৪ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:০৬

সরকারি প্রতিষ্ঠান নিচ্ছে না ডিএসসিসির জন্মসনদ

 

তিন মাস বন্ধ রাখার পর নিজস্ব সার্ভার তৈরি করে গত ৪ অক্টোবর নগরবাসীকে জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন সনদ সেবাদান কার্যক্রম শুরু করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ওই সার্ভার তৈরির উদ্দেশ্য ছিল, নগরবাসীর ভোগান্তি লাঘব। এর উল্টো ফল হয়েছে। নতুন সার্ভারের জন্মনিবন্ধন সনদ কোথাও কাজে আসছে না। কারণ, সরকারের কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভারটি যুক্ত করা হয়নি।

কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানই ডিএসসিসির ইস্যু করা সনদ গ্রহণ করছে না। এ কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন যারা পাসপোর্ট করাতে যাচ্ছেন। কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা মো. আসাদুজ্জামান তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সমকালকে বলেন, মেয়ের চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন। এ জন্য তড়িঘড়ি পাসপোর্ট করাতে সন্তানের জন্মনিবন্ধন করেন। পাসপোর্টের ফি দেওয়াসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার পর ছবি তোলার তারিখ পান। ওই তারিখে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গেলে বলা হয়, ডিএসসিসির জন্মসনদ দিয়ে পাসপোর্ট হবে না। 

এ ব্যাপারে তাঁকে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন পাসপোর্ট অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এর পর তিনি ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবিরের সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানান। শামসুল কবির তাঁকে আশ্বাস দেন, কয়েক দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এরই মধ্যে দিন পনেরো কেটে গেছে। আসাদুজ্জামান বারবার পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। বারবারই তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

আসাদুজ্জামানের মতো এ রকম বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীকে মঙ্গলবার পাসপোর্ট অফিসে পাওয়া গেল। তারা জানান, পাসপোর্টের ফি তারা জমা দিয়েছেন। সেই টাকাও মার যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন। ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের (আগারগাঁও) পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন সমকালকে বলেন, ‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের মূল সার্ভারটি আপডেট করার সময় দু-তিন দিন কাজ করছিল না। তখন দ্রুত সেবা দেওয়ার জন্য ডিএসসিসি নিজেরা একটি সার্ভার করে। তারা বলেছিল, শুধু শিশুদের স্কুলে ভর্তি করার ক্ষেত্রে এই সার্ভারে করা জন্মনিবন্ধন দিয়ে কাজ করা যাবে। পাসপোর্ট অফিসে ওই সনদ দিয়ে কাজ হবে না। পরে তারা নেগোসিয়েশনের কথা বলেছে। কিন্তু নেগোসিয়েশন হয়তো করতে পারেনি। তবে যারা পাসপোর্ট করার জন্য টাকা জমা দিয়েছেন, ছয় মাস পর্যন্ত এর মেয়াদ থাকবে। ছয় মাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হলে আবেদনকারীরা জমা দেওয়া ফির বিপরীতে পাসপোর্ট পাবেন।’

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির সমকালকে বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভারটা যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এই কাজও একটু জটিল। এ জন্য ডিএসসিসির জন্মনিবন্ধন নিয়ে পাসপোর্ট করাতে যারা যাচ্ছেন, তারা সমস্যায় পড়ছেন। তবে তাদের টাকা মার যাবে না। ১৫ জানুয়ারির মধ্যেই সার্ভারটি পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে ইন্টিগ্রেট করার চেষ্টা করছি।’

অবশ্য রেজিস্ট্রার জেনারেলের পদ থেকে অতিসম্প্রতি অবসর-উত্তর ছুটিতে যাওয়া রাশেদুল হাসান বলেন, একটি সেন্ট্রাল সার্ভারের সঙ্গে আরেকটি সার্ভার যুক্ত করা কঠিন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু তাদের কাছে প্রশ্ন করলে তারা তাদের মতো করে জবাব দেয়। এতে যারা পাসপোর্ট করতে যাচ্ছে, তারা ফিরে যাচ্ছে। নামসর্বস্ব একটি জন্মনিবন্ধন সনদ তারা দিলেও তাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। বিষয়টি ডিএসসিসির মেয়রকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, সরকারের একটি সেন্ট্রাল সার্ভারের সঙ্গে আরেকটি সার্ভারকে যুক্ত করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। একটি এমওইউ স্বাক্ষর করতে হয়। তারা এসবের কিছুই করেনি।

জানা গেছে, রেজিস্ট্রার জেনারেলের সাইটে (https://bdris.gov.bd) সারাদেশের মানুষ জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসছে। এই সার্ভারের সঙ্গে দেশে-বিদেশে ১৬টি বড় প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত। কিন্তু ডিএসসিসি হঠাৎ করে নতুন সার্ভার (https://bdris.dscc.gov.bd) দিয়ে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে। এ পর্যন্ত তারা সার্ভারটি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পেরেছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারেনি। ফলে তাদের ইস্যু করা জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে যে ১৯ ধরনের সেবা পাওয়ার কথা, তার ১৮টিই নগরবাসী পাচ্ছেন না। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএসসিসি তাদের নিজস্ব সার্ভারে ৩২ হাজার ৫৭৫ জনের জন্মনিবন্ধন করিয়েছে। এর একটি বড় অংশই অভিভাবকরা করিয়েছেন সন্তানের পাসপোর্টের জন্য। এ ছাড়া ব্যাংক হিসাব খোলাসহ নানা কাজের জন্য যারা সনদ নিয়েছেন, তারা সেই সেবা পাননি। 

জানা যায়, জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুর বিনিময়ে কোনো রাজস্ব পেত না বলে গত জুলাই থেকে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ডিএসসিসি। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়। শেষে ডিএসসিসি সিদ্ধান্ত নেয়, তারা নিজস্ব সার্ভার বানিয়ে নগরবাসীর জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন সেবা দেবে। জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর স্কুলের ভর্তি মৌসুম শুরু হলে গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নিজস্ব সার্ভারের মাধ্যমে জন্মসনদ ইস্যু কার্যক্রম শুরু করে ডিএসসিসি। তখন সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই সার্ভার চালুর মাধ্যমে নাগরিক সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।

 

https://www.samakal.com/capital/article/216417