১৫ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ৩:১২

২০২৩ সালে ৬২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৯০২ জন নিহত

গেলো ২০২৩ সালে সারাদেশে ছয় হাজার ২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৯০২ জন নিহত এবং ১০ হাজার ৩৭২ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৫২০টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত ও ৪৭৫ জন আহত হয়েছেন। আর নৌ পথে ১৪৮টি দুর্ঘটনায় ৯১ জন নিহত ও ১৫২ জন আহত হয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১০৯ জন।

হিসাব বলছে, গত বছরটিতে কেবল সড়কেই প্রতিদিন গড়ে প্রাণহানি ঘটেছে ২১ জনের বেশি মানুষের। আর সড়ক, রেল ও নৌ পথ মিলিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৩ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

এদিকে গত বছরে মোট সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার কারণ হয়েছে মোটরসাইকেল। এ বছর দুই হাজার ৩১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই হাজার ১৫২ জন নিহত ও এক হাজার ৩৩৯ জন আহত হয়েছেন। এই সংখ্যা মোট দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৪৩ শতাংশ বা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। আর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা মোট সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, আহতের সংখ্যা মোট আহতের ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

এর আগে ২০২৩ সালের শুরুতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছিল, আগের বছর ২০২২ সালে ছয় হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত ও ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছিলেন। 

২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও প্রাণহানি ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছিল। তবে এবারের হিসাব বলছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমেছে ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

মোজাম্মেল হক বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত এক হাজার ৯৫০ জন চালক, ৯৬৮ জন পথচারী, ৪৮৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৯৭ জন শিক্ষার্থী, ৯৭ জন শিক্ষক, ১৫৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯৮৫ জন নারী, ৬১২টি শিশু, ৩০ জন সাংবাদিক, ৩২ জন চিকিৎসক, ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আট জন আইনজীবী ও ১০ জন প্রকৌশলী এবং ১১১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।

এ সময়ে সংঘটিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট আট হাজার ৫৫০টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৬ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ মোটরসাইকেল, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান ও লরি এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ বাস। এ ছাড়া ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক; ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ নছিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা, ট্রাক্টর ও লেগুনা; ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ কার, জিপ ও মাইক্রোবাস; এবং ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫২ দশমিক ৮৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা, ২০ দশমিক ৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ বিবিধ কারণে, শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

দুর্ঘটনার স্থান বিশ্লেষণে দেখা গেছে এ বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে ও ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। 

এ ছাড়া সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ১১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবং শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।

বিগত বছরের চেয়ে বিদায়ী বছরে ছোট যানবাহনের সংখ্যা হঠাৎ কয়েকগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে যাত্রীকল্যাণ সমিতি। সগঠনটি বলছে, এসব যানবাহন অবাধে চলাচলের কারণে ফিডার রোডে ৫৫ দশমিক ১৯ শতাংশ, জাতীয় মহাসড়কে ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ, রেলক্রসিংয়ে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি বেড়েছে। তবে এবার আঞ্চলিক মহাসড়কে আগের বছরের তুলনায় ৪৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ দুর্ঘটনা কমেছে।

কোন বিভাগে কত : ২০২৩ সালে ঢাকা বিভাগে এক হাজার ৭৩৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৭১২ জন নিহত ও দুই হাজার ৩৮১ জন আহত হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিভাগে এক হাজার ২৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ২০৫ জন নিহত ও দুই হাজার ২৯৪ জন আহত হয়েছেন। 

খুলনা বিভাগে ৭৬৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৬৪ জন নিহত ও এক হাজার ৭৮ জন আহত হয়েছেন। বরিশাল বিভাগে ৩৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৯ জন নিহত ও ৯৯২ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৪ জন নিহত ও ৬৬৫ জন আহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৩ জন নিহত ও ৯২৬ জন আহত হয়েছেন। 

রংপুর বিভাগে ৫৬৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬২৬ জন নিহত ও ৬৬৬ জন আহত হয়েছেন। আর রাজশাহী বিভাগে ৭৮৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৯৩ জন নিহত ও এক হাজার ১৬৮ জন আহত হয়েছে।

বিদায়ী বছরে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ১৭ জানুয়ারি। এ দিন ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৬ মার্চ। এ দিন ৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন নিহত ও ১৪ জন আহত হন।

দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন ৭ জুলাই। এ দিন ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১ জন নিহত ও ৯৮ জন আহত হয়েছেন। আর সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছেন ৪ মার্চ। এ দিন ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত ও ১৪৮ জন আহত হয়েছেন।

 

https://www.dailysangram.info/post/546068