৮ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ৬:২৯

একতরফা ভোটেও অনিয়ম সহিংসতা

 

* ১৪০ কেন্দ্রে অনিয়ম

* ২১ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত

* ৪২ জন গ্রেফতার ২০ জনের শাস্তি

* একজনের প্রার্থিতা বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিভিন্নস্থানে জাল ভোট, সংঘর্ষ, গুলী, সহিংসতা ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ২৯৯ আসনের ভোটগ্রহণ। এবারের ভোটে বিএনপি, জামায়াতসহ উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। গতকাল সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত একতরফা ভোটেও সহিংসতা ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে মুন্সিগঞ্জে ১ জন নিহত হয়েছে। রাজধানীর অন্তত তিনটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে ককটেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুসহ চার জন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোট গননা চলছিল। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে ফল ঘোষণা করবেন প্রিসাইডিং অফিসার। পরে লিখিত ফল পাঠিয়ে দেবেন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে।  

গতকালের ভোটে ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে খুবই কম। তবু সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টা সারা দেশে গড়ে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সন্ধ্যায় জানানো হয় সিইসি ধারণা করছেন ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। ইসি জানিয়েছে, ১৪০ কেন্দ্রের অনিয়ম হয়েছে এর মধ্যে ২১টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। অনিয়মের কারণে ৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ ২০ জনের বেশি ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।

আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল রোববার বিকেল চারটার দিকে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকের এ তথ্য জানান ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। দেশের ২৯৯টি সংসদীয় আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিরতি ছাড়াই ভোট চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এবার নওগাঁ-২ আসনে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় বিধি অনুযায়ী ভোট স্থগিত করে ইসি। বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি ভোটের আগের দিন থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন  করেছে। ভোটের আগের দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে বিচ্ছিন্নভাবে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায়। কিছু কেন্দ্রে জালভোটের অভিযোগও ওঠে। তবে সার্বিকভাবে নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে নির্বাচন কমিশন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও ভোটকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন।  

সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্নস্থানে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। সকালে মুন্সিগঞ্জে একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে একজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবে এর সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম।

রাজধানীর অন্তত তিনটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে ককটেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুসহ চার জন। এর মধ্যে ভোট শুরুর আগে সকাল ৭টার দিকে করাতিটোলা এলাকার চান মিয়া সরদার (সিএমএস) মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে মো. অন্তর (২২) নামে এক আনসার সদস্য আহত হন। পরে সকাল ১০টার দিকে খিলক্ষেতে অন্বেষণ স্কুল কেন্দ্রের বাইরে পরপর দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এছাড়াও বেলা ১২টার দিকে হাজারীবাগে ককটেল বিস্ফোরণেরও খবর পাওয়া যায়।

এদিকে বেলা ১১টার দিকে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে একটি ভোটকেন্দ্রে নৌকা ও ট্রাক প্রতীকের সমর্থকদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এতে অন্তত দুজন আহত হয়েছেন।

জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, কুমিল্লা, সিলেট ও টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু এবং ফুলকপি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মনজুর আলমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই জন গুলীবিদ্ধ হয়েছেন।

বেলা ১২টা ১০ মিনিটের দিকে কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে নৌকার কর্মীদের চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী নৌকার নেতাকর্মীদের ধাওয়ার মুখে পড়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে ১৪০ কেন্দ্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ইসি সূত্র জানিয়েছে, ১৪০টির মধ্যে খুলনায় ২৪টি, বরিশালে ১৪টি, রংপুরে ৪টি, রাজশাহীতে আটটি, ঢাকায় ২০টি, ময়মনসিংহে ১১টি, চট্টগ্রামে ৪৫টি, সিলেটে ১৪টি কেন্দ্রে এসব ঘটনা ঘটেছে।

মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে এই তালিকা করেছে ইসি। এদিকে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে ৪২ জন গ্রেফতার হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দিনভর নানান অনিয়ম ও সহিংসতার অভিযোগে সারাদেশের মোট ৯টি আসনের ২১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনের বেশি ব্যক্তিকে সাজা দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। 

ভোট স্থগিত হওয়া কেন্দ্রগুলো হলো:

সুনামগঞ্জ-২ : মিরাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় (৭ নং কেন্দ্র), নোয়াগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৫৬ নং কেন্দ্র), শুকুরনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় (৭০ নং কেন্দ্র)। কক্সবাজার-১ : চরনদীপ ভূমিহীন প্রাইমারি স্কুল (২৫ নং কেন্দ্র), দক্ষিণ ফুল ছুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৭৪ নং কেন্দ্র), মরংগুনা অসুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮০ নং কেন্দ্র)। জামালপুর-৫ :  জাগির মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৭০ নং কেন্দ্র)। নরসিংদি-৪ : ইব্রাহীমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৩৪ নং কেন্দ্র)। নরসিংদী-৩ : দুলালপুর সিনিয়র ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা ( ৫ নং কেন্দ্র), ভিটিচিনাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ( ৮ নং কেন্দ্র)। টাঙ্গাইল-২ : কাহেতা সরকারি প্রাথমিক স্কুল (১৬ নং কেন্দ্র)। কুমিল্লা-৩ : ৭৬ নং গুর্গারাম (ডি.আর) পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (৭৬ নং কেন্দ্র), ধনিরামপুর ডিডিএসওয়াই উচ্চ বিদ্যালয় ( ৮১ নং কেন্দ্র)। কুমিল্লা-৪ : সূর্য্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৪ নং কেন্দ্র)। 

