১৩ জানুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ৩:২১

নানামুখী চ্যালেঞ্জ আর্থিক খাতে

 

২০০৯ সাল থেকে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার। গত শুক্রবার নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন বছরে নতুন সরকারের সামনে তাই নানাবিধ চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মিশ্র রফতানি প্রবৃদ্ধি, ডলার সঙ্কট ও অতিরিক্ত দাম, প্রবাসী আয় ও রিজার্ভ, খেলাপি ঋণ, রাজস্ব আদায় এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপসহ আর্থিক খাতের সব সূচকই নিম্নমুখী। গত ৭ দিনে দেশের রিজার্ভ কমেছে দেড় বিলিয়ন ডলার। একই সাথে সঙ্কট মেটাতে বাজারে প্রতিদিনই ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমনকি দেশের রফতানি আয়ের প্রধান উৎস পোশাক খাত নিষেধাজ্ঞার শঙ্কায় রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটিতে পোশাক রফতানি কমছে। পাশাপাশি নির্বাচনের আগে নানাবিধ কারণে স্থগিত থাকা শ্রমিক আন্দোলন যেকোনো সময় ফুঁসে ওঠার শঙ্কা রয়েছে। নির্বাচনের পরও চট্টগ্রামে শ্রমিক আন্দোলন হয়েছে, যা এখনও চলছে। এছাড়া নানামুখী সঙ্কটে অনেক কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই আগামী দিনে শ্রমিক আন্দোলনের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বর্তমানে মানুষের মধ্যে দু’টি ভীতি কাজ করছে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভীতি। যদিও গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন গঠিত নতুন সরকারের সামনে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিকÑ এই ৩টি চ্যালেঞ্জ দেখছেন। বিশেষ করে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনের কারণে নানামুখী বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুমকি এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ আছে।

এদিকে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির হার কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাসÑ উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বাণিজ্যের চাপ, আর্থিক খাতের ঝুঁকি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের ৬ শতাংশের তুলনায় নেমে চলতি অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামবে। যদিও গেল জুনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংস্থাটি ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আভাস দিয়েছিল। চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এছাড়া ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) প্রকাশিত বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ পাঁচ ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এগুলো হলোÑ জ্বালানি স্বল্পতা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি, সম্পদ ও আয়বৈষম্য এবং সরকারি ঋণ বেড়ে যাওয়া ও বেকারত্ব। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার স্বীকার করেছেন, দেশের অর্থনীতি এখন তলানিতে। সেই তলানি থেকে অর্থনীতিকে তুলে আনাই এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

জানতে চাইলে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, মোটাদাগে অর্থনীতিতে এখন তিনটি সমস্যা আছে। এগুলো হলোÑ উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা ও আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা। তাই সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাই নতুন সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

দিনে দিনে দুর্বল হওয়া আর্থিক খাতসহ আগে থেকে বিরাজমান নানাবিধ পুরাতন চ্যালেঞ্জকে সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নতুন সরকারকে সামষ্টিক অর্থনীতির যেসব সূচকে নজর দিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মূল্যস্ফীতি, রফতানি ও প্রবাসী আয়, ব্যাংক খাত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বিদেশি ঋণ, রাজস্ব আয় ইত্যাদি। একই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা খেয়ে ফেলছে। বাজার কারসাজি ও সিন্ডিকেট পরিস্থিতিকে আরো জটিল করছে। অর্থনীতি এখন বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এবং সত্যিকার অর্থে একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এখন গতানুগতিক পন্থায় নয়; কেবল নিঃস্বার্থ শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব সংস্কারের কঠিন পথে যেতে পারে এবং অর্থনীতিকে উদ্ধার করতে পারে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভীতি দূর করতে হবে। যদিও নতুন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ওপর মানুষের সেই আস্থা আছে। এতদিন অর্থনীতিতে মূল নীতিনির্ধারকের দায়িত্ব পালনকারীদের জবাবদিহিতা ছিল খুবই দুর্বল। আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে সেটি ভালোভাবে করতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইনস্টিটিউশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান সমস্যা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি, ডলার সঙ্কট এবং আর্থিক খাতে অনিয়ম। এই তিন ক্ষেত্রে সংস্কারের এখনই সময়। সরকার খোলা মনে এসব সংস্কার করতে পারলে দেশের অর্থনীতি দীর্ঘদিনের জন্য ইতিবাচক পথে থাকবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে জ্বালানি সঙ্কট এখন প্রধান ঝুঁকি। শিল্পকারখানায় এখন চাহিদার ৬০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে গ্যাসনির্ভর শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে গোটা অর্থনীতিতে। ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন কমছে। লোকসানে ছোট ছোট ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। মানুষের হাতে অর্থ নেই। তিনি বলেন, সমাজে উচ্চ বৈষম্য থাকলে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন তীব্র হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে গত শুক্রবার সরকার গঠন করেছে। আর সব সময়কে ছাড়িয়ে গেছে এবার। এখন অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সূচকই নিম্নমুখী। সঙ্কট সব ক্ষেত্রেই। চ্যালেঞ্জের তালিকাটাও বেশ দীর্ঘ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকানো ও ডলারের বিনিময় হারকে স্থিতিশীল করা। আর এগুলো করতে পারলেই বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরবে।

