের তীব্রতা থাকতে পারে।’ আগামী দুই তিন-দিনের মধ্যে কোথাও কোথাও মেঘের সৃষ্টি হতে পারে, তখন হালকা বৃষ্টি হলে কুয়াশা কিছুটা কাটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৫, যা শনিবার (১৩ জানুয়ারি) ছিল দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া আজ ১২ ডিগ্রির নিচে থাকা অঞ্চলগুলো হচ্ছেÍ পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ৮.৮,  চুয়াডাঙ্গা ও রাজশাহীতে ৯.৭, নীলফামারির ডিমলা, সৈয়দপুর ও পাবনার ঈশ্বরদীতে ১০.২, রংপুরে ও নওগাঁর বদলগাছিতে ১০.৩, বরিশালে ১০.৫, যশোরে ১০.৮, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ১১.৩, সাতক্ষীরায় ১১.৪, ভোলা, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ১১.৫, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১১.৬, গোপালগঞ্জে ১১.৮, কুমিল্লা, পটুয়াখালীর খেপুপাড়া, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, বগুড়া ও মাদারীপুরে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। 

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ সকাল থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো। রোববার  সকাল গড়িয়ে দুপুরেও দেখা মিলেনি সূর্যের। তবে ঘন কুয়াশা কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গায় থেকে প্রশমিত হতে পারে।

এছাড়া, কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘœ ঘটতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে, ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শনিবার দিনাজপুরেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ সমকালকে বলেন, বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা বাড়বে না। কাল তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী পরশু (মঙ্গলবার) থেকে তাপমাত্রা একটু করে বাড়তে শুরু করবে। 

এদিকে তীব্র শীত ও কনকনে ঠা-ায় বিপাকে পড়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনসাধারণ, ব্যাহত হচ্ছে মানুষের জীবন ও জীবিকা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ। উত্তরের জেলাগুলোতে পাঁচ দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না বললেই চলে। চুয়াডাঙ্গায় রোববার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমে জেলার সবচেয়ে কম তাপমাত্রা। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। পাঁচ দিন ধরে ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়। ভোগান্তিতে পড়েছেন চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া ও নি¤œ আয়ের মানুষ।

পঞ্চগড়ে গত কয়েক দিন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ওপরে থাকলেও গতকাল তা এক অঙ্কে নেমে এসেছে। ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে পথঘাট। ঠাকুরগাঁওয়ে কয়েক দিন ধরে কনকনে ঠাণ্ডায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। নীলফামারীতে কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের হাতীবান্ধা গ্রামের রিকশাচালক অলিয়ার রহমান (৫৫) বলেন, ‘দিন-রাইত জারোত (শীত) কাটাছি। কামাই নাই, কম্বল কিনিবার পারেছ না।

নওগাঁয় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ। কমে গেছে আয়-রোজগারও। অনেকেই পথের ধারে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কমে গেছে আয়-রোজগারও।

তীব্র শীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়েছে শীতবস্ত্রের চাহিদা। অনেক জেলাতেই প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল শীতবস্ত্র বরাদ্দ ও বিতরণের অভিযোগ জানিয়েছে স্থানীয়রা। গত বৃহস্পতিবার জরুরিভাবে ২০ হাজার শীতবস্ত্র চেয়ে দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্স-বার্তা পাঠানো হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, চলতি শীত মৌসুমে এরই মধ্যে মোট ৬২ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য প্রতিটি উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। নতুন করে আরো ২০ হাজার শীতবস্ত্র চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্স-বার্তা পাঠানো হয়েছে।

পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, অনেক দরিদ্র অসহায় মানুষ প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। জেলায় এবার সরকারিভাবে ২৮ হাজার ৫০০ শীতবস্ত্র বরাদ্দ এসেছে।

দিনাজপুরে তীব্র ঠা-ায় বোরো ধানের বীজতলা ও আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বোরো বীজতলা। সদর উপজেলার উমরপাইল গোয়ালপাড়া এলাকার কৃষক মঞ্জুরুল ইসলাম ও রাজাপুকুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম নামের দুই কৃষক জানান, শীতের কারণে বোরো বীজতলা কুঁকড়ে গিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাই শীত থেকে বোরো বীজতলা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা।

তীব্র শীতে ঠা-াজনিত অসুখ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছে বিভিন্ন জেলার মানুষ। চুয়াডাঙ্গায় প্রতিদিনই ঠা-াজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ আসছে হাসপাতালে। ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা। শিশু বিভাগে ৪৫ শয্যার বিপরীতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় দুই শ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাজ্জাদ হায়দার শাহীন জানান, ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা উন্নত হওয়ায় ঠাকুরগাঁও ছাড়াও পার্শ্ববর্তী পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার শিশু রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসছে। 

নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ম্যানেজার সুপ্লব কুমার ঘোষ জানান, ঘন কুয়াশার কারণে সকালে ফ্লাইটগুলো যথাসময়ে চলাচল করেনি। তবে দুপুরের পর কুয়াশা কিছুটা কেটে গেলে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। তবে কোনো ফ্লাইট বাতিল করা হয়নি। 

হিলি (দিনাজপুর) সংবাদদাতা : দিনাজপুরের হিলিতে সকাল থেকেই ঝরছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা। ঘন কুয়াশার কারণে পথঘাট কিছুই দেখা যাচ্ছে না। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাহিরে বের হচ্ছেন না। যারা জীবিকার তাগিদে বের হচ্ছেন তারাও কাজ না পেয়ে অলস সময় পার করছেন। এদিকে প্রচন্ড শীতের কারণে হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন হাসপাতলে ভর্তি হচ্ছেন সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা। 

গতকাল রোববার এলাকাবাসী, রোগীসহ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী ফরহাদ হোসেন বলেন,১ সপ্তাহ ধরে হিলিতে রোদের মুখ দেখা যাচ্ছে। 

প্রতিদিন বিকেল থেকে শুরু করে পরদিন বিকেল পর্যন্তও রোদ উঠছে না। তার সঙ্গে ঘনকুয়াশা আর হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতাকে আর বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা যারা বয়স্ক মানুষ তারা শীতবস্ত্রের অভাবে বাড়ি থেকে কাজ ছাড়া বের হচ্ছি না। তিনি সরকারি ভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের দাবি জানান। 

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: টানা পাঁচ’দিন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি,চৌহালী ও এনায়েতপুরে সূর্যের দেখা মেলেনি। কনকনে শীতে কাঁপছে মানুষ। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত। 

বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। অনেকে আবার শীত থেকে একটু স্বস্থি পেতে খরে আগুন জালিয়ে শীত নিবারন করতে দেখা গেছে। রবিবার আজও সকাল থেকে দেখা মিলেনি সুর্যের, সকালে ঘন-কুয়াশা রাস্তা যান চলাচল কম, মাঝে মাঝে কিছু যান চললেও হেড লাইট জালিয়ে চলতে দেখা যায়। এদিকে শীতের তীব্রতায় বেশী কষ্টে রয়েছেন দিন মজুর রিক্সাচালক খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, তারা না পারছেন ঘরে বসে থাকতে, না পারছেন বাইরে কাজ করতে। 

কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা: হিমেল হাওয়া, ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে কাজীপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার জনজীবন। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবী ও ছিন্নমুল মানুষেরা। শীত বস্ত্রের অভাবে মানবতার জীবন যাপন করছেন অনেকে। কুয়াশার কারণে বাসসহ অটো ভ্যান ও অন্যান্য যানবাহনগুলো দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। রোদের অভাবে মিল মালিকেরা ও চাষিরা খাবার সিদ্ধ ধান শুকাতে পারছে না। কাজের সন্ধানে বের হয়েও কাজ পাচ্ছেন না খেটে খাওয়া মানুষেরা। বিভিন্ন দোকানপাট খুলছে দেরিতে। বেশি কষ্টে আছেন কর্মজীবী ও ছিন্নমুল মানুষেরা। শীতবস্ত্রের অভাবে বাড়ির বাহিরে বের হতে পারছেন না তারা। হিমেল বাতাস আর কনকনে ঠান্ডার কারণে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ জন। প্রচন্ড শীত ও ঠান্ডায় কৃষকের বোরো ধানের বীজতলা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। প্রচন্ড শীত ও ঠান্ডায় মানুষ গবাদি পশু নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন চর এলাকার মানুষেরা।

গাইবান্ধা থেকে জোবায়ের আলী : গাইবান্ধায় ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত ছয়দিন সূর্যের দেখা না মেলায় ঠাণ্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। গতকাল রোববার সকাল ৯টায় জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ জেলায় এবার মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ২৪ ঘণ্টা আগেও জেলার তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা। জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ক্লিনিকগুলোতে শীতজনিত রোগ নিয়ে শিশু ও বয়স্ক রোগীরা বেশি আসছে। এদের মধ্যে মধ্যে সর্দি, কাশি, জ্বর ও অ্যাজমায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। অপরদিকে হিমেল হাওয়া ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়ছেন খামারিসহ প্রান্তিক কৃষকরা। গবাদিপশুগুলোকে পুরনো কাঁথা, কম্বল, বস্তা, পুরনো জামা এবং যার যা আছে তাই দিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। তবে সব থেকে বেশি সমস্যায় রয়েছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলের গবাদিপশুগুলো।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের আরিফুল ইসলাম বলেন, শীতে অবস্থা খুব কাহিল। এরকম ঠা-া ও শীত হলে আমার মতো বয়স্ক মানুষগুলোর খুব সমস্যা। এমনিতেই অসুখে চলতে পারি না।

https://www.dailysangram.info/post/546071