কুমিল্লা-১১ : ২৮ নং কেন্দ্র। বগৈর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (২৮ নং কেন্দ্র), গোবিন্দপুর সামছুল হুদা দাখিল মাদ্রাসা (৩৫ নং কেন্দ্র), ধনিজকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৩৮ নং কেন্দ্র),আমানগন্ডা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (৪৯ নং কেন্দ্র), হিংগুলা হাছানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় -১ (৭৪ নং কেন্দ্র), হিংগুলা হাছানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় -২ (৭৫ নং কেন্দ্র),বাতিসা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়-১ (৮৩ নং কেন্দ্র)।

উল্লেখ্য, গত ১৫ নবেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। প্রার্থীরা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়েছেন। এবার ২৯৯টি আসনে ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ান ৪৩৬ জন। এবারের মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ৭৪১ এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯ জন। এছাড়া সারা দেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৪৯ জন। সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনায় মোট ৪২ হাজার ২৪টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।

মুন্সিগঞ্জে নিহত ১

মুন্সিগঞ্জ-৩ (সদর এবং গজারিয়া) আসনে ভোটকেন্দ্রের পাশে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার টেঙ্গর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত মো. জিল্লুর রহমান মিরকাদিম পৌর শ্রমিক লীগের সহসভাপতি। মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সালের সমর্থকেরা হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পরিবারের।

উল্লেখ্য, মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক। তিনি দুবার এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল কাঁচি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তাঁর বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন। ফয়সাল দুবার মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছিলেন।

প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আসনটিতে এ দুটি পক্ষের মধ্যে হামলা, সংঘর্ষ, গুলী, প্রচার ক্যাম্প ভাঙচুরের অন্তত ১৮টি ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২দিকে সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মুন্সিকান্দি গ্রামে নৌকার প্রার্থীর এক সমর্থককে গুলী করে হত্যার ঘটনা ঘটে।

টাঙ্গাইলে ব্যালট বাক্সে আগুন, পুলিশের গুলী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের একটি ভোটকেন্দ্র ব্যালট বাক্সে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ পাঁচ রাউন্ড গুলী ছুড়েছে। 

গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের কাহেতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. মাজহারুল হক বলেন, দুর্বৃত্তরা অতর্কিতভাবে কেন্দ্রে প্রবেশ করে তিন নম্বর কক্ষ থেকে একটি ব্যালট পেপার ভর্তি বাক্স বাইরে নিয়ে এসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ব্যালট বাক্সটি পুড়ে গেছে। ব্যালট বাক্সে প্রায় তিনশ ব্যালট পেপার ছিল। পরে সেখানে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা ব্যালট বাক্স উদ্ধারে পাঁচ রাউন্ড গুলী করেন। এ ঘটনায় দুইজন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। ঘটনার পর কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করে কেন্দ্রের বাকি ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে দায়িত্বরতরা কেন্দ্র ত্যাগ করি।

এ বিষয়ে গোপালপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইমদাদুল ইসলাম তৈয়ব বলেন, পরিস্থিতি নিয়স্ত্রণে পাঁচ রাউন্ড গুলি করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুইজন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন।  তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নরসিংদী-৩: ভোটকেন্দ্রে ভাঙচুর, ব্যালট পেপার ছিনতাই

নরসিংদীর শিবপুরে ভোটকেন্দ্রে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ভাঙচুর করা কেন্দ্রটি হলো দুলালপুর ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা। ভাঙচুরের সময়ে কেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয় তারা। এ সময় বাধা দিলে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আনসার ও পুলিশ সদস্য পর পর ৬ রাউন্ড গুলির্বষণ করেন। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে ৮ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

হামলা ও ভাংচুরের পর কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে কেন্দ্রটি স্থগিত ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. রেজাউল হাসান বলেন, রোববার দুপুর ১টার দিকে ৫০-৬০ জন লোক হঠাৎ কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়।

এ সময় বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের মারধর ও ভাঙচুর চালায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আনসার ও পুলিশ সদস্যদের গুলী করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলীর্বষণ করলে তারা পালিয়ে যায়। এ সময় তাদের হামলা থেকে বাঁচতে আমরা দরজা বন্ধ করে দেই।

