৯ জানুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:০০

বীজ ও সার-ওষুধের দামে বিপাকে তরমুজ চাষিরা

গতবারের তুলনায় এই মওসুমেও তরমুজের আবাদ বেড়েছে তেঁতুলিয়ার চরে। আগাম জাতের ধান কাটা শেষে তরমুজের ক্ষেত তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। জোয়ারের পানির হানা থেকে ক্ষেত রক্ষায় চরের চার পাশ ঘিরে তৈরি করেছেন নিজ নিজ উদ্যোগে স্বল্প উচ্চতার বেড়িবাঁধ। কেউ কেউ আবার পরিচর্যা করছেন পলিব্যাগে গজানো চারা গাছের। তবে বীজ ও সার-ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়ার চরের বেশির ভাগ চাষি।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন রবি ফসলের সাথে এবার চার হাজার হেক্টরে তরমুজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। আগের বছর এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার হেক্টরে। এই লক্ষ্যমাত্রায় কালাইয়া ও মূলভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন চন্দ্রদ্বীপের বিভিন্ন চরেই তরমুজের আবাদ সবচেয়ে বেশি নির্ধারিত হয়েছে। তবে চাষিদের ধারণা উপজেলায় তরমুজের এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে চলতি বছর। একই সাথে ১৫ হেক্টরে বাঙ্গি ও ১০০ হেক্টরে ক্ষীরা ও সামান্য পরিমাণে উচ্ছের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আগের দুই মৌসুমে করোনার লকডাউনে পরিবহন ও বিপণন সমস্যার পাশাপাশি তরমুজের ক্ষেতে ভাইরাসের আক্রমণ ও জোয়ারের পানির হানায় খুব একটা লাভের মুখ দেখেননি চরকচ্ছবিয়া, চরওয়াডেল, রায়সাহেবের চর, চরঈশান, মমিনপুর চর, বাসুদেবপাশা, চরশৌলাসহ বিভিন্ন চরের তরমুজ চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত দুই তিন বছরের লোকসান কিছুটা কাটিয়ে ওঠা যাবে এমন আশায় বুক বাঁধলেও বীজ আর সার ওষুধের দামে এবারেও বিপাকে তরমুজ চাষিরা।

প্রতিবারের মতো তেঁতুলিয়ায় জেগে ওঠা কচ্ছবিয়ার চরে এবার প্রায় ১৮ একর জমি লিজ নিয়ে তরমুজের ক্ষেত তৈরি করছেন পাশের গলাচিপা উপজেলার চরকাজলের বাবুল খান। অতিজোয়ার, লবণ পানির হানা আর একই জমিতে বারবার কীটনাশক ও সার-ওষুধ ব্যবহারের কারণে নিজ এলাকায় আগের মতো এখন আর তরমুজের ভালো ফলন মেলে না উল্লেখ করে তিনি জানান, করোনার লকডাউনের সময় তরমুজ চাষে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হয় তাকে। জোয়ারের পানির হানায় পরের বছরেও ধকল গেছে তার। এরপর ভাইরাসের আক্রমণে গত মৌসুমে ক্ষেতেই নষ্ট হয় ১০-১২ লাখ টাকার তরমুজ। এবার নিজ উদ্যেগে ক্ষেতের চার পাশ ঘিরে স্বল্প উচ্চতার বেড়িবাঁধ তৈরি করেছেন আগেভাগে। তৈরি করছেন ক্ষেত। কিন্তু তরমুজের বীজ ও সার-ওষুধের দামে নতুন করে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। ইউনাইটেডের গ্রেট-১ তরমুজের বীজ কেজিপ্রতি আগের বছর ৭৫ হাজার টাকায় পাওয়া গেলেও এ বছর তা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা হয়েছে। ব্লাকমাস্টার, ড্রাগন কিংবা বিগফ্যামেলি জাতের বীজের দামও আগের তুলনায় ১০-১১ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বস্তা প্রতি ৬০০ টাকা। গত বছর টিএসপি ১ হাজার ২০০ টাকায় পাওয়া গেলেও এ বছর তা ১ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ড্যাব বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা, এমওপি ৪০০ টাকা, টিএসপি ৩০০ টাকা বেশি দরে রাখা হচ্ছে।

একই চরের তরমুজ চাষি ধানদী গ্রামের মঞ্জু মাতবর ও বাকলা তাঁতেরকাঠি গ্রামের ফিরোজ চৌধুরী ও বড়ডালিমা গ্রামের জাহাঙ্গীর মৃধা জানান, মিষ্টি ও স্বাদে বাউফলের চরের রাঙা তরমুজের সুনাম রয়েছে। তরমুজের বীজ সংগ্রহে সিন্ডিকেটের কারসাজি আর সার-ওষুধের দাম বেড়েছে। পাশের ভোলা জেলা ও রাঙাবালী উপজেলা থেকে এসে প্রায় অর্ধশতাধিক চাষি এবার তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন চরে তরমুজের চাষ করেছেন। জমির উর্বর হারিয়ে একই জমিতে বারবার তরমুজ চাষ ভালো না হওয়ার কারণে ওইসব চাষিরা নিজ এলাকা ছেড়ে বাউফলের চরাঞ্চলে তরমুজ চাষে ছুটে এসেছেন উল্লেখ করে বাউফলের তেঁতুলিয়ার চরে এবার তরমুজের আবাদ বেড়েছে জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো: আনছার উদ্দিন বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। সার-ওষধের দাম সরকারিভাবে নির্ধারণ করা আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাদাম, সরিষা, সূর্যমুখীসহ বিভিন্ন রবিফসলের সাথে বাঙ্গি, ক্ষীরা ও সু-স্বাদ রাঙা তরমুজের বাম্পার ফলন পাবেন চাষিরা। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষণিক চাষিদের খোঁজখবর ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/804990