৬ জানুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ১১:৫১

বিদ্যুৎখাতে অস্থিরতা ও অনিশ্চিত গন্তব্য

-ইবনে নূরুল হুদা

দেশে কোন কিছুতেই আর স্বাভাবিকতা নেই। অর্থনৈতিক খাত তো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে অনেক আগেই। দেশে তীব্র ডলার সঙ্কট চলছে। প্রয়োজনীয় আমদানি করার জন্য আমদানিকারকরা এলসি খুলতে পারছেন না। ফলে দেশে আমদানি নির্ভর পণ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দামও বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এদিকে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম কোনভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়লেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের মূল্য। এখানে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজার চলছে একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। ফলে ইতোমধ্যেই জনদুর্ভোগ শুরু হতে শুরু করেছে। যা দেশের আত্মসচেতন মানুষকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। 

দেশের বিদ্যুৎখাতে অস্থিরতাও রীতিমত প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই খাতটি রাষ্ট্রের একটি অতি উল্লেখযোগ্য খাত। এই খাতের ওপরই দেশের উন্নয়ন কর্মকা- অনেকাংশে নির্ভরশীল। নানা কথা বলে এবং বিভিন্ন অজুহাতে বিদ্যুতের দাম বারবার অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হলেও সেবার মান বাড়েনি বরং আগের তুলনায় বেশ অবনতিই হয়েছে। যা শুধু অনাকাক্সিক্ষতই নয়; বরং অনভিপ্রেতও।

দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে প্রভূত রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করা হলেও এখাতে সাফল্যের গ্রাফটা উল্লেখ করার মত নয়। কারণ, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের নামে যা হয়েছে তা আমাদের জন্য মোটেই সুখকর হয়নি। কারণ, এতে অনেক রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হলেও ফলাফল রীতিমত অশ^ডিম্বই বলতে হবে। মূলত, লাগামহীন লুটপাটের জন্যই তথাকথিত এই প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছিল। খুবই সঙ্গত কারণেই এই খাতের স্থবিরতা কোনভাবেই কাটানো সম্ভব হয়নি বরং রীতিমত অস্থিরতাই দেখা দিয়েছে উৎপাদন খাতে। ডলার সঙ্কটের কারণে বেসরকারি উৎপাদনকারীর বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে অর্থ সঙ্কটে পড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। তেলভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনার খরচ বাড়ার পর কয়েক মাসের বিল বকেয়া পড়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র বিদ্যুৎ ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানটির। বেসরকারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিল জমা দেয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিল পরিশোধ করতে হয় বিপিডিকে। অথচ ৮ মাসের প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বকেয়া পাওনা রয়ে গেছে। বকেয়া বিল না পেলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাধারণত, দেশের মোট বিদ্যুতের ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসে। ৬০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। বেসরকারি উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য প্রতি মাসে বিপিডিবির প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। অথচ বেসরকারি উৎপাদনকারীরা কয়েক মাসের বিল পায়নি। যা দেশের বিদ্যুৎ বিপণন ব্যবস্থাকে অনেকটাই বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে এপ্রিল পর্যন্ত থাকবে সেচ মৌসুম। গত বছরের তুলনায় এবার বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে ১ হাজার ৮শ মেগাওয়াট। বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সব ধরনের জ্বালানি মজুতের কথা বলেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। চাহিদা অনুসারে ফার্নেস ও ডিজেল সরবরাহ করা যাবে বলে জানিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। সেচে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সম্প্রতি বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যালোচনা সভা হয়েছে। সভায় বলা হয়েছে, গত সেচ মৌসুমে গ্রীষ্মের বাড়তি চাহিদা মিলে এপ্রিলে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এবার সব মিলে এটি ১৭ হাজার ৮শ মেগাওয়াট হতে পারে। তাই গ্যাস, ফার্নেস তেল ও ডিজেলের সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন হবে। দুই মাস বিদ্যুৎ উৎপাদন করার মতো জ্বালানি তেলের মজুত রাখতে হবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে দিনে গ্যাসের চাহিদা ১৫৪ থেকে ১৭৬ কোটি ঘনফুট হতে পারে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফার্নেস তেল লাগবে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫০ টন, ডিজেল লাগবে ১৫ হাজার ৬০০ টন বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) বক্তব্য হচ্ছে, বিদ্যুৎ খাতে বর্তমানে সরকারের বড় অংকের বিল দেনা হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুসারে সরকার বিদ্যুৎ কিনলেও এর বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারকে কিছু অর্থ পরিশোধ করে ঋণ পুনঃতফসিল করার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সমস্যা আছে, সরকার এটি কীভাবে সমাধান করবে সেটি এখনো বোঝা যাচ্ছে না। জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপিডিবির কাছে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর বিপুল অংকের বিল বকেয়া পড়েছে। এতে অর্থসঙ্কটে পড়ে পরিচালন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা দরকার। বিল বকেয়া রাখতে থাকলে একপর্যায়ে সরবরাহকারীরা সমস্যা তৈরি করবেই। এভাবে চলতে থাকলে একসময় কেউ কেউ হয়তো বাংলাদেশের সঙ্গে তেল সরবরাহের ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। এতে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা।

বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অর্থও পরিশোধ করতে পারছে না বিপিডিবি। এতে করে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও অর্থ সঙ্কটে ভুগছে। ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য তহবিলের অর্থ ও ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে এসব কোম্পানিকে। দেশের অন্যতম বৃহৎ পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিল বাবদ চলতি বছরের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বকেয়া জমেছে বিপিডিবির।

বিপিডিবি সূত্র বলছে, বিপিডিবির কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিভিন্ন বিল বাবদ বড় অংকের অর্থ পাওনা রয়েছে। এ অবস্থায় সরকার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর আর্থিক অবস্থা কেমন সেটি মূল্যায়ন করতে চায়। কোম্পানিগুলো যাতে সামনে তেল কিনতে গিয়ে অর্থ সঙ্কটে না পড়ে, সেজন্যই তাদের কাছে ঋণের তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে কোম্পানিগুলোর বকেয়া অর্থ পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হবে। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ বিপিডিবির কাছে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর আট মাসের বকেয়া পাওনা রয়েছে। বকেয়া এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত এপ্রিল থেকে এ বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। 

প্রতিমাসে বিপিডিবিতে যে পরিমাণ বিল জমা পড়ছে তার ২৫-৩০ শতাংশ দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আইপিপি উদ্যোক্তারা। বিল না পাওয়ায় এরই মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। শীর্ষস্থানীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোও এখন কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। আবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ করা ব্যাংকগুলোর ঋণের কিস্তি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের অনেক বিদ্যুৎ কোম্পানিই খেলাপির ঝুঁকিতে রয়েছে। বিল বকেয়া থাকার কারণে তারা ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় ব্যাংকের কর্মকর্তারা কোম্পানিতে এসে টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। অন্যদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে তেল আমদানির জন্য নতুন করে এলসি খুলতে হয়। কিন্তু ব্যাংকের আগের পাওনা পরিশোধ না করার কারণে ব্যাংকগুলো নতুন করে এলসি খুলতে অপারগতা জানাচ্ছে। এ অবস্থায় বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে দেয়া ঋণ নিয়ে ব্যাংকারদের উদ্বেগও বাড়ছে। বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তা ও কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম জানান, বিপিডিবির কাছ থেকে আমরা ঋণের তথ্য প্রদান সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি।

ডলার সঙ্কট ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বিদেশী ঋণের কিস্তি পরিশোধে সরকারের ব্যয় এমনিতেই বেড়েছে। তার ওপর সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সে অর্থ সরকারকে পরিশোধ করতে হবে এবং এতে সরকারের ওপর ঋণ পরিশোধের চাপ আরো বাড়ার বলে আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ বিশ্লেষকরা। ডলার সঙ্কটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানি গ্যাস, কয়লা ও ফার্নেস অয়েল চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা সম্ভব হবে না। ফলে বহু সচল বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল থাকতেও বিল দিতে হচ্ছে। উৎপাদন সক্ষমতা উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। রমজানেও বিদ্যুতের দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। জ্বালানি সঙ্কটে এবার শীতেও কম-বেশি লোডশেডিং করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। মার্চ থেকে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বিদায়ি বছরের প্রথম মাসেই দুই দফায় ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি দাম দিয়েও বিদ্যুতের ভোগান্তি থেকে মুক্তির আশ্বাস মিলছে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভর্তুকি কমিয়ে আনতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে সরকার। এসব ঋণের বিপরীতে সরকারের গ্যারান্টি দেয়া রয়েছে, যার পরিমাণ এরই মধ্যে অর্ধ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, কোনো কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তা সরকারকে বিপাকে ফেলে দিতে পারে।