ঘটনার পর নরসিংদী জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. বদিউল আলম ও নরসিংদী পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নৌকা-ঈগল প্রতীক সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ১০, বাড়ি-ঘরে আগুন

মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী মোসা. তাহমিনা বেগমের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

গতকাল রোববার দুপুরে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটকচর এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। একাধিক সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের সমর্থক আকবর মাতুব্বর প্রথমে ভোট দিতে বাধার সৃষ্টি করেন। পরে এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মোসা. তাহমিনা বেগমের সমর্থক আফজাল মুন্সী। এ সময় উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রের সামনে জড়ো হয়। এসময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ভোটকেন্দ্রে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরে এই ঘটনার সূত্র ধরে দুপুরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ওই এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগও ওঠেছে। পরে খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, ১৫-২০টি স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে, সেখান থেকে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের ওপর। পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটের সদস্যরা ঘণ্টাখানেক চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ বিষয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও আগুন লাগার ঘটনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।‘

মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ। অপর শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মোসা. তাহমিনা বেগম।

মাদারীপুর-৩ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৩ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৯৬০ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার তিনজন।

জাল ভোটসহ নানা অভিযোগ ও স্বল্প ভোটার উপস্থিতিতে সারাদেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন

সিলেট ব্যুরো: বেশ কিছু অভিযোগ, গোলযোগ ও ৬ প্রার্থীর বর্জনের মধ্যদিয়ে সিলেটের ৬টি আসনে শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। গতকাল ৭ জানুয়ারি রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে টানা ভোটগ্রহণ। 

সকালে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। প্রার্থীরা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বাড়ার আশা করলেও বাড়েনি ভোটারের সংখ্যা। সকালের দিকে অনেক কেন্দ্রই ছিল ভোটারশূন্য। এদিকে, ভোট চলা অবস্থায় দুপুরে সিলেট-২ আসনে (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) একসঙ্গে ভোট বর্জন করেন ৪ প্রার্থী। তারা হলেন- গণফোরামের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য), বিশ্বনাথ পৌরমেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান (ট্রাক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া (লাঙ্গল) এবং তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রব (সোনালী আঁশ)। দুপর দেড়টার দিকে ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারস্থ একটি রেস্টুরেন্টে প্রেস ব্রিফিং করে এ ৪ জন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তাদের অভিযোগ- সিলেট-২ আসনজুড়ে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের এজেন্টদের মারধরসহ হুমকি-ধমকি প্রদান করেছে। যার ফলে তারা ভোট বর্জন করেন। একই সময়ে সিলেট-৪ আসনের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. আবুল হোসেন (সোনালী আঁশ) ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে এ ঘোষণা দেন তিনি। 

একেবারে শেষ সময়ে এসে সিলেট-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলালও (ট্রাক প্রতীক) ভোট বর্জন করেন। তাঁর অভিযোগ- বালাগঞ্জের প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয় এবং মারধর করা হয়। এছাড়া নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক জালভোট প্রদানের অভিযোগ করেন দুলাল। অপরদিকে, সিলেট-৩ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক ফেঞ্জুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার ৩৬টি কেন্দ্রের ভোট প্রত্যাখ্যান করেন। নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে জাল ভোট ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিকাল পৌনে ৪টায় তিনি এসব কেন্দ্রের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। এসময় তিনি এসব কেন্দ্রে ফের নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান ইলেকশন কমিশনের কাছে। অন্যদিকে, সিলেট-১ আসনের অন্তর্ভুক্ত মহানগরের পাঠানটুলা এলাকার একটি ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা।

জামালপুর সংবাদদাতা : জামালপুরের ইসলামপুরে  স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহিনুজ্জামানের  পক্ষে টাকা নেওয়ার সময় সহকারী প্রিজাইটিং শশারিয়াবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার সহ সুপার কুদরতে খোদা আইয়ুব আলীকে হাতে নাতে ধরেছে জনতা। এ ঘটনায়য় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। শনিবার রাতে উপজেলার কুলকান্দি ইউনিয়নের  হরিণ ধরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, ৬জানুয়ারি দিবাগত রাত ৯টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহিনুজ্জামানের  পক্ষে কাজ করে  দিতে সহকারী প্রিজাইটিং কুদরতে খোদা আইয়ুব আলী চৌধুরীকে ২৫ হাজার টাকাসহ ধৃত করে  জনতা। এ ব্যাপারে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান- পুলিশ তাকে উদ্ধার করেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

পাবনা সংবাদদাতা : মাঠ পর্যায়ে বিরোধী  দলের ভোট বর্জনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত  হল  পাবনার ৫ টি আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সকাল আটটা থেকে ভোট শুরু হয়ে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত সমাপ্তি হয় । সকাল থেকে কেন্দ্রগুলোতে নারী-পুরুষ কোন ভোটারের   উপস্থিতি দেখা যায়নি। প্রতিবেদক সকাল থেকে ভিন্ন ভিন্ন আসনের বিভিন্ন কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে।  পাবনা-৫ আসনের পাবনা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ সকাল সাড়ে নয়টার সময়  কোন ভোটারের উপস্থিতি দেখতে পাইনি।  বিভিন্ন বুথে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সর্বমোট ১৮টি ভোট পড়েছে। এ সময় কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পরে মহেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জহিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, 