অস্থির ব্যাংক খাত

ডলারের বিনিময় হার তথা দাম নিয়ে পুরো ব্যাংক খাত যেন অস্থির হয়ে আছে। ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০ টাকায়। যদিও আমদানি পর্যায়ে ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম ১২২-১২৩ টাকা উঠছে। খোলাবাজারে এই দাম আরো বাড়তি। এর ফলে আমদানিকারকদের বাড়তি দামে ডলার কিনে পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। ব্যাংক খাতের ‘চিরন্তন’ সমস্যা খেলাপি ঋণ। গত বছরজুড়ে খেলাপি ঋণ ছিল লাগামছাড়া। সেই লাগামহীন খেলাপি ঋণ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর। দেশের ব্যাংক খাতে ২০২২ সালের শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা, যা বিদায়ী ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এদিকে তারল্যসঙ্কটে ভুগছে বেশিরভাগ ব্যাংক। ব্যাংক খাতের দুর্দশার প্রভাব পুরো অর্থনীতিতে পড়ছে।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সম্প্রতি বলছে, গত ১৫ বছরে আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে লুটপাট হয়েছে ৯২ হাজার কোটি টাকা। এর বড় অংশই পাচার হয়ে গেছে। আর প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে ব্যাংক খাত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি হয়ে পড়েছে দুর্বল।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি

নতুন বছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ে বড় চিন্তায় থাকতে হবে নীতিনির্ধারকদের। কারণ, মূল্যস্ফীতি বর্তমানে ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। বাজারেও ভোগ্যপণ্যের দাম খুব একটা কমেনি। গত মার্চ থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে ছিল। আর চার মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। যদিও বিবিএস’র মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে ভিন্নমত আছে আর্থিক খাতের বিশ্লেষকদের। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত ‘খাদ্যনিরাপত্তা’ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাবারের ক্রমবর্ধমান দাম দেশের ৭১ শতাংশ পরিবারের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রিজার্ভ
দীর্ঘদিন থেকেই আলোচনায় রিজার্ভ ইস্যু। এক বছর আগে ২০২৩ সালের শুরুতে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল। গত এক বছরে রিজার্ভ শুধু কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার আয়ে ঘাটতির কারণে ডলারের দর বেড়েছে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে ক্রমেই কমছে রিজার্ভ, যা এখন ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৮ কোটি ডলার। আর প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ ধরলে তা ১৬ বিলিয়ন ডলারের কম। এ সময়ে আমদানি কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে সবচেয়ে বড় অস্বস্তির নাম আর্থিক হিসাবের ঘাটতি, যা ৫৪০ কোটি ডলার।

প্রবাসী আয়

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস বৈধ পথে আসা প্রবাসী আয়। কিন্তু ডলারের দামের পার্থক্যের কারণে বৈধ পথে ডলার আনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তেমন গতি আনতে পারেনি। গত বছর ডলার-সঙ্কট ছিল প্রকট। যে কারণে ডলারের দাম নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বেশি দামে প্রবাসী আয় কেনা, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে অতিরিক্ত প্রণোদনা প্রদানসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপরও বৈধ পথে প্রবাসী আয় কাক্সিক্ষত হারে বাড়েনি।

রাজস্ব আয়

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে এনবিআর। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে জুলাই-নভেম্বরে শুল্ক ও করসহ সব মিলিয়ে ১৬ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। আইএমএফ’র শর্ত অনুসারে, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে।

বিদেশি ঋণ

বিদেশি ঋণ পরিশোধে ধীরে ধীরে চাপ বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিদেশি ঋণ পরিশোধ ৫১ শতাংশ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে ১৩৩ কোটি ডলার, যা এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৮ কোটি ডলার। গত জুলাই-নভেম্বরে সব মিলিয়ে ২১১ কোটি ডলারের বিদেশি সাহায্য এসেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩৩ কোটি ডলার কম। দুই বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। নতুন বছরেও এই চাপ অব্যাহত থাকবে। ইআরডির হিসাবে, চলতি অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

আইএমএফ ও সংস্কারের চাপ

রিজার্ভের ক্রমাগত পতনের মুখে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে সরকার। এর দু’টি কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। নতুন বছরে আরও দুই কিস্তি ঋণ পাওয়ার কথা। এ জন্যও সংস্কার করতে বাধ্য সরকার। এর মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের করছাড় কমানো, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা, ভর্তুকি হ্রাস, খেলাপি ঋণ কমানো, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তালিকা নিয়মিত প্রকাশ করা, ব্যাংক খাতের তদারকিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন, নীতি সুদহারের কাঠামো ঠিক করা; রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ঝুঁকি কমানো ইত্যাদি। যদিও সম্প্রতি সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আইএমএফের শর্ত মেনে রিজার্ভ বাড়ানো বা সংস্কার করা সম্ভব নয়। তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, আরো বেশ কিছু খাতে সংস্কার করতে হবে। যেমন সরকারের ঋণ নেওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনা, সরকারি ব্যয়ের গুণমান বাড়ানো, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দেওয়া, পুঁজিবাজারকে স্বচ্ছ করা ইত্যাদি।

https://dailyinqilab.com/national/article/631265