৯ জানুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:০৭

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা মিশনের উষ্মা

নির্বাচনে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিয়ে নানা প্রশ্ন

 

দ্বাদশ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা আমন্ত্রিত পর্যবেক্ষকদের পরিচয়, ম্যান্ডেড এবং তাদের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস ও কানাডিয়ান হাইকমিশনের তরফে তাদের দেশ থেকে নিজ উদ্যোগে আসা পর্যবেক্ষকদের বক্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে। পৃথক বিবৃতিতে দেশ দু’টির ঢাকা মিশন এটা স্পষ্ট করেছে যে, পর্যবেক্ষক নামধারী যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডিয়ান নাগরিকরা বাংলাদেশে যা বলছেন তা তাদের স্ব স্ব সরকারের অবস্থানের প্রতিফলন তো নয়ই, বরং এটি ব্যক্তিদের নিজস্ব বক্তব্য। ‘স্বতন্ত্র’ ওই মতামতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। উল্লেখ্য, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ ব্যয়ে বিমান থেকে নামার পর থেকে ফের বিমানে উঠা পর্যন্ত ‘রাজসিক সংবর্ধনা’, পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা-খাওয়ার আয়োজন এবং সরকারের নিয়োগ করা গাইড ও হোস্ট অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্র পরিদর্শন এবং পরবর্তীতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করাসহ তাদের অতি উৎসাহী কর্ম রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা নানা মন্তব্য করছেন। তাদের ঠিকুজি খোঁজার চেষ্টাও করেছেন কেউ কেউ। এএফপি’র ঢাকা ব্যুরোতে কর্মরত সাংবাদিক ও খ্যাতিমান ফ্যাক্ট চেকার কদরুদ্দিন শিশির কয়েকজনের অতীত কর্মকাণ্ডের পোস্টমর্টেম করেছেন। শিশিরের উন্মোচন করা তথ্যের সত্যতাও নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিদেশে ট্রেনিং নিয়ে আসা ওই ফ্যাক্ট চেকার চোখে আঙ্গুল দিয়ে কিছু বিষয় দেখানোর চেষ্টা করেছেন।

তার উন্মোচিত তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা পর্যবেক্ষক জিম বেটস সাবেক মার্কিন কংগ্রেসম্যান ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বহু আগে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ‘আমি অবশ্যই বলতে চাই, আমার দেশের গণমাধ্যম বাংলাদেশের গণমাধ্যমের মতো অনুসন্ধানী ও সৎ নয়। 

যেটি বাস্তবে হয়, সেটির বিষয়ে তারা রিপোর্ট করে।’ মর্মে বেটস যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তুলে ধরে শিশির লিখেন- বেটস এর কাছে তার দেশের সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের চেয়ে কম ‘অনুসন্ধানী ও সৎ’ মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। গুগলে সার্চ করলে তার দেশের সংবাদমাধ্যমে তার ব্যাপারে নানান মন্দ কথা পাওয়া যায়। তিনি নিজের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে ব্যাংকের চেক/লোন ছয়নয় করে ধরা পড়েছিলেন এবং সেই খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। বেটস এর বিরুদ্ধে একাধিক নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। যার প্রমাণ গুগল সার্চেই রয়েছে বলে তুলে ধরেন ওই ফ্যাক্ট চেকার। শিশির লিখেন- ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির মাসিক নিউজ বুলেটিনের ২০২১ সালের জুন সংখ্যার খবর অনুযায়ী, ওই বছর ৩রা জুন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম জিম বেটসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অ্যাম্বাসির বুলেটিনের ভাষায়:  They discussed the engagement of the Bangladesh diaspora in the development activities in California. The former Congressman offered his support to engage the current congressmen and senators to this end. শিশির লিখেন- এ থেকে বোঝা যায়, মার্কিন কংগ্রেস ও সিনেটে বাংলাদেশ সরকারের হয়ে লবিংয়ে ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেন জিম বেটস। 

আরেক পর্যবেক্ষকের নাম আলেক্সান্ডার গ্রে যিনি আমেরিকান লবিং ফার্ম American Global Strategies এর চিফ এক্সিকিউটিভ। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার ছিলেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের (SADF) নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসাকা সম্পর্কে তিনি লিখেন-  পাওলো কাসাকা এবং তার SADF  হচ্ছে বেশ খ্যাতিমান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালে EU Disinfo Lab ভারতীয় একটি ডিসইনফরমেশন নেটওয়ার্ককে এক্সপোজ করে। দুনিয়ার সব বড় বড় সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ভারতের হয়ে এই ডিসইনফরমেশন নেটওয়ার্ককে ফেসিলিটেট করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন পাওলো কাসাকা এবং তার সংস্থা সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের (SADF) । 

যুক্তরাষ্ট্র কানাডা মিশনের বক্তব্যের বিস্তারিতএদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী মার্কিন নাগরিকদের বিষয়ে সোমবার ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে- ‘যুক্তরাষ্ট্রের সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেনি। নির্বাচন উপলক্ষে কয়েকজন বেসরকারি নাগরিক বাংলাদেশে ছিলেন। তাদের বক্তব্য নিজেদের বা তাদের প্রতিষ্ঠানের, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নয়।’ প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে কানাডার ঢাকা মিশন। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগের টুইটার) ঢাকাস্থ কানাডার হাইকমিশন লিখেছেঃ ‘বাংলাদেশে ৭ই জানুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কানাডা সরকার কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রেরণ করেনি। পর্যবেক্ষক হিসেবে চিহ্নিত কানাডিয়ান নাগরিকদ্বয় স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। নির্বাচন বিষয়ে তাদের প্রদত্ত মতামতের সাথে কানাডা সরকারের সংশ্লিষ্টতা নেই।’ উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে কানাডার পার্লামেন্ট সদস্য চন্দ্রা আর্য ও সিনেটর ভিক্টর ওহ এসেছেন বলে জানা গেছে।

https://mzamin.com/news.php?news=92271