 জালালপুরের মাওলানা কসিম  উদ্দিন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনিপুর মাহমুদা খাতুন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই চিত্র লক্ষ্য করা যায়। দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে পাবনা পুষ্প পাড়া আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে দেখা যায়, ব্যালট পেপার বইয়ের মাঝখান থেকে  ৫০টি ব্যালট পেপার ছেঁড়া বিষয়টি সম্পর্কে সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসার সঠিক উত্তর দিতে পারেননি বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপর দায় চাপাতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে অবশেষে ভুল স্বীকার করেন। একই কেন্দ্রের একটি বুথে দুইজন এজেন্টকে দেখা গেলেও একজন এজেন্ট সিমা খাতুন তার প্রার্থীর নাম বলতে পারেনি ।

সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারীর সৈয়দপুরে অধিকাংশ কেন্দ্র ভোটার শূন্য। কোন কোন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি থাকলেও খুবই কম। সকাল থেকে কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের দাপটে এই অবস্থা বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এই ভোটার সংকট কেটে যাবে মনে করছেন তারা।

সকাল ৯ টায় সৈয়দপুর শহরের কাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় মাঠ একেবারে ফাঁকা। কোন ভোটার নাই। শুধু ভোট গ্রহণে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। ভিতরে কর্মকর্তা ও প্রার্থীদের এজেন্টরা অবস্থান করছেন।

কেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার ঢাকা ব্যাংক সৈয়দপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার সাইদুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি নাই। শীতের কারনে লোকজন আসছেন না। সময় পেরিয়ে কুয়াশা কেটে গেলে ভোটার আসবে। এখন পর্যন্ত কতটা ভোট পড়েছে জানতে চাইলে তিনি জানাতে অস্বীকার করেন।

এদিকে একই এলাকার আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে দুই একজন ভোটারকে যেতে আসতে দেখা যায়। সকাল ১০টায় সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে সব কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি অত্যন্ত নগন্য। সময়ের সাথে এই দৈন্যতা দূর হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ। 

নেত্রকোনা সংবাদদাতা : নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনের পাঁচটি ভোট কেন্দ্রের সামনে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ডামি নির্বাচনের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

শনিবার দুপুরে ও শুক্রবার রাতে এসব কেন্দ্রের সামনে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা।

বেনাপোল সংবাদদাতা : নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার,  অনিয়ম ও ৫৫টি কেন্দ্র দখলের অভিযোগে এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন ৮৫ যশোর-১ শার্শা আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন। বেলা ১১টায় নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে এ সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি।

সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার  ৯ এজেন্টকে মারপিট করা হয়েছে । অধিকাংশ কেন্দ্রের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটার ও কর্মীদের হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে । ৫৫ টি কেন্দ্র দখল করে নেয়া হয়েছে। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর আমাকে মারপিট করা হয়। এখন পর্যন্ত ১৫০ নেতাকর্মী আহত করা হয়েছে। এখন যে পরস্থিতি তাতে যে কোন মায়ের বুক খালি হতে পারে। আমি এমন ভোট চাই না। 

তিনি আরো বলেন, বিরোধীদলের ওরা প্রমাণ করেছে এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। হয়ত ১০ শতাংশ ভোট পড়বে। কিন্তু তারা ৫০ শতাংশ ভোট দেখানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। যে কারণে এমন প্রহসনের নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়াচ্ছি।

ফেনী সংবাদদাতা : ফেনীতে ভোটের কোন আমেজ লক্ষ্য করা যায়নি। ভোটের আগের রাতে ফেনী শহর,পরশুরাম ও সোনাগাজীতে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটে।

ফেনী শহরে রাত ভর বিভিষিকাময় অবস্থা বিরাজ করে।রামপুর,ট্রাংক রোডের দক্ষিনাংশ,এসএসকে সড়কে শতশত গুলি বোমার মহৎসব চলে।শহরের রামপুরে,১৭নং ওয়ার্ড,১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিস জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সোনাগাজীর মোতিগন্জে গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করা হয়।পরশুরামের সোলিয়া র্গ্বামে একটি মোটর সাইকেলে আগুন দেয়া হয়।সদর উপজেলার ধলিয়ার অলিপুর র্গ্বামে তিনটি খড়ের গাদায় আগুন দেয়া হয়।ঢাকা চট্রর্গ্বাম মহা সড়কের ফেনী অংশে ২টি কাভার্ড ভ্যান ও তিনটি ট্রাকে আগুন দেয়া হয়।শহরে একটি বিজিবির গাড়ী ভাংচুর করা হয়েছে। সোনাগাজীর চর মজলিশপুর কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ফুলগাজীর ভাইভাই ফিলিং ষ্টেশনের সামনে সড়কে আগুন দেয়া হয়।সদর উপজেলার লেমুয়া এবং শর্শদীতে খড়ের গাদায় আগুন দেয়া হয়।

