১০ জানুয়ারি ২০২৪, বুধবার, ১১:১৭

রিজার্ভ নেমে এলো ২০ বিলিয়নের ঘরে

আকুর দায় পরিশোধ করা হলো ১২৭ কোটি ডলার

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আবারো নামল ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় গতকাল ১২৭ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে দিন শেষে গতকাল নিট রিজার্ভ ২০.০৪ বিলিয়নে নেমে এসেছে।

জানা গেছে, আঞ্চলিক দেশগুলোর লেনদেনের নিষ্পত্তির একটি মাধ্যম হলো আকু। তেহরানভিত্তিক এ সংস্থার সদস্য দেশ হলো ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। সদস্য দেশগুলো প্রতি দুই মাস অন্তর অর্থ পরিশোধ করে। আকু পেমেন্ট করার পর সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। প্রতি দুই মাসের দায় পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করে এসব দেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত এক বছরে গড়ে প্রতি দুই মাস অন্তর আকুর দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে এক বিলিয়ন ডলারের ওপরে। যেমন- গত বছরের জানুয়ারিতে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন, মার্চে ১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন, মে মাসে ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ও জুলাই মাসে পরিশোধ করা হয় ১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। গত সেপ্টেম্বরে পরিশোধ করা হয় ১.৩ বিলিয়ন ডলার। নভেম্বরে পরিশোধ করা হয়েছে ১১৭ কোটি ডলার। আর বছরের সর্বশেষ অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বরের আকুর দায় গতকাল পরিশোধ করা হয়েছে ১২৭ কোটি ডলার।

 

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ডলারের আন্তঃপ্রবাহরে চেয়ে বহিঃপ্রবাহ বেশি হচ্ছে। আবার রেকর্ড পরিমাণ বাংলাদেশী শ্রমিক বিদেশে গেলেও কাক্সিক্ষত হারে রেমিট্যান্স আসছে না। কিন্তু আমদানি ব্যয় কমছে না। বিশেষ করে আগের বকেয়া এলসি ও চলতি এলসির দায় ডলারের আন্তঃপ্রবাহের চেয়ে বেশি হারে মেটাতে হচ্ছে। এর ফলে প্রতি মাসেই কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ডলার আহরণ করছে অনেক ব্যাংকই এলসি খুলেছে তার চেয়েও বেশি পরিমাণ। এর ফলে প্রতি মাসেই তারা আমদানির দায় পরিশোধ করতে গিয়ে ঘাটতির মুখে পড়ছে। কিন্তু বাজার থেকে ডলার কিনতে না পারায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুধু সরকারের অতি প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় বিশেষ করে বিপিসির জ্বালানি তেল, বিসিআইসির সার, বিএডিসির ভোগ্যপণ্যসহ অতি প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় দেখে শুনে ব্যাংকগুলোকে কিছু ডলার সরবরাহ করছে। এর পরও বিদায়ী অর্থবছরে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করতে হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থেকে; যা এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ। অথচ আগের অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি করতে হয়েছিল প্রায় সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ বাড়তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রে নীতিমালা শিথিল করেছে। সেই সাথে ব্যাংকগুলোকেও বেশি হারে রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রে ডলারের মূল্যের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) যৌথ বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, যেসব ব্যাংকের ডলার সঙ্কট রয়েছে তারা ইচ্ছে করলে বেশি দামেও রেমিট্যান্স আহরণ করতে পারবে। তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্ষেত্রবিশেষ এ সুবিধা ছিল বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যেহারে প্রতি মাসে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে সামনে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আরো চাপে পড়ে যাবে। তখন আপদকালীন দায় মেটাতে কষ্টকর হবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বে নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির বিকল্প নেই।

 

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/805258