জানা গেছে, বিপিডিবির কাছে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর বিপুল অংকের বিল বকেয়া পড়েছে। এতে অর্থসঙ্কটে পড়ে পরিচালন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না এসব কোম্পানি। আগের বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় ব্যাংকে জ্বালানি আমদানির জন্য নতুন এলসি খুলতে গিয়েও কোম্পানিগুলোকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এদিকে সারাদেশের শতাধিক জ্বালানি তেলভিত্তিক (এইচএফও) সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে চলতি মূলধন ও প্রকল্প অর্থায়ন সংক্রান্ত ঋণের তথ্য জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এ তথ্য জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ঋণের তথ্য পাওয়ার পর সে অনুযায়ী তাদের বকেয়া অর্থ পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি বিপিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (প্রাইভেট জেনারেশন) স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে। চিঠিতে বলা হয়, দেশের ১০১টি বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছে চলতি মূলধন ও প্রকল্প অর্থায়ন বাবদ মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্মারকের বরাত দিয়ে নির্ধারিত ফরম্যাটে ঋণের তথ্য দিতে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে অনুরোধ করা হয়। এক্ষেত্রে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বিপিডিবির কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বকেয়া অর্থের বিপরীতে কী পরিমাণ চলতি মূলধন ঋণ নেয়া হয়েছে, সে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত নেয়া প্রকল্প অর্থায়ন ঋণের তথ্য দিতে বলা হয়েছে চিঠিতে। পাশাপাশি চলতি মূলধন ও প্রকল্প অর্থায়ন বাবদ মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের তথ্যও চেয়েছে বিপিডিবি। সামিট পাওয়ার, ইউনাইটেড পাওয়ার, কনফিডেন্স পাওয়ার, ডরিন পাওয়ার, বারাকা পাওয়ার, শাহজিবাজার পাওয়ার, ওরিয়ন পাওয়ার, মিডল্যান্ড পাওয়ার, খুলনা পাওয়ার ও এসএস পাওয়ারের মতো বেসরকারি খাতের আরো বেশকিছু বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছে ঋণের তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের মতো সরকারি কোম্পানিও চিঠি পেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল) এবং আদানি পাওয়ার লিমিটেডের মতো দেশী-বিদেশী মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানির ঋণের তথ্যও জানতে চাওয়া হয়েছে।

সার্বিক দিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে, দেশের বিদ্যুৎ খাতে অস্থিরতা ক্রমেই তীব্র হতে তীব্রতর হচ্ছে। আমাদের দেশের বিদ্যুৎ খাত অনেকাংশেই বেসরকারি উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু অর্থনৈতিক অনিয়ম ও অস্থিরতার কারণেই সরকার বেসরকারি উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না। এসব উৎপাদন কেন্দ্রগুলো তাদের উৎপাদন ও প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিয়ে জটিলতায় পড়েছে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে বেসরকারি উৎপাদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা মেটাতে পারছে না পিডিপি। দেশের দেশের জ¦ালানি পরিস্থিতি নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটকেই প্রধানত দায়ী করা হচ্ছে। নিকট অতীতে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট নিয়ে দেশের মানুষকে আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখানো হলেও বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ অন্তসারশূন্য। এতে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হলেও কাক্সিক্ষত ফলাফল লাভ করা যায়নি। এমতাবস্থায় দেশের বিদ্যুৎ খাতসহ জ¦ালানি খাতকে বাঁচাতে হলে এবং দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য দেশের চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট সমাধানের জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জ¦ালানির অভাবে বা বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে কোন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র যাতে বন্ধ হয়ে না যায় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া দরকার। একই সাথে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটেরও একটি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সমাধান জরুরি। অন্যথায় দেশ ও জাতি হিসাবে আমাদের গন্তব্যই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

https://www.dailysangram.info/post/545248