সোনাগাজীর সেকেন্দার আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও ওলামা বাজার কেন্দ্রে ভোট র্গ্বহন সাময়িক বন্ধ রাখা হয়।

দুপুর বারটা পর্যন্ত সোনাগাজীর কোন কেন্দ্রে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা একশতর ঘর পেরোয়নি।সমর্গ্ব জেলায় যেন কঠোর কার্পিও চলছিল। সেনাবাহিনী, বিজিবি কোন টহল গাড়ী চোখে পড়েনি।

জাল ভোট দেয়ায় মোট ১৫ জনকে আটক করেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা : ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকায় কাজের কোন চাপ নাই নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং প্রার্থীদের এজেন্টদের। 

সকাল থেকেই শৈত্য প্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে প্রথম ৩ ঘন্টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই শূন্য। বেলা বাড়ার সাথে ভোটার আসতে শুরু করলেও তা ছিল খুবই নগন্য। এই কারণে আরামে আয়েশে মজা করেই কেটেছে সময়। তবে শীতের প্রকোপে কষ্ট হচ্ছিল। তাই ঠান্ডা নিবারনে একটু গরমের ছোঁয়া পেতে চায়ের শরণাপন্ন হতে হয়। সেজন্যই আনসার সদস্যরা নিজেরাই চা তৈরীর উদ্যোগ নেয়।

খুলনা ব্যুরো : খুলনা জেলায় একটি ভোটকেন্দ্র থেকে জিল্লুর বাগাতি নামের এক ভুয়া পোলিং এজেন্টকে আটক করা হয়েছে। রোববার বেলা ১১টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা বিরাজমানী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক জিল্লুর ডুমুরিয়া উপজেলার পূর্ব-শোভনা গ্রামের নওশের বাগাতির ছোলে। ওই কেন্দ্রে তিনি নৌকা প্রতীকের পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন।

ওই এলাকায় দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল হোসেন বলেন, কেন্দ্রটিতে গিয়ে এজেন্টদের দেখতে চাইলে তিনি নিজেকে এজেন্ট বলে পরিচয় দেন। তবে কোনো নিয়োগপত্র দেখাতে পারেননি। তাই তাকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপরদিকে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া উপজেলার চুগনগর ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে একটি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে।  এ সময় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে খুলনা-২ (খুলনা সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনের খুলনা সিটি কলেজ একাডেমির ভবন-২ এর ৩য় তলা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শাহজাহান বলেন, প্রথম ৩ ঘণ্টায় ৯.১৬ শতাংশ ভোট কাস্ট পড়েছে। এখানে মোট ভোটার ১৪১৯ জন। ভোট দিয়েছেন ১৩০ জন।

পাথরঘাটা (বরগুনা) সংবাদদাতা: বরগুনার পাথরঘাটায় অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলার বেশ কিছু ভোট কেন্দ্রে পরিদর্শন করে তেমন ভোটার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় নাই। 

সকাল ৮ টায় ভোট গ্রহন শুরু হয়ে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত প্রায় চার ঘন্টায় ভোটার উপস্থিতি ছিল অপ্রতুল। উপজেলার সকল ভোট কেন্দ্রের মাঠে লাইনের জায়গা ছিল ফাঁকা। 

তাছাড়া নৌকার প্রার্থী সুলতানা নাদিরা ছাড়া অন্য কোন প্রার্থী বা তাদের এজেন্টের দেখা মেলেনি। শুধু নৌকার এজেন্ট দেখা গেছে ভোট কেন্দ্রগুলোতে।

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) সংবাদদাতা : কুমিল্লা-১১ চৌদ্দগ্রাম আসনে ভোট বর্জন ও মহাসড়ক অবরোধ এবং বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। ভোট বর্জনের ঘোষণা করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, আ’লীগ নেতা মিজানুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী খোরশেদ আলম ও গণফোরামের প্রার্থী আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর। নির্বাচন বাতিলের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমানের অনুসারিরা দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুই ব্যক্তিকে আটক করে। এদিকে অনিয়মের কারণে ৭টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। বিকেলে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ৮টায় চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের ১২৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বেলা ১০টা থেকে উপজেরার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রগুলোতে জাল ভোট প্রদান ও বিভিন্ন প্রার্থীর এজেন্টদেরকে বের করে দিয়ে কেন্দ্রগুলো নৌকার সমর্থকরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায়। নৌকা ও ফুলকপি প্রতীকের সমর্থকদের সংঘর্ষে আমিনুল হক, জামাল হোসেন, বাবলু মোল্লা, মামুন ও কাজী ডালিমসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ভোট কারচুপির অভিযোগে বেলা সাড়ে ১১টায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আ’লীগ নেতা মিজানুর রহমান(ফুলকপি), ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী খোরশেদ আলম(মিনার) ও গণফোরামের প্রার্থী আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর(উদীয়মান সূর্য)। স্বতন্ত্র প্রার্থী আ’লীগ নেতা মিজানুর রহমান বলেন, সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র থেকে নৌকার প্রার্থীর লোকজন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে আমার ফুলকপি প্রতীকের এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে নৌকাতে সিল মারে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একাধিকবার অভিযোগ করেও তার কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। প্রশাসন নৌকার পক্ষপাতিত্ব আচরণ করছে। 

সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান রোববার বিকেলে বলেন, ‘জাল ভোট দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন ইউনিয়নের ৭টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচনের অনিয়ম তুলে তিন প্রার্থী বর্জন করেছে। এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুসারিরা মহাসড়ক অবরোধ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরকে সরিয়ে দেয়।

মেহেরপুর জেলা সংবাদদাতা 

দ্বাদশ সংসদীয় আসনে মেহেরপুর ৭৩-১ মুজিবনগর- মেহেরপুর সদর ও ৭৩- ২ গাংনী  নির্বাচনী  দুইটি সংসদীয় আসনে। জেল জরিমানা হট্টগোলের মধ্যে দিয়ে নির্বাচন শুরু হয়।  এখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক মার্কা  প্রার্থী  নিয়ে নির্বাচন করছেন সাবেক এমপি  প্রফেসর আব্দুল মান্নান ও  আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী  প্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন (এমপি ) নৌকা প্রতীক নিয়ে।  তবে ভোটাররা অভিযোগ করেন  ক্ষমতাসীন লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে হুমকি ধামকী এবং  বাধা সৃষ্টি করছে বলে ভোটাররা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এদিকে গাংনী উপজেলা স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক  সংসদ সদস্য  মকবুল হোসেন ট্রাক মার্কা ও  আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডাক্তার সাগর হোসেন নৌকা প্রতীকে  হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে বলে জানান।  ভোটাররা। ভোটার উপস্থিতি যথেষ্ট কম। প্রশাসনিক ভাবে কঠোর প্রশাসনিক   নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ভোট গ্রহণ চলছে।

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা :  কুষ্টিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুষ্টিয়া ৪টি আসনে সকাল থেকে ভোট শুরু হলে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠ ছিল শূন্য। ক্ষমতাসীনদলের নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ আনেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ তাদের নেতা কর্মীদের ভোট দানে বাধা ও জোরপূর্বক ভোট মেরে নেওয়ার অভিযোগ আনেন তারা।

অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য দলের নেতা কমীরা অনেকেই ঘরছাড়া, অনেকেই জেলে। এ জন্য তারা ভোট বর্জন করায় কুষ্টিয়ার ৪টি আসনের প্রায়ই কেন্দ্রগুলোতেই ভোটের উপস্থিতি ছিলোনা। 

কুষ্টিয়া সদর-৩ আসনে ভোট মেরে নেওয়ার অভিযোগই বেশি করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতাকর্মীরা।

যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তাদের নেতা কর্মীদের বিভিন্নভাবে হেনস্থা করার অভিযোগ করেছেন প্রার্থীরা।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল প্রতীক) কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলীর পুত্র আলীর ছেলে পারভেজ আনোয়ার  তণু। তিনি দুপুরে নিজ বাসভবনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে এক জরুরি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ (নৌকা প্রতীক) পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নড়াইল সংবাদদাতা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন সাবেক এমপি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত হাতুড়ী প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান। রোববার বেলা দেড়টায় নড়াইল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচনে ভোট বর্জনসহ ফলাফল প্রত্যাখানের ঘোষণা দেন তিনি।

এ নির্বাচন প্রহসনের নির্বাচন।ক্ষমতাসীন দল ভোট কারচুপি করে নির্বাচনে জয়লাভ করতে সকল ধরনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।ভোট গ্রহণে এ ধরনের অনিয়ম প্রমাণ করে, ক্ষমতাসীন সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।আমি প্রহসনের এ নির্বাচন বর্জন ও ভোটের ফলাফল প্রত্যাখান করলাম।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে ২৯৮ নং পার্বত্য খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনে উৎসবের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। 

সকাল ৮টা থেকে ১৯৬টি ভোট কেন্দ্রে শুরু হওয়া ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে শেষ পর্যন্ত জেলার কোথাও কোন ধরণের বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।

যশোর সংবাদদাতা : ভোটারের নজিরবিহীন অনুপস্থিতি, কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে নৌকার পক্ষে ভোট নেয়া, নৌকা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে দুই প্রার্থীর ভোট বর্জন ও ব্যপক সহিংসতার মধ্যে দিয়ে যশোরের ৬টি আসনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোট শুরুর আগে বোমা হামলায় একজন আনসার সদস্যসহ নৌকার সমর্থকদের হাতে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর অন্তত ১৫ জন কর্মী সমর্থক আহত হয়েছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী বিকাল ৫ টায় ভোট প্রাপ্তির সর্বো”চ হার ছিলো ৩৭ শতাংশ। তবে বেলা ১ টা পর্যন্ত বিভিন্ন আসন ঘুরে অধিকাংশ কেন্দ্রই ফাঁকা দেখা গেছে। ১৫ শতাংশের বেশি ভোট কোথাও লক্ষ্য করা যায়নি। 

সহিংসতায় শংকরপুর কেন্দ্রে আনসার সদস্য মারুফ হোসেন, শার্শা, মনিরামপুর ও যশোর সদরে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বেশিরভাগই আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমর্থক।

দুপুরে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার,  অনিয়ম ও ৫৫টি কেন্দ্র দখলের অভিযোগে এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁডানোর ঘোষণা দেন যশোর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন। বেলা ১১টায নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে এ সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি।

সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার  ৯ এজেন্টকে মারপিট করা হয়েছে । অধিকাংশ কেন্দ্রের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটার ও কর্মীদের হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে । ৫৫ টি কেন্দ্র দখল করে নেয়া হয়েছে। ১৯ ডিসেম্বর আমাকে মারপিট করা হয়। এখন পর্যন্ত ১৫০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এখন যে পরস্থিতি তাতে যে কোন মায়ের বুক খালি হতে পারে। আমি এমন ভোট চাই না। 

তিনি আরো বলেন, ওরা প্রমাণিত করছে এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। হয়ত ১০ শতাংশ ভোট পড়বে। কিন্তু তারা ৫০ শতাংশ ভোট দেখানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। মে কারণে এমন প্রহসনের নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়াচ্ছি।

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা: মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী ও সাবেক দুইবারের সংসদ সদস্য এম এম শাহীন ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ছিলেন। এই প্রার্থী বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে এ ঘোষণা দেন তিনি। ভোটের দিন বিকেল সাড়ে ৩টায় কুলাউড়া পৌর শহরের মাগুরা এলাকার তার নিজ বাসায় সাংবাদিক সম্মেলন করে সাংবাদিকদের সামনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন শাহীন।

জানা যায়, এর আধঘণ্টা আগে রাবিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে এম এম শাহীন ও আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এতে ওই কেন্দ্রে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

সকালে রাবিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সস্ত্রীক ভোট দেন শাহীন।

পলাশ (নরসিংদী)  সংবাদদাতা : মোবারক হোসেন: নরসিংদীর পলাশে জিএম কাদের মনোনীত লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছিলেন রফিকুল ইসলাম সেলিম। ভোট চলাকালীন তিনি তার এজেন্ট দের ভোট কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে দুপুরের পর তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।  ফলে ফাকা মাঠে নৌকা মার্কার প্রার্থী ডাঃ আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ এর বিজয়ে আর কোন বাধা থাকলনা। তাই সারা দেশের ন্যায় পলাশের জনগনও প্রত্যখ্য করল একটি প্রহসনের নির্বাচন।

কুমিল্লা অফিস : নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি হচ্ছে অভিযোগ তুলে কুমিল্লায় চার প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। সব কেন্দ্রেই জাল ভোট হচ্ছে দাবি করে আরেক প্রার্থী পুনরায় ভোট গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দুপুর ১টার পর চার জন ভোট বর্জন করেন।

কুমিল্লা-১ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের ব্যারিস্টার নাঈম হাসান ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের আমির হোসেন সাংবাদিক সম্মেলন করে ভোট বর্জন করেন। নির্বাচনে তারা ব্যাপক কারচুপি, অনিয়ম ও প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ করেন।

কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মুনতাকিম আশরাফ টিটু। তিনি চান্দিনার ৮৯টি কেন্দ্রেই জাল ভোটের অভিযোগ তুলেছেন। পরে তিনি পুনরায় ভোট গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

কুমিল্লা-১১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমানও ভোট বর্জন করেছেন। তিনিও সাংবাদিক সম্মেলনে ভোটের পরিবেশ নেই বলে উল্লেখ করেন। মিজানুর রহমানের ভোট বর্জনের ঘটনার পর চৌদ্দগ্রামে  দু গ্রুপে মধ্য বন্দুকযুদ্ধ হয় এসময় মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আব্দুর রব বলেন, ‘ওই ব্যালট বই এবং ব্যালট বাক্সটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, ‘সিলমারা ব্যালটগুলো বাতিল করা হয়েছে। আমরা সতর্ক আছি।’

কুমিল্লা-৭ আসনের চান্দিনার দোল্লাই নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৩টি ব্যালট বাতিল করা হয়েছে। আগে থেকেই নৌকায় সিল মেরে রাখার অভিযোগে এসব ব্যালট বাতিল করা হয়।

কুমিল্লা-৭ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে লড়ছেন মুনতাকিম আশরাফ টিটু।

 কুমিল্লা -১০ আসনে অর্থ মন্ত্রী আহম মোস্তফা কামালের ভোটার স্লিপ এর সাথে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র নগদ টাকা দিয়ে ভোট কিনতে দেখা যায়।

কুমিল্লা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোট কেন্দ্র যায়নি সাধারণ ভোটারগণ।জেলার ১১টি সংসদীয় আসনে ১৪৩৫টি

কেন্দ্র প্রায় সকল কেন্দ্র ভোটার শুন্য ছিল।প্রায় প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে আশে পাশে সরকার দলীয় ২শ ক্যাডার বাহিনী  ঘিরে রেখেছে।

মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা : মানিকগঞ্জের ৩ টি সংসদীয় আসনের বেশিরভাগ ভোটারের অনুপস্থিতিতেই রোববার  (৭ জানুয়ারী) সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সারাদিন বিভিন্ন কেন্দ্রে সরেজমিন ভোটার উপস্থিতি লক্ষণীয়ভাবে কম দেখা গেছে। জেলায় ২৬৩টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ সনাক্ত করা হলেও  কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় সর্বমোট ভোটারের সংখ্যা ১২ লাখ ৬২ হাজার ৪৪৫ জন, মোট  ৫১৬টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

গাইবান্ধা সংবাদদাতা : গাইবান্ধার ৫টি সংসদীয় আসনে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভোটারের উপস্থিতি খুবই কম। মাঝে মাঝে প্রার্থীর সমর্থকরা ২/১টি করে ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে উৎসাহিত করেন। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখা গেছে, শুরুতে ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে উপস্থিতি অল্প কিছু বাড়তে থাকে। ভোটদানের ক্ষেত্রে মহিলা ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা বেশী ছিল। তবে জেলার সর্বত্র কোন ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের কোন লাইন দেখা যায়নি এবং কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া এম.এ.ইউ একাডেমি হাইস্কুল কেন্দ্রে ৩ হাজার ৭২২ জনের মধ্যে সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৮৮ জন, সৈয়দপুর দ্বিমুখী উ”চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে একই সময়ে ২ হাজার ৯১ জন মধ্যে ২৪৪ জন এবং ওই সময়ে রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ২ হাজার ১৯৩ জন ভোটারের মধ্যে ৪৫২ জন ভোট প্রদান করেছেন।

স্টাফ রিপোর্টার,গাজীপুর : গাজীপুরের অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রই ছিলো দিনভর ফাঁকা। ॥

কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের কোন ভীড় বা লাইন চোখে পড়েনি। কিছুক্ষণ পর পর কেন্দ্রের নীরবতা ভঙ্গ করে এক-দুই জন ভোটার এসে ভোট দিতে দেখা যায়। গাজীপুর-২ আসনের মহানগরীর রমনী কুমার পৈত উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা পৌনে ২টায় গিয়ে দেখা যায়, ২টি বুথের ২ জন পোলিং অফিসার বেঞ্জের ওপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছেন। খালি মাঠে আনসার সদস্যরাও বসে অলস সময় পার করছেন। সকাল থেকেই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম বলে আনসার সদস্যরা জানান।

এ কেন্দ্রের মোট ১০টি বুথের একটিতেও আওয়ামী লীগের নৌকা ও ট্রাক (স্বতন্ত্র) প্রতীকের এজেন্ট ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া যায়নি। বেলা ২টায় ১ নং বুথে গিয়ে সরকারি দলের উভয় প্রার্থীর দুই জন এজেন্টকে স্কুলের বারান্দায় ঘুরতে দেখা গেছে। বেলা ২টা পর্যন্ত শতাধিক ভোট কাস্টিং হয়েছে দাবী করে ট্রাক প্রতীকের এজেন্ট ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের এখানে কোন সমস্যা হয়নি। অপরদিকে বেলা ১২টা পর্যন্ত অধিকাংশ কেন্দ্রে ৫ থেকে ১০ ভাগ ভোট কাস্টিং হতে দেখা গেলেও ফলাফল ঘোষণার সময় এসব কেন্দ্রে ২৫ থেকে ৫০ ভাগেরও বেশি ভোট কাস্টিং দেখানো হয়েছে।

গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর) আসনে জাল ভোট প্রয়োগের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখা গেছে। জেলার কোন আসনেই বিএনপি-জামায়াতের কোন নেতাকর্মীকে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেখা যায়নি। অপরদিবে নৌকার পরাজয়ের আশঙ্কায় অধিকাংশ এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রাতে এরিপোর্ট পাঠানোর সময় গাজীপুরের মোট ৫টি আসনের মধ্যে ৪টিতে নৌকা এগিয়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে। শুধুমাত্র গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রপ্রার্থী এগিয়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে।

https://www.dailysangram.info/post/545453